আয়রন আমাদের শরীরের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা আমাদের শরীরে রক্তাল্পতা দুর করে স্বাস্থ্যকর এবং শক্তিপূর্ণ থাকতে সাহায্য করে। আয়রন সমৃদ্ধ খাবার এর অভাবেই ক্লান্তি, দুর্বলতা এবং বারবার অসুস্থ হয়ে পড়ার মতো লক্ষণ দেখা যায়। শুধুমাত্র চলতি মেডিসিন ছাড়াও রোজকার খাদ্যতালিকায় কিছু আয়রনযুক্ত খাবার রাখলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
শরীরে আয়রন কম থাকার লক্ষণ
মানবশরীরে আয়রন কম থাকলে যদি সঠিক চিকিৎসা না করা হয় তবে রক্তাল্পতা দেখা যায়। এছাড়াও নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি দেখা যায়-ঃ
- ক্লান্তি
- শক্তির অভাব
- শ্বাসকষ্ট
- অমনোযোগী
- ঘন ঘন অসুস্থতা
- প্রায়শই শীত অনুভূত হওয়া
- ফ্যাকাশে চামড়া
- মাথাব্যথা
- আপনার মাথার ভিতরে শব্দ বেজে ওঠা
- চুলকানি
- খাবার গিলতে অসুবিধা
- খাবারের স্বাদে পরিবর্তন হওয়া
- মুখের কোণে বেদনাদায়ক খোলা ঘা
- চামচ আকারের নখ
এই লক্ষণগুলি দেখা দিলে অবশ্যই পরীক্ষা করতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। নচেৎ জীবনহানি পর্যন্ত ঘটতে পারে।
আয়রন সমৃদ্ধ খাবার কাদের প্রয়োজন হতে পারে ?
আয়রন সাপ্লিমেন্ট বা পরিপূরক আয়রনের ঘাটতির ফলে যাদের রক্তশূন্যতা হয়ে যায় তাদের সুস্থ করতে সাহায্য করে। এবার দেখে নেওয়া যাক কাদের সাধারণত আয়রন সাপ্লিমেন্ট বা আয়রন সমৃদ্ধ খাবার এর প্রয়োজন হয়।
- গর্ভবতী মহিলাদের
- শিশু এবং ছোট বাচ্চাদের
- ঘন ঘন রক্তদান
- ক্যান্সারে আক্রান্ত মানুষ
- যারা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যায় ভুগছেন
- যাদের গ্যাস্ট্রিক সার্জারি হয়েছে
- হার্টের সমস্যা রয়েছে যাদের
- যে সমস্ত লোকেরা নিয়মিত ভারী অনুশীলনে অংশ নিচ্ছেন
- যাঁরা নিরামিষ ডায়েট অনুসরণ করছেন
- থ্যালাসেমিয়া বা সিকেল সেল অ্যানিমিয়ায় ভুগছেন যারা
অতএব, আয়রন পরিপূরক গ্রহণের আগে আপনার চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন ।
আপনার কতবার পরীক্ষা করা উচিৎ ?
বছরে একবার অবশ্যই আয়রনের মাত্রা পরীক্ষা করা উচিত। বর্তমানে চিকিৎসকরা আয়রনের ঘাটতির চিকিৎসা শুরু করার আগে বেশ কিছু রক্ত পরীক্ষা করে থাকেন যেমন-হিমোগ্লোবিন , হেমাটোক্রিট (রক্তের মোট পরিমাণ ও লাল রক্তকণিকার পরিমাণের অনুপাত), ফেরিটিন ( স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বিপাকজাত প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত একটি প্রোটিন যা টিস্যুগুলিতে লোহা সঞ্চয় করতে কাজ করে। তবে হিমোগ্লোবিন এবং ফেরিটিনের মাত্রা পরীক্ষা করার আগে, চিকিৎসা শুরু করার পরে কমপক্ষে ৩ মাস অপেক্ষা করা উচিত।
লোহার অভাবজনিত রক্তাল্পতা কী?
রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা হ্রাস পেলে অ্যানিমিয়া হয়। হিমোগ্লোবিন হ’ল আপনার আরবিসি-তে থাকা প্রোটিন যা আপনার ফুসফুস থেকে অক্সিজেন সংগ্রহ করে শরীরের বিভিন্ন কলা ও কোষে পৌঁছে দেয় । হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে আপনার দেহের আয়রন প্রয়োজন। চিকিৎসকরা সাধারণত আয়রনের পরিপূরক বা ডায়েটে পরিবর্তনের দ্বারা চিকিৎসা করে থাকেন ।
১০ টি আয়রন সমৃদ্ধ খাবার
১.ভিটামিন সি যুক্ত খাদ্য (যেমন – লেবু, টমেটো, পেঁপে, মিষ্টি আলু ইত্যাদি)
২.চর্বিহীন মাংস
৩.শিম
৪.পালং
৫.কিসমিস এবং অন্যান্য শুকনো ফল
৬.কুমড়ো বীজ
৭. ডিম
৮. মটরশুটি
৯.সয়াবিন
১০.শাকসবজি
বয়স অনুযায়ী আপনার প্রতিদিন কতটা পরিমান আয়রনের দরকার?
আপনার ডায়েটে খুব বেশি বা খুব কম আয়রন লিভারের সমস্যা, আয়রনের অভাবজনিত রক্তাল্পতা এবং হার্টের ক্ষতির কারণ হতে পারে। বয়স ও লিঙ্গ অনুযায়ী প্রতিদিন কতটা পরিমান আয়রনের দরকার তার একটা চার্ট বা তালিকা নিচে দেওয়া হলঃ
বয়স | পুরুষ মিলিগ্রাম / দিন) | মহিলা (মিলিগ্রাম / দিন) |
জন্ম থেকে প্রথম ৬ মাস পর্যন্ত শিশুদের | ০.২৭ | ০.২৭ |
৭- ১২-মাস | ১১ | ১১ |
১ থেকে ৩ বছর | ৭ | ৭ |
৪ থেকে ৮বছর | ১০ | ১০ |
৯ থেকে ১৩ বছর | ৮ | ৮ |
১৪ থেকে ১৮ বছর | ১১ | ১৫ |
১৯ থেকে ৩০ বছর | ৮ | ১৮ |
৩১ থেকে ৫০ বছর | ৮ | ১৮ |
৫১+ বছর | ৮ | ৮ |
গর্ভাবস্থা | ২৭ | – |
স্তন্যদান (18 বছরের কম বয়সী) | ১০ | – |
স্তন্যদান (19-50 বছর) | ৯ | – |
আয়রন যেমন শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় তেমনি অনেক বেশি থাকা ক্ষতিকারক
আয়রন একটি প্রয়োজনীয় খনিজ। তবে অন্যান্য অনেক খনিজ পদার্থের মতো এটিও প্রচুর পরিমাণে গ্রহণ করলে ক্ষতি সম্ভাবনা প্রবল, আয়রন এতটাই বিষাক্ত যে এর পরিপাকতন্ত্র থেকে এর শোষণ শক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, এটি অতিরিক্ত লোহার ক্ষতিকারক প্রভাবগুলি হ্রাস করে।এই যখন সুরক্ষা ব্যবস্থাগুলি ব্যর্থ হয় তখন স্বাস্থ্যের সমস্যা দেখা দেয়।
কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা: শরীরে আয়রনের পরিমাণ বাড়লে এই সমস্যা খুবই সাধারণ, যে কারণে চিকিৎসকরা আয়রন সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার পরামর্শ দেওয়ার সময়ই রোগীদের ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার ও জল খাওয়ার কথা বলে থাকেন ।
আয়রন যখন বিষ: সাধারণত শিশুরা যখন আয়রন গ্রহণ করে তখন বিষাক্ততা দেখা দিতে পারে।সেক্ষেত্রে বমি, ডায়রিয়া এবং শরীর নীল বর্ণ ধারণ করে এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে ।
বংশগত হিমোক্রোম্যাটোসিস: একটি জিনগত রোগ যা খাদ্য থেকে লোহার অত্যধিক শোষণ করে শরীরের ক্ষতি করে।
আয়রন ও ক্যান্সারের ঝুঁকি – কোনও সন্দেহ নেই যে আয়রন বেশী থাকার কারণে প্রাণী এবং মানুষ উভয়ই ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে । সমীক্ষায় দেখা গেছে যে অতিরিক্ত আয়রন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের ফলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে পারে ।
সুতরাং ,শরীরে আয়রনের বেশি পরিমাণ বিপজ্জনক হতে পারে। তবে, যদি আপনার আয়রনের ওভারলোড ডিসঅর্ডার না থাকে তবে সাধারণত আপনার ডায়েট থেকে খুব বেশি আয়রন হওয়া নিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই। আয়রন পরিপূরক যারা আয়রনের ঘাটতিতে ভুগছেন তাদের পক্ষে উপকারী তবে যাদের আয়রনের ঘাটতি নেই তাদের ক্ষতি করতে পারে। তাই ডাক্তার পরামর্শ ছাড়া কখনও আয়রন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করবেন না।