Search
Close this search box.

শিশুদের ৭ টি স্বাভাবিক লক্ষণ

এখানে শিশুদের কিছু স্বাভাবিক লক্ষণের ব্যাপারে বলবো যা তাদের কাছে পুরোপুরি স্বাভাবিক। শিশুদের মধ্যে অনিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাস থেকে শুরু করে কোষ্ঠকাঠিন্য, কিছু লক্ষণ আপাতভাবে উদ্বেগজনক মনে হলেও তা যে স্বাভাবিক সেটা অনেক নতুন মা বাবাই বুঝতে পারেন না। এক্ষেত্রে কয়েকটি ঘটনার কথা তুলে ধরা হল।

ছোটরা অনেক সময় শারীরিক জটিল অবস্থার সম্মুখীন হতে পারে, তবে কতগুলি সমস্যা আছে যেগুলি সত্যিই বিপজ্জনক নয়। তবে এই প্রসঙ্গে বলে রাখা দরকার যে লক্ষণগুলি একজন প্রাপ্তবয়স্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুতর সমস্যা হতে পারে, সেটাই একজন শিশুর জন্য স্বাভাবিক হতে পারে, কারণ তাদের শরীরে পরিবর্তনশীল হরমোনের জন্য মাঝে মধ্যেই নানা রকম পরিবর্তন ঘটে। আজ আমরা আলোচনা করে নেবো শিশুদের ক্ষেত্রে খুব স্বাভাবিক লক্ষণগুলি নিয়ে যেটা আপাতদৃষ্টিতে চিন্তার বিষয় মনে হতেই পারে। তবে, আপনি যদি মনে করেন আপনার শিশুর শরীর সত্যিই খারাপ, তাহলে অবশ্যই আপনার শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করবেন।

শিশুদের ৭ টি স্বাভাবিক লক্ষণ হল

১) ঘুমের সময় শরীর মোচড়ানো:- বহুক্ষেত্রেই নতুন বাবা-মা তাদের এক সপ্তাহের শিশুকে একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যান, কারণ তাকে দেখে মনে হয় শিশুটি ঘুমের ঘোরে মাঝে মধ্যেই কাঁপছে বা তার শরীরে কোথাও একটা মোচড় দিচ্ছে। এক্ষেত্রে শিশুটিকে ভালো করে পরীক্ষা করে বোঝা যায় যে সে আর কিছু না, স্লিপ মায়োক্লোনাস নামের একটি অতি সাধারণ সমস্যার শিকার, এতে তার শরীরের পেশীগুলি হঠাৎ করে অনিচ্ছাকৃত ভাবে নড়তে থাকে।

২) বন্ধ নাক এবং অস্বাভাবিক শ্বাস:- একটি চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, একজন মা তাঁর দু সপ্তাহের মেয়েটিকে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে আসেন। যেহেতু তাঁর নিজের ঠান্ডার সমস্যা ছিল, তাঁর মনে হয়েছিল যে তাঁর থেকেই হয়তো তাঁর মেয়ের সর্দির ধাত আসে। কারণ তাঁর শিশুর অন্য কোন সর্দি লক্ষণ না থাকলেও রাতে সে খুব জোরে জোরে শ্বাস নিতো। কিন্তু শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ তাঁকে বোঝান যে, এটি ইস্ট্রোজেন হরমোন দ্বারা সৃষ্ট হয়, যা অনুনাসিক প্যাসেজগুলিকে উদ্দীপিত করে। ইস্ট্রোজেন জরায়ুতে থাকে এবং অনেক সময় বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় শিশুর শরীরে চলে যায়।

৩) স্তনের ফুলে যাওয়া:- ছয় সপ্তাহের একটি ছেলের বাবা-মা তাকে স্তনের ফুলে যাওয়ার সমস্যার কারণে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। জানা যায়, একটি বড় লাল পিণ্ড তৈরী হয়েছিল তার ডান স্তনের নিচে। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ তাঁদের জানান এটি ইস্ট্রোজেনের কারণে হয়। জন্মের পর শিশুর শরীরে অতিরিক্ত ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় এবং দুধ উৎপাদনকারী হরমোন প্রোল্যাকটিন সাময়িকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় স্তনের বৃদ্ধি ঘটাতে পারে। এই স্তনের বৃদ্ধি সাধারণত শিশুর প্রথম মাসের মধ্যে চলে যায়।

৪) রক্তাক্ত থুতু তৈরী:- একজন চিন্তিত দম্পতি তাঁদের ৫ মাসের ছেলেকে বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যান কারণ বুকের দুধ খাওয়ানোর পরে শিশুর থুথুতে রক্তের দাগ ছিল। ওই দম্পতি আশঙ্কা করেছিল যে মায়ের বুকের দুধের কিছু খারাপ প্রতিক্রিয়ায় এমন হচ্ছে বা শিশুটির অভ্যন্তরীণ রক্তপাতের থেকেও হতে পারে। কিন্তু রক্তাক্ত থুতু বেরোনো একটি শিশুর ক্ষেত্রে স্বাভাবিক বিষয়। এটির কারণ হলো বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় মায়ের স্তনবৃন্তকে জোর করে টানার ফলে শিশুর খাদ্যনালীতে অনেক সময় টান লাগে ও অল্প একটু ছিঁড়ে যায়, এর ফলে সে রক্তাক্ত থুতু তৈরী করে। কিন্তু এতে চিন্তা করার কিছু নেই কারণ শিশুর খাদ্যনালী (অল্প একটু অংশ) ছিঁড়ে গেলেও তা সহজেই সেরে যায়।

৫) কমলা রঙের ত্বক:- অনেক সময় এক একজন ১০ মাসের শিশুর ত্বক কমলা হয়ে যায়। এর কারণ আর কিছু না বিটা-ক্যারোটিন সমৃদ্ধ প্রচুর শাকসবজি খাওয়ার কারণে শিশুটি “ক্যারোটেনমিয়া” নামক একটি খুব সাধারণ রোগের শিকার হয়। মিষ্টি আলু, গাজর, ব্রকোলি, পালং শাক এইসব সবজি বেশী করে খেলে এই সমস্যা দেখা দেয়। সুতরাং, যখন একটি শিশু তাদের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ক্যারোটিন খেয়ে থাকে, তখন অতিরিক্ত ঘামের সাথে নির্গত হয় এবং এটি ত্বকে দাগ তৈরী করে।

৬) হালকা অনিয়মিত শ্বাস:- একজন ঠাকুমা তাঁর ৩ মাসের নাতনিকে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যান। কারণ কী? শিশুটি প্রায় ২০ সেকেন্ড পর পর শ্বাস নিচ্ছিলো। কিন্তু এতে ভয়ের কিছু ছিল না, কারণ শিশুটি যখন ঘুমোতো তখন এই রকম অস্বাভাবিক শ্বাস নিতো, বাকি সময় ঠিক থাকতো। যদিও এই বিরতিহীন শ্বাস-প্রশ্বাস উদ্বেগজনক হয়ে উঠতে পারে, কারণ শিশুরা সাধারণত বড়দের তুলনায় দ্রুত শ্বাস নেয় কারণ তাদের ফুসফুস বড়দের ফুসফুসের আকারের তুলনায় ছোট হয়। যাইহোক, গবেষকরা সন্দেহ করেন যে অনিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাসের কারণ হল যে রাসায়নিক সেন্সরগুলি যেগুলি কার্বন ডাই অক্সাইড সনাক্ত করে তা নবজাতকের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে বিকশিত হয় না। এর মানে হল যে বাচ্চারা কখনও কখনও জানে না যে তাদের শ্বাস নেওয়া দরকার, এবং তারা বিরতি দেয় যতক্ষণ না কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা এই সেন্সরগুলিকে ট্রিগার করার জন্য যথেষ্ট উচ্চ হয়ে যায়।

৭) কোষ্ঠকাঠিন্য:- একজন মা তাঁর ২ মাসের মেয়েকে বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে এসেছিলেন কারণ বিগত পাঁচ দিন ধরে শিশুটি মলত্যাগ করেনি। জানি একজন মা বাবার খুব কষ্ট হয় তাঁদের শিশুকে মলত্যাগ না করতে দেখলে কিন্তু মনে রাখতে হবে যে তারা শুয়ে আছে, যার ফলে তাদের মলত্যাগ করা কঠিন হয়ে যায়। তার কারণ হলো ছোট শিশুরা পায়ুপথের মল ধারণকারী পেশীকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় করতে হয় তা জানে না, আর তাই সে মলত্যাগের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারে না।

সাবস্ক্রাইব করুন

স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন খবর, তথ্য এবং চিকিৎসকের মতামত আপনার মেইল বক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন.

Table of Contents

আমাদের সাম্প্রতিক পোষ্ট গুলি দেখতে ক্লিক করুন

আমাদের বিশিষ্ট লেখক এবং চিকিৎসক