গর্ভধারণ এবং সন্তান প্রসব — বিবাহ পরবর্তী জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বলেই মনে করেন অধিকাংশ মানুষই।তাই গর্ভধারণের সঠিক সময় জানা অত্যন্ত প্রয়োজন।
গর্ভধারণ সংক্রান্ত পরিকল্পনায় মানুষের মধ্যে আনন্দ , ভয় প্রভৃতি নানারকম প্রতিক্রিয়া দেখতে পাওয়া যায়। যদিও তা বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। মনে রাখা উচিত প্রেগন্যান্সি আসলে একটি দীর্ঘকালীন দায়িত্ব। তাই স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই এই প্রস্তুতি নেওয়ার আগে মন থেকে প্রস্তুত হওয়া বাঞ্ছনীয়।
কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় কোনো শারীরিক সমস্যা না থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘদিন অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক স্থাপনের পরেও গর্ভধারণ সম্ভব হয় না। আসলে নিষেক সম্পন্ন করতে গেলে কতগুলি শর্ত অবশ্যই পূরণ করা একান্ত প্রয়োজনীয়।
গর্ভধারণের শর্ত গুলি কী কী?
যৌন মিলনের ফলে নিষেকের জন্য একটি সক্রিয় শুক্রাণু এবং সক্রিয় ডিম্বাণুর অবশ্যই প্রয়োজন। মিলনের সময় শুক্রাণু যখন জরায়ুতে পৌঁছায় এবং সেখানে একটি সক্রিয় ডিম্বানুর সাথে মিলিত হয় সেক্ষেত্রে গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে। সক্রিয় ডিম্বাণু টি যখন জরায়ু থেকে নিঃসৃত হয়ে ফ্যালোপিয়ান টিউবে আসে, তখন তাকে ওভ্যুলেশন বলে। এই সময়টিই গর্ভধারণের জন্য সম্ভাবনাময় সময়।
পিরিয়ডের আগে গর্ভধারণ সম্ভব কী?
কোনো মাসে পিরিয়ড শুরু হওয়ার আগে যৌনমিলন হলে কোনো মহিলা গর্ভবতী হতে পারেন কি না, তা জানার জন্য ঋতুচক্র সম্বন্ধে সম্যক ধারণা থাকা প্রয়োজন। এরকম ক্ষেত্রে কারো যদি পিরিয়ডের আগেই কোনো সপ্তাহে ওভ্যুলেশন হয়ে থাকে এবং সঙ্গম যদি সেই সপ্তাহেই হয়, তাহলে গর্ভধারনের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।সাধারণত মহিলাদের গর্ভধারনের উপযুক্ত সময় হল ওভ্যুলেশনের ৫ দিন আগে থেকে ওভ্যুলেশন হওয়া পর্যন্ত। পিরিয়ড শুরু হওয়ার ৭ দিন আগে নিষেক সাধারণত সঠিক ভাবে হয় না। তবে যে সকল মহিলার ঋতুচক্র কম সময়ের হয় ( ১৯দিন থেকে ২২দিন) তাদের ক্ষেত্রে পিরিয়ডের আগে গর্ভধারণ সম্ভব।
পিরিয়ড শেষ হওয়ার কতদিন পর গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে?
পিরিয়ড শেষ হওয়ার তিন থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত গর্ভধারণের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। এই সময় প্রতিদিন বা কমপক্ষে একদিন অন্তর সঙ্গম হলে সব থেকে ভালো। এমনিতে পিরিয়ডের অষ্টম দিন থেকে ১৭তম দিন পর্যন্ত গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে।
গর্ভধারণের সাথে ঋতুচক্রের সম্পর্ক কী?
ঋতুচক্রের সময় হিসেব করে মিলিত হলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যেমন, বেশিরভাগ মহিলার ক্ষেত্রেই ঋতুচক্র ২৮ থেকে ৩২ দিনের হয়, তবে ব্যক্তিবিশেষে তা পরিবর্তন হয়। ওভ্যুলেশনের সময়কাল সাধারণত পিরিয়ডের অর্ধেক দিন সংখ্যায় হয়, এবং সেটি ২৮ দিন পর্যন্ত থাকে। এই পর্বটি মোটামুটি ভাবে ১০ থেকে ১৫ দিন অব্ধি চলে,আর এই সময়কালই গর্ভধারণের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। ওভ্যুলেশনের এর সময়সীমাই গর্ভধারণের উপযোগী। এই সময় সঙ্গমে গর্ভধারণের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। ঋতুচক্রের পঞ্চম দিন থেকে দশম দিন পর্যন্ত এর সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকলেও, তা ১৬ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় কখন?
• বয়স বৃদ্ধি
ডাক্তাররা মনে করেন ২২-৩০ বছর বয়স হলো গর্ভধারণের জন্য আদর্শ সময়।
বয়স ত্রিশ পেরোলেই ডিম্বাণুর সক্রিয়তা ১৫থেকে ২৫ শতাংশ হারে কমতে থাকে, এবং ৪০ বছর বয়সের তা আরো কমে যায়।
• নিয়মিত সঙ্গম
নিয়মিত সঙ্গম বলতে পুরো মাস জুড়ে রোজ সঙ্গম নয়৷ ওভ্যুলেশনের সময় রোজ সঙ্গম করলেও বাকি সময়ে একদিন অন্তর মিলিত হোন। এতে পুরুষদের শুক্রাণুর সঠিক মাত্রা বজায় থাকে।
• নিয়মিত ঋতুস্রাব
অনিয়মিত ঋতুস্রাব ওভ্যুলেশনের সময় সমস্যা সৃষ্টি করে। এই কারণে সন্তান ধারণের জন্য ওভ্যুলেশনের সময় নিয়মিত সঙ্গম করা প্রয়োজন।
গর্ভধারনের লক্ষণ
প্রায়শই মহিলারা বুঝতে পারেন না প্রথম দিকটায় যে তিনি সন্তানসম্ভবা৷ এর ফলে কিছু ঝুঁকিপূর্ণ কাজও তারা করে ফেলেন, যা অনেকসময়ই বড় কোনো সমস্যার মুখোমুখি দাঁড় করায়৷ তাই গর্ভাবস্থার সঠিক লক্ষণ গুলি জানা একান্ত প্রয়োজনীয়।
• ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া৷ (এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয় )।
• বমি হওয়া
• কোনো বিশেষ গন্ধ সহ্য না হওয়া।
• ঘুম থেকে উঠেই অসুস্থ বোধ করা।
• বারবার বাথরুমে যাওয়া।
• স্তনের আকারে পরিবর্তন।
• অ্যারিওলার টিস্যু গাঢ় বর্ণ ধারণ করে।
• নাভি থেকে শ্রোণীদেশ পর্যন্ত গাঢ় বর্ণ ধারণ।
• যেকোনো একটি বিশেষ খাদ্যের প্রতি অতিরিক্ত আগ্রহ।
• স্তনের চারপাশে নীলচে কিংবা গোলাপি বর্ণের গোলাকার দাগ।