মহিলাদের যৌনাঙ্গে চুলকানি বা ভ্যাজিনাল ইচিং এমন এক অস্বস্তিকর এবং যন্ত্রনাদায়ক রোগ যা ইরিটেবল সাবস্ট্যান্স, সংক্রমণ ও মেনোপস এর কারনে হয়ে থাকে। সেক্সুয়্যালি ট্র্যান্সমিটেড ডিজিজ (STD) ও এর কারন হিসাবে পরিগনিত হয়। কিছু রেয়ার ক্ষেত্রে স্ট্রেস বা ভালভার ক্যান্সার এর রোগলক্ষন হিসাবে ভ্যাজিনাল ইচিং হয়ে থাকে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি তেমন দুশ্চিন্তার কারন হয় না, তবে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অবশ্যই গাইনিকোলজিস্টের কাছে চিকিৎসার প্রয়োজন ।
ভ্যাজিনাল ইচিং বা মহিলাদের যৌনাঙ্গে চুলকানির কারন
১) অস্বস্তিজনক পদার্থ (Irritants)
রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসলে সমগ্র শরীরসহ ভ্যাজাইনাতেও একপ্রকার অ্যালার্জিক রিয়াকশন হয় যার ফলে সারা শরীর সহ ভ্যাজাইনাতেও র্যাশ দেখা দেয়। সাধারণ ভাবে এই irritants গুলো হল—
- সাবান
- ফেমিনিন স্প্রে
- টপিকাল কন্ট্রাসেপটিভ
- ক্রিম
- অয়েন্টমেন্ট
- ডিটারজেন্ট
- ফেব্রিক সফটনার
- সেন্টেড টয়লেট পেপার
২) চর্মরোগ
কিছু কিছু চর্মরোগ যেমন, একজিমা, সোরিয়াসিস জেনিটাল এরিয়া তে অস্বস্তি, চুলকানি তৈরি করে। একজিমা হল এক ধরনের র্যাশ যা সাধারণত অ্যাজমা অথবা অ্যালার্জিতে ভোগা মানুষদের বেশি হয়ে থাকে। এতে র্যাশ লাল হয়ে থাকে, আঁশের মতো হয় এবং যেসব মহিলারা এই রোগে ভুগছেন তাঁদের জেনিটাল এরিয়াতেও ছড়িয়ে পড়ে।
সোরিয়াসিস একটি ভীষণ কমন চর্মরোগ যা থেকে লাল, চুলকানি যুক্ত এবং মাছের আঁশের মতো গঠনের ছোপ তৈরি হয় স্ক্যাল্প এবং জয়েন্টে। এটি ছড়িয়ে পড়লে জেনিটাল এরিয়া তেও হয়ে থাকে।
৩) ইস্ট ইনফেকশান
ইস্ট হল একপ্রকার প্রাকৃতিক ছত্রাক, যা সাধারণ ভাবে ভ্যাজাইনা তে থাকে এবং তা কোনো সমস্যার সৃষ্টি করে না। কিন্তু যখন এই ইস্টের পরিমান মাত্রাতিরিক্ত ভাবে বেড়ে যায় তখন তা সংক্রমণের সৃষ্টি করে।
এটি ভীষণ সাধারণ সমস্যা। প্রতি ৪ জনের ভেতর ৩ জন মহিলার ভ্যাজিনাল ইস্ট ইনফেকশান হতে পারে। সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিকের একটি কোর্স সম্পূর্ণ করার পর ইস্ট ইনফেকশনের প্রবনতা বেড়ে যায়, কারন অ্যান্টিবায়োটিক খারাপ ব্যাকটেরিয়ার সাথে সাথে ভালো ব্যাকটেরিয়াকেও নস্ট কিরে দেয় এবং শরীরে ইস্ট এর পরিমান নিয়ন্ত্রণ রাখতে ভালো ব্যাকটেরিয়ার প্রয়োজন হয়। ইস্ট ইনফেকশানের ফলে চুলকানি, জ্বালাভাব এবং লাম্পি ডিসচার্জ হয়ে থাকে।
৪) ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস
এটিও ভ্যাজিনাল ইচিং এর খুব সাধারণ কারন। ভালো ও খারাপ ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণের তারতম্যের কারনে এটি হয়ে থাকে। খারাপ ব্যাকটেরিয়ার পরিমান বেড়ে গেলে ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে সবসময় রোগলক্ষন দেখা যায় না, তবে রোগলক্ষন যেগুলো হয় তা হল ভ্যাজিনাল ইচিং এবং ফাউল স্মেলিং ডিসচার্জ। ডিসচার্জ ধূসর ও সাদা বর্নের হতে পারে।
৫) সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ
অসুরক্ষিত যৌন সংসর্গের ফলে অনেক রকমের সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ হতে পারে, যার ফলে ভ্যাজিনাল ইচিং হয়। যেমন –
- ক্ল্যামাইডিয়া
- জেনিটাল ওয়ার্টস
- গনোরিয়া
- জেনিটাল হার্পিস
- ট্রিকোমোনিয়াসিস
এর ফলে ভ্যাজিনাল এরিয়া তে অ্যাবনর্মাল গ্রোথ এবং তার সাথে হলুদ অথবা সবুজ বর্নের ভ্যাজিনাল ডিসচার্জ হয়ে থাকে।
৫) মেনোপজ
যেসব মহিলাদের মেনোপজ চলছে অথবা হয়ে গেছে তাদের ভ্যাজিনাল ইচিং এর সম্ভাবনা বেড়ে যায়। মেনোপজের কারনে ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমান কমে যায় ফলে ভ্যাজিনাল মিউকাস পাতলা হতে থাকে, এর ফলে ড্রাইনেস বেড়ে যাওয়ার কারনে ইচিং এবং ইরিটেশন তৈরি হয়। এর জন্য সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন।
৬) স্ট্রেস
শারীরিক ও মানসিক চাপ যদি শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর প্রভাব বিস্তার করে তশলে তার কারনেও ভ্যাজিনাল ইচিং হতে পারে। যদিও এটি খুবই রেয়ার।
৭) ভালভার ক্যান্সার
খুব রেয়ার ক্ষেত্রে ভ্যাজিনাল ইচিং ভালভার ক্যান্সারের রোগলক্ষন হতে পারে। রোগের একদম প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে এটি সেরে যায়, তাই প্রতি বছর গাইনিকোলজিকাল চেক আপ করা প্রয়োজন। ভালভার ক্যান্সারের তেমন রোগলক্ষন থাকে না, তবে যে লক্ষনগুলি দেখা যায় তা হল, ভ্যাজিনাল ইচিং, অস্বাভাবিক রক্তপাত, যন্ত্রণা ইত্যাদি।
কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে
ভ্যাজিনাল ইচিং যদি এক সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয় এবং তা দৈনন্দিন জীবন ও ঘুমকে ব্যাহত করে এবং যদি নিম্নলিখিত উপসর্গগুলি থাকে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া প্রয়োজন —
- ভ্যাজিনাল এরিয়া তে ফোস্কা
- জেনিটাল এরিয়া তে যন্ত্রনা
- জেনিটাল এরিয়াতে লাল ও ফোলা ভাব
- অস্বাভাবিক ডিসচার্জ
- মূত্রত্যাগের সময় সমস্যা
- যৌন মিলনের সময় সমস্যা
ভ্যাজিনাল ইচিং এর চিকিৎসা
ইস্ট ইনফেকশান — অ্যান্টিফাংগাল ওষুধের মধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। পিল, ওয়েনমেন্ট, লিকুইড সব রকমের ওষুধ হতে পারে।
ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস — অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে এর চিকিৎসা করা হয়, পিল ও ক্রিম জাতীয় ওষুধের সাহায্যে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া মাঝপথে চিকিৎসা ও ওষুধ কখনই বন্ধ করা যাবে না।
সেস্কুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ — Std রোধে অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিপ্যারাসাইটিক ওষুধ ব্যবহার করা হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই ওষুধ শুরু এবং বন্ধ করতে হবে এবং রোগলক্ষন সম্পূর্ণ সেরে না ওঠা পর্যন্ত যৌন সংসর্গ থেকে বিরত থাকতে হবে।
মেনোপজ — মেনোপজ সংক্রান্ত ইচিং ইস্ট্রোজেন ক্রিম, ট্যাবলেট বা ভ্যাজিনাল রিং ইন্সার্ট এর মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়।
অন্যান্য কারণ — অন্যান্য কারনে ভ্যাজিনাল ইচিং হলে তা নিজে থেকেই আস্তে আস্তে সেরে যায়। ফোলাভাব, অস্বস্তি দূর করার জন্য স্টেরয়েড ক্রিম ব্যবহার করা যায়, তবে তা বেশি ব্যবহার করে ফেললে ক্রনিক ইরিটেশন, ইচিং এর সমস্যা তৈরি হয়।
ভ্যাজিনাল ইচিং বা যৌনাঙ্গে চুলকানির ঘরোয়া চিকিৎসা
জীবন যাত্রার কিছু পরিবর্তন এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখলে ভ্যাজিনাল ইচিং থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়। কিছু নিয়ম অবশ্যই পালন করা উচিত —
- উষ্ণ জল ও কম ক্ষারযুক্ত সাবানের মাধ্যমে জেনিটাল এরিয়া পরিস্কার রাখতে হবে।
- সুগন্ধি সাবান, লোশনের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে
- ভ্যাজিনাল স্প্রে ব্যবহার বন্ধ করতে হবে
- সাঁতার ও এক্সারসাইজ এর পরেই পোশাক ও অন্তর্বাস বদল করতে হবে।
- সুতির অন্তর্বাস পরিধান করতে হবে।
- ইস্ট ইনফেকশান কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে গেলে নিয়মিত টক দই খেতে হবে।
- যৌন মিলনের সময় কন্ডোম ব্যবহার করতে হবে