যৌন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হওয়াটা যে কোনও সুস্থ নাগরিকের একটি দায়িত্ব এর মধ্যে পড়ে। “যৌন স্বাস্থ্য” শব্দটি শুধুমাত্র অপরিকল্পিত প্রেগ্ন্যান্সি এড়ানো বা যৌনসংক্রমণ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা বোঝায় না । “যৌন স্বাস্থ্য” এমন একটি বিষয় যেখানে একজন ব্যক্তির শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতার পাশাপাশি যৌনতা ও যৌনতা সম্পর্কিত শিক্ষার বিভিন্ন দিককে অন্তর্ভুক্ত করে।
৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২, “ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন অফ সেক্সসুয়াল হেলথ” এই বিষয়গুলিতে সচেতনতা আনতে সমস্ত প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের সুস্থ ও স্বাভাবিক যৌন স্বাস্থ্যর অর্থ কী তা সঠিকভাবে বোঝানোর জন্য “বিশ্ব যৌন স্বাস্থ্য দিবস” চালু করে ।
যৌন স্বাস্থ্যের (Sexual Health) অধিকারী বলতে আমরা কাদের বুঝি?
যৌন স্বাস্থ্যের অধিকারী বলতে সেই নাগরিকদের বোঝায় যাদের নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলি বর্তমান-
১. এরা বুঝতে পারে যে যৌনতা জীবনের একটি স্বাভাবিক অংশ এবং তা সম্পর্কের মূল্যবোধ এবং বিশ্বাসের সাথে জড়িত।
২. একজন ব্যক্তি যিনি বুঝতে পারেন যে প্রত্যেকেরই যৌনতার অধিকার রয়েছে।
৩. যৌন স্বাস্থ্যের অধিকারী সর্বদাই অনিচ্ছাকৃত গর্ভাবস্থা এবং যৌনসংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য নিরাপদ ও বিজ্ঞানসম্মত উপায় অবলম্বন করে থাকেন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতেও কুণ্ঠিত হন না।
৪. এরা পরিবার এবং বন্ধুদের সঙ্গে যৌন স্বাস্থ্য বিষয়ক শিক্ষা এবং আলোচনায় সাবলীল থাকেন।
৫ ঘনিষ্ঠতায় লিপ্ত হওয়ার পূর্বে বিপরীত লিঙ্গের মানুষের সম্মতি অথবা অসম্মতি উভয়েরই সম্মান দিতে জানেন।
৬। এরা যৌন স্বাস্থ্যকে অন্যান্য স্বাস্থ্যের মতনই সমান গুরুত্ব বা প্রাধান্য দিয়ে থাকেন ।
যৌন স্বাস্থ্য এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?
সুস্থ যৌনতা, সম্পর্কের পরিপূর্ণতা আনে। শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় এবং এমনকি তাদের দীর্ঘায়ু করে তুলতেও সাহায্য করে ।
সুস্থ ও স্বাভাবিক যৌন স্বাস্থ্যের জন্য যে বিষয়গুলি গুরুত্বপূর্ণ
১. শিক্ষা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে যৌনতা ও যৌনতার শারীরিক দিকগুলি সম্পর্কে অবগত করা হয়। সম্প্রতি আমাদের দেশেও এটি চালু করা হয়েছে যেখানে অনিচ্ছাকৃত গর্ভাবস্থা, অনিরাপদ যৌনতার ঝুঁকি ,যৌনসংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকা এবং অযাচিত গর্ভাবস্থা রোধ করার উপায় সম্পর্কে শেখানো হয়। এছাড়াও যৌন নির্যাতন, এবং যৌন লালসা বনাম সম্মতিযুক্ত যৌন ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কেও ধারনা দেওয়া হয়। এই ধরনের শিক্ষার ফলে এরা আগে থেকেই যৌনতা সম্পর্কে সচেতন থাকে তাই পরবর্তীকালে একটি সুস্থ সম্পর্ক স্থাপনের সময় যাবতীয় স্বাস্থ্যকর সিদ্ধান্ত নিতে বিশেষ অসুবিধে হয় না।
২. সংক্রমণ ও যৌন সুরক্ষা
প্রায় সকলেই তাদের জীবনের যেকোনো সময়ে যৌন সংক্রমনের শিকার হয়ে থাকেন । এই সংক্রমণ অসুরক্ষিত যৌনতা কিম্বা ওরাল সেক্সের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। কিছু সংক্রমণ প্রথম থেকেই বিশেষ কিছু লক্ষণ দেখে বোঝা যায় তবে বেশ কিছু মারাত্মক যৌন রোগ আছে যেগুলি কোনও লক্ষণ সৃষ্টি করে না। এইডস এমনই একটি যৌন বাহিত রোগ। তাই যৌন সুরক্ষা সম্পর্কে সাম্যক জ্ঞান থাকা একান্ত প্রয়োজন এটি শুধু যৌনসংক্রমণ থেকে দুরে থাকতে সাহায্য করে তা নয় আপনার গর্ভস্থ সন্তানের সুরক্ষাতেও বেশ কার্যকারী ভূমিকা পালন করে । এছাড়াও যৌন নিপীড়ন, লাঞ্ছনা, ধর্ষণ বা যৌন শোষণ থেকে নিরাপদ থাকার কথাও জানা যায়।
যে মহিলা বা পুরুষ Sexually Active তারা অনিচ্ছাকৃত প্রেগন্যান্সি রোধ করতে কনডম ছাড়াও হরমোনজনিত জন্ম নিয়ন্ত্রক পিল ব্যাবহার করতে পারেন। জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল সম্পর্কে অনেকরই বহু ভুল ধারনা রয়েছে তবে একটি বিষয় প্রমাণিত, যে সব মহিলারা জন্ম নিয়ন্ত্রণের ওষুধ গ্রহণ করেন তাদের ডিম্বাশয় এবং জরায়ু ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কম ।
অস্বাস্থ্যকর যৌন স্বাস্থ্যের জন্য যে বিষয়গুলি দায়ী
অনিচ্ছাকৃত যৌন সম্পর্ক – অনিচ্ছাকৃত যৌন সম্পর্ক বা জোর করে ঘটানো যৌন সম্পর্ক, অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণ শুধু শারীরিক অবনতি ঘটায় না তার মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও গভীর প্রভাব বিস্তার করে।
অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক – STD ( Sexually Transmitted Diseases) বা যৌনবাহিত রোগের সংক্রমণের মুল কারণ হল অসুরক্ষিত যৌনতা। কিছু যৌনবাহিত রোগ থেকে আপনি সহজেই নিস্তার পেতে পারেন কিন্তু মনে রাখবেন সিফিলিস, গনেরিয়া এবং AIDS এর মতন মারণ রোগ আপনাকে চরম বিপদে ফেলতে পারে এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।