ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স (কলকাতা) প্রতিষ্ঠার পর কেটে গিয়েছে ১৪ বছর। ঠিক ১৪ বছর আগে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে শুরু হয়েছিল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স (কলকাতা)-এর পথ চলা। নিউরোসায়েন্স ফাউন্ডেশন বেঙ্গল (সোসাইটি), কলকাতা পৌরসংস্থা এবং পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের যৌথ উদ্যোগে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) মডেলে গড়ে উঠেছিল এই প্রতিষ্ঠান। সংস্থাটির গড়ে ওঠার কাহিনিও ভারী চমকপ্রদ। একাধিক নিউরোসার্জেন খেয়াল করেন, পশ্চিমবঙ্গের স্নায়ুসংক্রান্ত সমস্যায় ভোগা রোগীকে রাজ্য ছেড়ে অন্যত্র চিকিৎসা করাতে যেতে হচ্ছে। আর তার জন্য ভোগান্তিও হচ্ছে বিস্তর। খরচও হচ্ছে সাধ্যের বাইরে। একথা ভেবে সহৃদয় চিকিৎসকরা স্থির করেন তাঁরা নিজেরাই অর্থ ভাণ্ডার করবেন এবং কলকাতায় একটি আধুনিক মানের হাসপাতাল গড়ে তুলবেন। শুরু হল সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের কাছে অর্থ সংগ্রহ।
শেষ পর্যন্ত ২০০৯ সালে ৫০টি শয্যা নিয়ে রোগীর সেবার জন্য খুলল হাসপাতালের দরজা। এরপর যত দিন গিয়েছে, ততই পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই, তার সঙ্গে অন্যান্য রাজ্য এবং দেশের মানুষ লক্ষ করেছে মানুষের প্রতি প্রতিষ্ঠানের সেবামূলক দৃষ্টিভঙ্গি। বৃদ্ধি পেয়েছে রোগীর ভিড়। বর্তমানে হাসপাতালে শয্যার সংখ্যা এখন ২১০। রয়েছেন ৭০ জন কনসালটেন্ট। ৩৫০ জন সেবিকা। রয়েছেন ১ জন কনসালটেন্ট ইটেনসিভিস্ট, ১ জন কনসালটেন্ট নিউরোসার্জেন, ১জন কনসালটেন্ট অ্যানাস্থেটিস্ট। ২৪ ঘণ্টা সকলে রোগীর সেবায় নিয়োজিত।
ক্রমাগত দিনের পর দিন আইএনকে-এর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় পুনরায় ৬বি, এজেসি বোস রোডে একটি নতুন ক্লিনিক খোলা হয়েছে। এছাড়া বেক বাগানে ১০ ওয়েস্ট রেঞ্জ ঠিকানায় খোলা হচ্ছে রিসার্চ এবং ডায়াগনস্টিক ক্লিনিক। এছাড়া চলতি বছরে জুলাই মাস থেকে পার্ক স্ট্রিটে একটি ফিজিওথেরাপি এবং অকুপেশনাল থেরাপি কলেজ খোলার তোড়জোড় হচ্ছে।
রোগীস্বার্থে হাসপাতালের পরিষেবা সম্পর্কেও জানানো প্রয়োজন। সম্পূর্ণ শীততাপ নিয়ন্ত্রিত এই হাসপাতালে বেড চার্জ ৮০০ টাকা যা অন্যান্য হাসপাতাল থেকে তুলনামূলকভাবে অনেক কম। শুভাকাঙ্ক্ষী এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সহযোগিতা ছাড়া এমন পরিষেবা প্রদান এককথায় অসম্ভব।
আজকের দিনে আইএনকে চিকিৎসা পরিষেবা জগতে একটি নাম। উন্নত গবেষণার কারণে আইএনকে-এর সঙ্গে গবেষণামূলক কাজে আগ্রহী হয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, বেলুড় মঠের বিবেকানন্দ বিশ্ববিদ্যালয়, নিউক্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয়, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। এমনকী প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে আইএনকে-এর সঙ্গে যৌথভাবে আগামী দুই সপ্তাহ জুড়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং কানাডা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষামূলক এবং গবেষণামূলক কাজ করবে। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠা দিবসে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডাঃ আরপি সেনগুপ্ত, রাজ্যের চিফ সেক্রেটারি এইচ কে দ্বিবেদী, কলকাতায় আমেরিকার হাই কমিশনার নিক লো, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অর্জুন সেন, কানাডার ওয়েস্টার্ন অন্টারিওর শুল্যাক স্কুল অব মেডিসিন অ্যান্ড ডেন্টিস্ট্রি-এর পেডিয়াট্রিকস অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল নিউরোলজিক্যাল সায়েন্সেস-এর অধ্যাপক নারায়ণ প্রসাদ, অভিনেত্রী মুনমুন সেন প্রমুখ।