Search
Close this search box.

Written by

Health and wellness blogger

মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তির উপায়

কোভিড পরবর্তী সময়ে মানুষের মধ্যে যে রোগ সবচেয়ে বেশি বাসা বেঁধেছে তা নিঃসন্দেহে মানসিক অবসাদ।তাই বর্তমান সময়ে মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তির উপায় জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরি।

 বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অর্থাৎ হু’র (WHO) বক্তব্য, “সারাক্ষণ মনের মধ্যে একটা দুঃখের ভাব, সাধারণত যে সমস্ত কাজ করতে আপনি ভালবাসতেন তাতেও উৎসাহ হারিয়ে ফেলা, রোজের রুটিন মেনে চলার অক্ষমতা— এগুলি যদি দু’সপ্তাহ বা তার বেশি স্থায়ী হয়”, তবে নিশ্চিত ভাবে আপনি মানসিক ভাবে অবসাদগ্রস্ত।

মানসিক অবসাদে আজকের যুগে ভুগছেন না কেউ এটা খুঁজে বের করা রীতিমতো অসম্ভব। আর এই রোগের শিকার বেশিরভাগই আজকের যুব প্রজন্ম, যাদের বয়স প্রায় আঠারো বা তার কিছু বেশি। আর এই মানসিক অবসাদে ভুগতে ভুগতে তাঁরা হয় হতাশাগ্রস্ত হয়ে আত্মঘাতী হচ্ছেন অথবা নেশা নামক অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছেন। ঘটনা ঘটার পর তা নিয়ে বিশ্লেষণ হলেও শেষে লাভ কিছু হয়না। বরং কিভাবে আগে থেকেই আটকানো যায়, সে ব্যাপারে ভাবা প্রয়োজন।

মানসিক অবসাদ (Depression) কী?

পুরো বিষয়টির কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা বস্তুটির নাম হলো ‘মন’, যার জোরেই এ পৃথিবীতে মানুষ পৃথক হয়েছে অন্যান্য প্রাণীদের থেকে | মন আছে বলেই এই জগৎ সংসারের সবকিছু পাওয়া। কিন্তু দুঃখ, ক্রোধ, ভয়, হতাশা বার বার অশান্ত করে তোলে মনকে | আর কোনো একটি বা একাধিক বিশেষ মানসিক চাপ যেমন ভয়, দুঃখ, উদ্বিগ্নতা, বিষণ্নতা, দুশ্চিন্তা থেকে মনে যদি দীর্ঘস্থায়ী বিষাদ সৃষ্টি হয়, তবে তাকে আমরা বলি মানসিক অবসাদ বা ডিপ্রেশন | 

মানসিক অবসাদের লক্ষণ গুলি কী কী?     

মানসিক অবসাদের লক্ষণ

• মানসিক অবসাদগ্রস্ত ব্যক্তি জীবনের প্রতি সব আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। তাঁর পছন্দের জিনিস, পছন্দের কাজ, পছন্দের খাবার এমনকি পছন্দের মানুষও  — কোনোকিছুই আর তাঁর ভালো লাগেনা। নিজের পছন্দের কাজগুলি হয় করতে ভুলে যায়,নাহলে অনাগ্রহী হয়ে পড়েন ৷ কোনো কিছুই তাঁদের আর আনন্দ দেয় না। ডিপ্রেশনের রোগীদের সারাক্ষণ মনের মধ্যে এক অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করে, সারাক্ষণ মনে হয়, “কিছুই ভালো লাগছে না।”

• মানসিক অবসাদে আক্রান্ত মানুষ তার চারপাশে থাকা সবকিছুকে এমনকি জীবনকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা শুরু করে। নিজের প্রতি ঘৃণা তাঁর এমন পর্যায়ে চলে যায় যে সে ভাবে তার এবং তার চারপাশে থাকা মানুষগুলির জীবনে ঘটে চলা সমস্ত নেতিবাচক ঘটনার জন্য সে-ই  দায়ী। মনের মধ্যে বারংবার এইসব চিন্তাভাবনা আসার জন্য একসময় নিজের অস্তিত্বকেই শেষ করে দেওয়ার ভাবনা আসে তাঁর মনে।

• ডিপ্রেশনের ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি সবসময় ক্লান্তি অনুভব করে, কোনো কাজ করতেই তার উৎসাহ আসে না। যার ফলে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় অতিরিক্ত ঘুম। ফলত বদলে যায় ঘুমের সময়ও।

• মানসিক অবসাদগ্রস্ত ব্যক্তির মধ্যে সময় বিশেষে দুরকম সময়ের মধ্যে দিয়ে যান। কখনো কোনকিছুতেই তাদের খুশি, দুঃখ, রাগ কোনোটাই হয় না। আবার কখনও কখনও খুব সাধারণ বিষয়ে বা কোনো কারণ ছাড়াই তারা ভয়ঙ্কর রেগে যেতে পারেন বা ভীষণভাবে খুশিও হতে পারেন। আবেগের ওপর তাঁদের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না।

• কোনো ব্যক্তি ডিপ্রেশনের শিকার হলে, মানুষকে সহজে বিশ্বাস করতে পারেননা।  তার মনে হয় যে কেউ তাঁর কথা বিশ্বাস করবেনা বা কেউ তাঁকে বুঝবেনা।

• মানসিক অবসাদ স্বাভাবিক ক্ষিদের ওপর প্রভাব ফেলে। কারোর কারোর ক্ষিদে একদম পায়না, আবার কেউ কেউ সবসময় ক্ষুধার্ত বোধ করেন। যার ফলে হঠাৎ করেই তাদের ওজনের পরিবর্তন ঘটে।

• একজন মানুষের সারাক্ষণ মনের মধ্যে হতাশা কাজ করে, যদি সে ডিপ্রেশনের শিকার হয়। মনে হয় জীবনে আর কিছু হওয়ার নেই। এহেন চিন্তাভাবনা আসতে আসতে তাকে আত্মহত্যার পথে নিয়ে যায়।

মানসিক অবসাদের কারণ গুলি কী কী?

মানসিক অবসাদের কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ সেই অর্থে বিশ্লেষণ করা যায় না৷ কারণ বহু কারণের ফলাফল হিসেবে মানসিক অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে মানুষ। বেশ কিছু ফ্যাক্টর দায়ী এর কারণ হিসেবে। সেই ফ্যাক্টর গুলি হতে পারে জৈবিক, পারিবারিক, সামাজিক বা কোনো বিশেষ ঘটনা।

মস্তিষ্কের গঠন

মস্তিষ্কের গঠন, মানসিক অবসাদের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোব কম সক্রিয় থাকলে,মানসিক অবসাদের সম্ভাবনা কয়েক গুণ বেড়ে যায়।

একইভাবে নিউরোট্রান্সমিটার এবং নিউরোসার্কিটের মধ্যে সংযোগের ফলে নিউরোট্রান্সমিটার বা নিউরোহরমোনের যে পরিবর্তন হয়, তার ফলে মানসিক অবসাদের একটি বড় সম্ভাবনা তৈরি হয়।

পারিবারিক কারণ

 যাদের পরিবারে মানসিক অবসাদের ইতিহাস আছে, তাদের ক্ষেত্রে অন্যান্যদের তুলনায় ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

উপদ্রুত শৈশব

ছোটোবেলার কোনো মানসিক যন্ত্রণাদায়ক ঘটনা, অশান্তি — ইত্যাদি কারণে মানসিক অবসাদের সম্ভাবনা তৈরি হয়ে থাকে।

চিকিৎসা জনিত অবস্থা

কিছু ক্রনিক অসুস্থতা যেমন – ক্যান্সার, পারকিন্সন্স ডিজিজ, অনিদ্রা, এডিএইচডি ইত্যাদি রোগের কারণে মানসিক অবসাদ আসতে পারে।

ড্রাগ ব্যবহার

যে সমস্ত মানুষ অ্যালকোহল অথবা অন্যান্য নেশাদ্রব্য ব্যবহার করে থাকেন, তাদের ক্ষেত্রে মানসিক অবসাদের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

হরমোন

গর্ভাবস্থায়  যে হরমোনের তারতম্য হয়, তার কারণেও আসতে পারে ডিপ্রেশন।

মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তির উপায় বা চিকিৎসা কী?

মানসিক অবসাদের ঔষধ

কিছু অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ব্যবহার করে সাধারণত ওষুধের দ্বারা মানসিক অবসাদের চিকিৎসা করা হয়।

• ট্রাইসাইক্লিক অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট যেমন, Desipramine, Imipramine, Doxepin, Trimipramine, Nortriptyline, Amitriptyline এবং Protriptyline.

• মোনোঅ্যামিন অক্সিডেজ ইনহিবিটরস (MAOIs) যেমন, Tranylcypromine, Phenelzine এবং Isocarboxazid.

• সিলেক্টিভ সেরোটোনিন রিউপ্টেক ইনহিবিটরস (SSRIs) যেমন, Escitalopram, Citalopram, Sertraline, Paroxetine, Fluoxetine, এবং Vilazodone.

• কিছু অন্যধরনের অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট যেমন, Bupropion, Mirtazapine, Nefazodone, এবং Vortioxetine.

• এসএনআর ইনহিবিটরস যেমন, Levomilnacipran, Desvenlafaxine, Duloxetine এবং Venlafaxine.

সাইকোথেরাপি

সাইকোথেরাপি হলো মানসিক অবসাদের চিকিৎসার একটি পদ্ধতি, যেখানে একজন পেশাদার বিশেষজ্ঞ, রোগীর মানসিক স্বাস্থ্য এবং লক্ষণ নিয়ে আলোচনা করে। এটিকে সাইকোলজিক্যাল থেরাপিও বলা হয়।

মানসিক অবসাদ (Depression) — এর প্রতিরোধ কীভাবে সম্ভব?

• স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট।

• পর্যাপ্ত ঘুম।

• ব্যালান্সড এবং পুষ্টিকর ডায়েট

• নিয়মিত শরীরচর্চা।

• আত্মীয়, বন্ধুদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ, কথাবার্তা।

• নিয়মিত মেডিকেল চেকআপ।

সাবস্ক্রাইব করুন

স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন খবর, তথ্য এবং চিকিৎসকের মতামত আপনার মেইল বক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন.

Table of Contents

আমাদের সাম্প্রতিক পোষ্ট গুলি দেখতে ক্লিক করুন

আমাদের বিশিষ্ট লেখক এবং চিকিৎসক