কিডনি সিস্ট হল কিডনিতে তৈরি হওয়া এক প্রকার তরল পদার্থ ভর্তি থলি। একটা কিডনি তে একটা সিস্টও হতে পারে, আবার একাধিক ও হতে পারে। সিস্ট সাধারণত দুই প্রকার, সিম্পল সিস্ট এবং পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিজ।
সিস্ট সাধারণত ক্ষতিগ্রস্ত নয়, এমনকি আপনি বুঝতেও পারবেন না, কারণ এর কোনো রোগলক্ষণও থাকে না। একমাত্র পরীক্ষা করালেই ধরা পড়ে।
সিম্পল সিস্টে একটা সিস্ট তৈরি হয় এবং এদের দেওয়াল খুব পাতলা হয় এবং এর ভেতর জলীয় পদার্থ ভর্তি থাকে। সিম্পল সিস্ট কিডনির ক্ষতি করে না।
পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিজ এ কিডনি তে একাধিক সিস্ট তৈরি হয় এবং যখন এরা আকারে বাড়তে থাকে তখন এগুলো কিডনির কর্মক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
কিডনি সিস্টের আকার
কিডনি সিস্ট খুব ছোট হতে পারে। এমন ছোট যা শুধুমাত্র মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমেই দেখতে পাওয়া যায় আবার কিডনি সিস্ট টেনিস বলের সাইজেরও হতে পারে। সিস্টের আকার যত বাড়তে থাকে তত তা আশেপাশের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ওপর চাপ ফেলে এবং তার ফলে যন্ত্রণা হয়।
কিডনি সিস্ট এর লক্ষণ
সাধারণত সিস্টের কোনো রোগলক্ষণ থাকে না। যদি কিডনি সিস্ট আকারে বড় হয় এবং সংক্রমিত হয়ে পড়ে, তাহলে যে রোগলক্ষণগুলো দেখতে পাওয়া যায়, সেগুলি হল —
- জ্বর
- পিঠে ব্যথা বা পাঁজর ও পেলভিসের মাঝামাঝি জায়গায় যে কোনো পাশে যন্ত্রণা হওয়া। যদি সিস্ট ফেটে যায়, তাহলে প্রচন্ড যন্ত্রণা হয়।
- পেট ফুলে যাওয়া
- পেটের ওপরের দিকে (আপার অ্যাবডোমেন) যন্ত্রণা হওয়া
- স্বাভাবিকের তুলনায় বেশিবার মূত্রত্যাগের সমস্যা
- মূত্রের রঙ গাঢ় হওয়া
- মূত্রের সাথে রক্ত নিঃসৃত হওয়া
পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিজের রোগলক্ষণগুলো হল —
- পিঠে এবং পাশে যন্ত্রণা হওয়া
- মূত্রের সাথে রক্ত নিঃসৃত হওয়া
- হাই ব্লাড প্রেশার
কিডনি সিস্টের কারণ
চিকিৎসকরা নিশ্চিত করে বলতে পারেন না যে ঠিক কি কারণে সিম্পল সিস্ট হয়ে থাকে। তবে তাঁরা সম্ভাব্য কিছু কারণের কথা বলে থাকেন। যেমন — প্রতিটা কিডনির ভেতর লক্ষ লক্ষ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র টিউবিউলস থাকে, যা মূত্র সংগ্রহ করে। যখন কোনো টিউবিউল ব্লক হয়ে যায়, তখন সেটা ফুলে যায় এবং তরলে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। তখন সিস্ট তৈরি হয়। আরেকটি সম্ভাব্য কারণ হল, যখন টিউবিউলস এর দুর্বল অংশে ডাইভার্টিকুলা নামক থলি তৈরি হয় এবং তা তরলে পরিপূর্ণ হয়ে যায়।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে কিডনি সিস্ট হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ৪০ বছর বয়সের ভেতর প্রায় ২৫% মানুষের কিডনি সিস্ট হয়ে থাকে, ৫০ বছর বয়সের ভেতর প্রায় ৫০% মানুষের কিডনি সিস্ট হয়ে যায়। মহিলাদের থেকে থেকে পুরুষদের কিডনি সিস্ট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিজ জিনের পরিবর্তনের কারনে ঘটে এবং তা পরিবারের সদস্যদের ভেতর হয়ে থাকে।
কিডনি সিস্টের জটিলতা
সাধারণত সিস্ট কোনো সমস্যা তৈরি করে না, তবে কোনো কোনো সময় এর থেকে কিছু সমস্যা তৈরি হয়, যেমন —
- সিস্টে সংক্রমন
- সিস্ট ফেটে যাওয়া
- হাই ব্লাড প্রেশার
- কিডনির বাইরে মূত্রের সংবহন আটকে যাওয়া
- পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিজ সময়ের সাথে সাথে কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে থাকে এবং যাঁদের এই সমস্যা আছে, সাধারণত বছর বয়সের ভেতর তাদের কিডনি ফেলিওর হয়ে যায়।
কিডনি সিস্ট এর চিকিৎসা
কিডনি সিস্ট এর চিকিৎসা করতে গেলে আপনাকে ইউরোলজিস্টের কাছে যেতে হবে। আপনার চিকিৎসক আপনার রক্তের ও মূত্রের নমুনা নিতে পারেন, এটা দেখার জন্য যে আপনার কিডনি কতটা ভাল ভাবে কাজ করছে। এছাড়া যে যে পরীক্ষাগুলো করার প্রয়োজন হতে পারে, সেগুলো হল —
কম্পিউটেড টোমোগ্রাফি স্ক্যান (CT) : যেখানে খুব শক্তিশালী এক্স–রে এর মাধ্যমে কিডনির ত্রিমাত্রিক (থ্রিডি) ছবি তৈরি করা হয়।
ম্যাগনেটিক রেসোনান্স ইমেজিং (MRI) : যেখানে ম্যাগনেট এবং রেডিও ওয়েভ এর মাধ্যমে কিডনির ছবি তোলা হয়।আল্ট্রাসাউন্ড : যেখানে শব্দ তরঙ্গ তৈরি করে কিডনির ছবি দেখা হয় এবং দেখা হয় যে সিস্টের আকার বড় হয়েছে কি না।
যদি সিস্ট আকারে ছোট হয় এবং কিডনির কোনো ক্ষতি না করে, তাহলে এটার জন্য আলাদা করে চিকিৎসা করার প্রয়োজন নেই। শুধু আপনাকে প্রতি ৬ থেকে ১২ মাস অন্তর ইমেজিং টেস্ট করাতে হবে, এটা দেখার জন্য যে, সিস্টের আকার বেড়েছে কি না।
বড় আকৃতির সিস্ট এবং যেসব সিস্টের রোগলক্ষণ আছে, তাদের জন্য দুই ধরণের চিকিৎসা আছে, স্ক্লেরোথেরাপি এবং সার্জারি।
স্ক্লেরোথেরাপি
সিস্টকে তরল করে বের করে দেওয়ার জন্য স্ক্লেরোথেরাপি করা হয়। প্রথমে লোকাল অ্যানাস্থেসিয়া করে নেওয়া হয়। আল্ট্রাসাউন্ড এর সাহায্যে আপনার চিকিৎসক একটা সরু সূঁচ আপনার ত্বকের ওপর দিয়েই সিস্টে ফোটাবেন এবং সিস্টের ভেতরের তরল পদার্থ সম্পূর্ণ বের করে দেন। কখনো কখনো চিকিৎসক অ্যালকোহল দিয়ে সিস্টটা পরিপূর্ণ করে দেন, যাতে এটা পরে আবার বাড়তে না পারে।
সার্জারী
যদি কোনো বড় সিস্ট থাকে, যা আপনার কিডনির কর্মক্ষমতা কে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, তাহলে সিস্টটিকে অপারেশনের মাধ্যমে সরিয়ে ফেলা হয়। সমগ্র পদ্ধতিটির সময়, জেনারেল অ্যানাস্থেসিয়া করা হয়। অনেক ছোট ছোট ছিদ্র করে ল্যাপ্রোস্কপির মাধ্যমে সিস্ট গুলো সারিয়ে ফেলা হয়। প্রথমে সার্জেন সিস্ট থেকে তরল পদার্থ বের করে দেন, তারপর সিস্টের দেওয়াল কেটে বা পুড়িয়ে দেন। সার্জারীর কিছুদিনের মধ্যেই রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যেতে পারে।