‘আর্লি টু বেড অ্যান্ড আর্লি টু রাইজ’ ছেলেবেলা থেকে আমরা সকলেই কমবেশি একথা শুনে বড় হয়েছি। ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠার উপকারিতা যে কতখানি তা আমরা এখনও বুঝে উঠতে পারিনি।নাইট শিফট, সারাদিনের বাকি থেকে যাওয়া কাজ, সব সারতে সারতে রাত পেরিয়ে প্রায় ভোর ৷ যখন ঘুম ভাঙছে, কোনোরকম কাজ না সেরেই অফিস বেরনো বা কাজ শুরু করার তোরজোড়। ফলত শরীরে বাসা বাঁধছে নানা রোগ। সুগার, ব্লাড প্রেশার সবকিছুই মাথাচাড়া দিচ্ছে ক্রমশ ৷
একথা সত্যি যে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠলে দিনটা অনেকাংশে গুছিয়ে নিজের মতো পরিকল্পনা মাফিক কাজ গুলো শেষ করা যায়। সেক্ষেত্রে নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া রাত জাগার দরকারও হয়না৷
দিনভর সমস্ত কাজ ঠিক ভাবে করতে হলে সবচেয়ে জরুরি হল আট ঘণ্টার নির্বিঘ্ন ঘুম। শারীরিক তারতম্যের জন্য সময়টাও কম বেশি সামান্য হেরফের করে।। মূলত তা নির্ধারিত হয় বয়সের ভিত্তিতেই। ঠিক যে ভাবে শরীরের খাদ্য ও জল প্রয়োজন হয়, তেমনই প্রয়োজন ঘুমও। কয়েক রাত না ঘুমোলেই যে ভীষণ রকম অসুস্থ হয়ে পড়বেন, এমনটা হয়ত নয়। কিন্তু মস্তিষ্ক সারাদিন একরকম সচল নাও থাকতে পারে। কাজের সময়ে অনেক কিছুই গুলিয়ে যায়।ঘুম সম্পূর্ণ না হলে মন দিয়ে কাজ করতে অসুবিধা হয়। বড় সমস্যা হয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও। চলাফেরা করার সময়ে হঠাৎ করেই পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, দিনের পর দিন ঘুমের অভাব ঘটতে থাকলে। এসবের বেশিরভাগের কারণ ‘Late to bed, early to rise’ অথবা ‘very much late to bed, late to rise’.
অথচ লেট নাইটের সঙ্গে একটু আপস করে চললে তার দ্বিগুণ লাভ আমরা সহজেই পেতে পারি, কিন্তু কীভাবে?
ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠার উপকারিতা গুলো কী কী?
ভোরবেলা বা তাড়াতাড়ি সকালে ওঠার অনেক উপকারিতা আছে যা স্বাস্থ্য ছাড়াও আরও অনেক কিছুতেই উপযোগী,যেমন –
• ভোরবেলাতেই আমাদের মস্তিষ্ক সবচেয়ে বেশি সচল থাকে। সকালের প্রথম ভাগে যে কোনও কাজে সহজেই মনঃসংযোগ করা যায়। শারীরিকভাবেও অনেকটাই সতেজ থাকা যায়। এমনিতেও তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠলে অন্যান্য কাজের জন্য হাতে সময় অনেকটা বেশি থাকে। এর ফলে পরিকল্পনা করে সময় নিয়ে ধীরে ধীরে কাজ শেষ করা যায়।
• আপনিও কি অনেকদিন যাবত ঘরের নানা কাজ সপ্তাহান্তের জন্য জমিয়ে রেখেছেন? কিন্তু একটা কথা একবারও ভেবে দেখেছেন যে, ছ’দিনের জমিয়ে রাখা কাজ এক সঙ্গে এক দিনে করা কি আদৌও সম্ভব? সম্ভব হলেও কতটা কঠিন এবং সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এর চাইতে দিনের কাজ দিনে করলে পুরো বিষয়টাই অনেক সহজে হয়। পরিবর্তে ছুটির দিন খানিকটা সময় পাওয়া যায় নিজের জন্য, পরিবারের জন্য৷ বা সে সময় অন্য কাজে লাগাতে পারেন। তাই ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে সময় নিয়ে পরিকল্পনা মাফিক নিজের কাজগুলি সেরে ফেলুন।
• রাতে ভাল করে ঘুমানোর পর ভোরে উঠলে আমাদের এনার্জি পুরো দিন রাতের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ থাকে। রাতের ঘুম সম্পূর্ণ না হলে দেরি করে ঘুম থেকে উঠলে লক্ষ করে দেখবেন ভিতরে ভিতরে দুর্বলতা অনুভূত হচ্ছে। এই দুর্বলতা কিন্তু কাজের গতি অনেকাংশে কমিয়ে দেয়।
• ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠলে পুরো দিনের কাজের একটি সময়সূচি তৈরি করে ফেলা সম্ভব হয়। এবং হাতে যথেষ্ট সময় নিয়ে সেগুলো সম্পন্ন করাও তুলনামূলক অনেক সহজ হয়৷ খুব স্বাভাবিক ভাবেই সকালে দেরিতে ঘুম থেকে উঠলে হাতে সময় কম থাকে বলে তাড়াহুড়োয় by IQOS888 গুছিয়ে সব কাজ গুলো করা হয়ে ওঠে না। ফলে পুরো দিনটিই কেমন এলোমেলো হয়ে যায়। কিন্তু ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে যেহেতু হাতে অনেকটা সময় পাওয়া যায় তখন ঠান্ডা মাথায় ভেবেচিন্তে পুরোদিনের সময়সূচি তৈরি করে সেই অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন করা যায়। দিনের প্রতিটি মুহূর্ত সঠিক ভাবে কাজে লাগানো সম্ভব হয়। ফলে কাজে সাফল্য আসার সম্ভাবনা অনেকাংশেই বেড়ে যায়।
• সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠলে স্বাভাবিক ভাবেই রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েন অধিকাংশ মানুষ এবং সারাদিন ব্যস্ততা, পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে যাওয়ার ফলে ঘুমটাও বেশ ভাল হয়। আর রাতে ভাল ঘুম হলে সারাদিন কাজে এনার্জিও পাওয়া যায় পুরোপুরি। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখতেও রাতের পরিমিত ঘুম ভীষণ রকম জরুরি।
• প্রতিদিন ভোরবেলার কমবেশি ত্রিশ মিনিটের হাঁটা বা শরীরচর্চা দিনভর এনার্জি যোগাতে ভীষণ রকম কার্যকর। শরীর ঠিক রাখার পাশাপাশি এই অভ্যেস মনকেও বেশ সতেজ রাখে ।
• রোজ রাতে দেরি করে ঘুমানো শরীরের সাথে সাথে ত্বকেরও ভীষণ ভাবে ক্ষতি করে। নষ্ট হয় স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য। রাতের আট ঘন্টার ঘুম আর সকালের শরীরচর্চা ত্বকের হারানো জেল্লা ফেরাতে কার্যকরী।
এছাড়াও রোজ রাতে দেরি করে ঘুমানো এবং ঘুম ঠিকমতো না হওয়ার ফলে চোখের নীচে কালো দাগ বা ডার্ক সার্কেল তৈরি করে। রাতের পর্যাপ্ত ঘুম ডার্ক সার্কেল হতে বাধা দেয়।
• দেরি করে ঘুম থেকে উঠলে স্বাভাবিক ভাবেই অন্যান্য কাজের মতো পিছিয়ে যায় ব্রেকফাস্ট বা প্রাতঃরাশের সময়ও৷ ফলত নষ্ট হয় জীবনযাত্রার স্বাভাবিক ভারসাম্য।
ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠার উপায়
অভ্যাস, এর থেকে বড় উপায় আর কিছু নেই৷ একজন মানুষ চাইলেই তার অভ্যাস পরিবর্তন করতে পারেন। তেমনি দেরিতে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাসও যে কেউ চাইলেই পরিবর্তন করতে পারেন। এর জন্য প্রাত্যহিক জীবনে কিছু পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। slot gacor ছোটবেলা থেকেই তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস যাদের, তাদের ক্ষেত্রে তেমন কোনো সমস্যা যদিও হয়না। একজন মানুষের স্বাভাবিকভাবে ৬-৮ ঘণ্টার টানা ঘুম একান্ত জরুরি । ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠার উপায় কিছু নিয়ম অবলম্বন করলেই অনেকখানি সহজ হয়ে যায়। যেমন-
• নিজেকে মোটিভেট করুন। হ্যাঁ ঘুমোতে যাওয়ার আগে প্রতিদিন রাতে নিজেকে মোটিভেট করুন এ বিষয়ে।
• যখন ঘুম থেকে উঠবেন বলে ঠিক করেছেন, তার থেকে অন্তত ৭ ঘন্টা আগে ঘুমোতে যান।
• ঘুমানোর এক ঘন্টা আগে মোবাইল, টিভি, ল্যাপটপ ইত্যাদি ব্যবহার করবেন না। এর আলো মস্তিষ্ককে উদ্দীপিত করে ৷ ফলে ঘুম আসতে দেরি হয়।
• রাতে হালকা খাবার খান। ঘুমানোর অন্তত এক ঘন্টা আগে রাতের খাবার খান এবং তারপর ছাদে বা সম্ভব হলে বাড়ির সামনের রাস্তায় একটু হেঁটে নিন। এতে খাবার সহজে হজম হওয়ার সাথে সাথে ঘুমও ভালো হয়। রাতের খাবার শেষ করতে সাড়ে ৯টার থেকে দেরি কোনোভাবেই করবেন না।
• ঘুম ভেঙে গেলে আর বিছানায় থাকবেন না৷ কিছুক্ষণ ব্যালকনিতে বা ছাদে বসুন, বাইরের হাওয়া খান৷ শরীর মন দুইই সতেজ থাকবে।
• যারা বাড়িতে থাকেন তারা দুপুরে ঘুমানোর অভ্যাস ত্যাগ করুন। এতে শরীরে নানা রোগ বাসা বাঁধে। পরদিন কী কী কাজ করা হবে, সেটা ঘুমাতে যাওয়ার অনেক আগেই ঠিক করে রাখুন৷
• প্রতিদিন ঘুমানোর সময় নির্দিষ্ট রাখুন। সকালে তাড়াতাড়ি ওঠার জন্য কোনও মতেই ঘুমের সময়ের সঙ্গে আপস করবেন না। রাত ২-৩ টেয় ঘুমিয়ে ৫ টায় উঠে পড়লে চলবে না। ৬-৮ ঘণ্টা অবশ্যই ঘুমাতে হবে। রোজ নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমোতে গেলে সমস্যা হবেনা৷