Search
Close this search box.

নাক ডাকার কারণ

Written by

Health and Wellness Blogger

ঘুমের সময় নাক ডাকার কারণ ও চিকিৎসা

 ঘুম একটি অত্যাবশ্যক শারীরবৃত্তিক  ক্রিয়া I  উপযুক্ত পরিমাণ এবং গুণমানের ঘুম আমাদের সুস্বাস্থ্যের অন্যতম উপাদান I  ঘুমের সময় নাক ডাকা কখনোই সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ নয় I  প্রকৃতপক্ষে ঘুমের সময় নাক ডাকা এক ধরনের রোগের লক্ষণ যার নাম অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া বা সংক্ষেপে OSA.   কোন ব্যক্তির জীবনে এই OSA রোগের সূত্রপাত এক ধরনের বিপদ ঘন্টা I OSA রোগ থেকে জন্ম হয় বিভিন্ন ধরনের রোগের এই নিয়ে আজকে আমাদের সংক্ষিপ্ত আলোচনা I 

প্রথমেই দেখা যাক নাক ডাকার কারণ কি ? 

এই রোগের বহিঃপ্রকাশ ঘটে ঘুমের সময় I  আমাদের উচ্চ শ্বাসনালী বা আপার রেসপিরেটরি ট্রাক্ট একটি নলের মতো পরিসর যার মাধ্যমে বাতাস আমাদের শ্বাসযন্ত্র প্রবেশ করে ও সেখান থেকে অনেকটা পথ অতিক্রম করে ফুসফুসে প্রবেশ করে I  উচ্চ শ্বাসনালী শুরু হয় নাকে (Nose) . সেখান থেকে Nasopharynx , Oropharynx, Larynx, Trachea, Bronchi প্রবেশ করে I 

nasopharynx anatomy

প্রকৃতপক্ষে লারিংস এর পর থেকেই শুরু হয়  নিম্ন শ্বাসনালি বা লোয়ার রেস্পিরাটরি ট্রেক্ট I  নিম্ন শ্বাসনালি বা লোয়ার রেস্পিরাটরি ট্রেক্ট এর উপরের অংশ অর্থাৎ উচ্চ শ্বাসনালী সর্বদা বন্ধ হয়ে যাওয়ার এক প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় সমস্ত মানুষের মধ্যে I  কিন্তু জেগে থাকাকালীন সময়ে বিভিন্ন ধরনের মাংসপেশির  কার্যকারিতার কারণে তা সম্ভব হয় না I  কিন্তু আমরা যখন ঘুমিয়ে পড়ি আমাদের মাংসপেশি ঘুমিয়ে পড়ে I  এইসময় এই মাংসপেশিগুলি শিথিল হয়ে শ্বাসনালীর গতিপথ অবরুদ্ধ করে I  যদি আমাদের উচ্চ শ্বাসনালীতে অতিরিক্ত চর্বি জমে তাহলে, এই গতিপথ অবরুদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা বহুগুণে বৃদ্ধি পায় I এছাড়াও উচ্চ শ্বাসনালীর গঠনগত ত্রুটির কারণও শ্বাসনালীর গতিপথ অবরুদ্ধ হয় আর ঘুমের সময় নাক ডাকা হল এই অবরুদ্ধ শ্বাসনালির আর্তনাদ I 

ঘুমের সময় এই অবরুদ্ধ গতিপথ দুইভাবে আমাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় এবং শারীরিক ক্ষতির কারণ হয় I  বাতাস  ফুসফুসে না ঢুকতে পারার কারণে যেমন রক্তে ও শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি হয় তেমনি শরীরে ক্ষতিকর কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রাও বাড়তে থাকে I  রক্তের এই ভারসাম্যহীনতা বা রাসায়নিক পরিবর্তন আমাদের শরীরে এক ধরনের  stress বা  পিড়ন এর কারণ হয়, কেননা এই সময়ে আমাদের সিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম অতিমাত্রায় সক্রিয় হয়ে পড়ে I দ্বিতীয়তঃ এই রাসায়নিক পরিবর্তনের কারণে আমাদের মস্তিষ্ক জেগে যায়I  জেগে যাওয়া আমরা সবসময় বুঝতে পারি তা নয়, কিন্তু বৈদ্যুতিক ভাবে মস্তিষ্ক সক্রিয় হয়ে পড়ে I  উচ্চ শ্বাসনালী আবার খুলে যায় এবং বাতাস চলাচল স্বাভাবিক হয় I  এই ঘটনা যদি বারংবার ঘটতে থাকে তাহলে আমাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে I  আমরা গভীর ঘুমে যেতে পারিনা I  পরবর্তী সকালে ওঠার পর আমাদের মনে হয় ঘুম ঘুম ভাব থেকে গেছে সারাদিন ক্লান্তি অনুভব করি I  শরীরে অক্সিজেন কম থাকার কারণে আমাদের শরীরের মেরামতি, যা বাস্তবিক ভাবে হয় ঘুমের সময়,  সেটি ব্যাহত হয় I  আমাদের বয়স অস্বাভাবিক তাড়াতাড়ি ভাবে  বৃদ্ধি পায় I ফলে দেখা যায় যে রোগ আসার কথা বৃদ্ধবয়সে চলে আসে যৌবনে I

এবার দেখা যাক কি কি রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে এই OSA  থেকে ? 

বহু রোগের জনক এই OSA .  উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেলিওর,  অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন এই রোগগুলি জন্ম নেয় বা বল শালী হয় OSA   রোগ এ I  এই রোগে জন্ম নেয় ডায়াবেটিস, ওবেসিটি ইত্যাদি I  বিভিন্ন স্নায়ুজনিত সমস্যা যেমন স্ট্রোক, ডিমেনশিয়া এইসব রোগ বৃদ্ধি পায় OSA ও অপরিমিত ঘুমের কারণে কমে যায় শারীরিক প্রতিরোধক্ষমতা I সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে যেসব রোগ ক্রমবর্ধমান তার অন্যতম হলো এই OSA.   পৃথিবীতে 7 থেকে 10 শতাংশ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত, ভারতীয়দের মধ্যে এই রোগের প্রবণতা অত্যন্ত বেশি I 

কিভাবে আমরা বুঝব আমরা এই রোগে আক্রান্ত ?

এই রোগের লক্ষণগুলি হলো নাকডাকা, অতিরিক্ত ঘুম ঘুম ভাব,  সর্বদা শারীরিক ক্লান্তিI  যদি এই ধরনের কোন লক্ষ্মন আপনার থাকে, আপনি  ডাক্তার বাবুর সাথে যোগাযোগ করুন I এখন এই রোগের যথার্থ নির্ণয় ও চিকিত্সা সম্ভব আমাদের এই শহরে I OSA রোগ নির্ণয় করা হয় একটি পরীক্ষার মাধ্যমে যার পোশাকি নাম পলিসম্নগ্রফি I  এই পরীক্ষার মাধ্যমে রোগটির উপস্থিতি প্রমাণিত হলে এর চিকিৎসা শুরু হয় I  এখনো পর্যন্ত এই রোগের চিকিৎসা হল একটি যন্ত্র যার নাম CPAP . ঘুমের সময় এই যন্ত্রটি নাকে পড়ে ঘুমোতে হয় I  বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় এখন প্রমাণিত যে এই যন্ত্র ব্যবহারে ব্যাহত করা যায় বহু রোগের প্রাদুর্ভাব I 

সুতরাং না কখনোই অবহেলা করবেন না I নাক ডাকা হলো এক ধরনের বিপদ ঘন্টি I  সুস্থ থাকার অন্যতম শর্ত হল নিশ্চিত এবং নিঃশব্দে ঘুম I 

সাবস্ক্রাইব করুন

স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন খবর, তথ্য এবং চিকিৎসকের মতামত আপনার মেইল বক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন.

Table of Contents

আমাদের সাম্প্রতিক পোষ্ট গুলি দেখতে ক্লিক করুন

আমাদের বিশিষ্ট লেখক এবং চিকিৎসক