আপাদমস্তক গোপনীয়তায় মোড়া হস্তমৈথুন নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে যুব সমাজে।এই নিয়ে খোলাখুলি আলোচনায় সমাজ আরোপিত সংস্কারের জেরে বহু যুবক, যুবতীর মনে একাধিক প্রশ্ন ঘুরপাক খেলেও, কোনও ভাবেই তার বৈজ্ঞানিক উত্তর মেলে না। আসলে, হস্তমৈথুন প্রসঙ্গে ভালো মন্দ দুই মিশিয়েই একাধিক তথ্য উঠে আসে। এখন প্রশ্ন হল, এই শারীরবৃত্তিয় প্রক্রিয়াটি কী সত্যিই আপনার শরীরের কোনো ক্ষতি করে? নাকি হস্তমৈথুন শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ? এক্ষেত্রে অবশ্য নানা মুনির নানা মত। আজ আমরা আলোচনা করে নেবো হস্তমৈথুনের ভালো ও খারাপ উভয় দিক সম্পর্কেই।
হস্তমৈথুনের ভালো দিক:-
১) হস্তমৈথুন বিভিন্ন হরমোন নিঃসরণ করে—
i.ডোপামিন- এটি সুখের হরমোন।
ii.এন্ডোরফিন- শরীরের প্রাকৃতিক ব্যথা উপশমকারী।
iii.অক্সিটোসিন- একে প্রেমের হরমোন বলা হয়।
iv.টেস্টোস্টেরন- এই হরমোনটি সহবাসের সময় নিঃসৃত হয় যাতে স্ট্যামিনা এবং উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়।
v.প্রোল্যাক্টিন- এটি স্তন্যপানের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
২) হস্তমৈথুন আপনার মেজাজকে প্রভাবিত করে—কখনও কখনও আপনার মেজাজ খারাপ হলে হস্তমৈথুন আপনাকে কিছুটা রিল্যাক্স করতে সহায়তা করে।
৩) আপনার ফোকাস এবং একাগ্রতা বাড়াতে সাহায্য করে—একটি গবেষণার মাধ্যমে বেশ কয়েকজন মানুষের তরফে জানা যায় যে হস্তমৈথুন তাদের আরও ভালো মনোনিবেশ করতে সাহায্য করে। যদিও এখনও পর্যন্ত এর কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায় নি।
৪) স্ট্রেস এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে—যদিও অক্সিটোসিনকে “প্রেমের হরমোন” বলা হলেও এটি ডি-স্ট্রেসিংয়ের সাথেও যুক্ত। তাছাড়া এটি রক্তচাপ হ্রাস করে এবং আপনার কর্টিসলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। কর্টিসল হল স্ট্রেসের সাথে যুক্ত একটি হরমোন।
৫) ঘুমোতে সাহায্য করতে পারে—অক্সিটোসিন এবং এন্ডোরফিন হরমোনগুলির মাধ্যমে হস্তমৈথুন আপনাকে ঘুমাতে সাহায্য করতে পারে। বিশেষ করে যদি চাপ এবং উদ্বেগ-এর জন্য আপনার চোখ বন্ধ না হয় সেক্ষেত্রে এটি খুব কার্যকরী।
৬) আত্মসম্মানের উপরও প্রভাব ফেলে—হস্তমৈথুন আপনার শরীরকে জানার এবং নিজের জন্য শারীরিকভাবে সুখের সময় কাটানোর একটি উপায় হতে পারে। যেহেতু আপনি নিজের শরীরকে নিজেই উপভোগ করতে শিখছেন এবং আপনার জন্য এক আনন্দদায়ক মুহূর্ত তৈরীর চেষ্টা করছেন, ফলে হস্তমৈথুন আপনার আত্মসম্মানকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
৭) যৌন জীবন উন্নত করতে পারে—অনেক সেক্স থেরাপিস্ট নিয়মিত হস্তমৈথুন করার পরামর্শ দেন। হস্তমৈথুন থেকে প্রাপ্ত শারীরিক সুবিধাগুলি ছাড়াও, এই অভ্যেসটি আপনার যৌন জীবনের জন্য দুর্দান্ত উপকারী হতে পারে। হস্তমৈথুন আপনার জন্য আনন্দদায়ক এবং উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্ত খুঁজে বের করতে সাহায্য করতে পারে। আর এভাবেই আপনার সঙ্গীকে আপনি দুর্দান্ত শারীরিক সুখ দেওয়ার ক্ষেত্রে আরোও একধাপ এগিয়ে যেতে পারেন।
হস্তমৈথুন এর খারাপ দিক:-
১) হস্তমৈথুনের সময়ে পুরুষাঙ্গ শক্ত বা ধারালো বস্তুর সঙ্গে ঘষা উচিত নয়। এর ফলে রক্তপাত যেমন হতে পারে, তেমনই লিঙ্গ পেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
২) অতিরিক্ত হস্তমৈথুন পুরুষের যৌনাঙ্গকে দুর্বল করে দেয় এবং অন্যান্য অঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। শরীরে প্রোটিনের অভাব দেখা দেয়, ফলে পুরো শরীর দুর্বল হয়ে যায় এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
হস্তমৈথুন সম্পর্কিত ভ্রান্ত ধারণা :
কিছু মানুষ সামাজিক বা আধ্যাত্মিক দিক থেকে চিন্তা করে হস্তমৈথুন নিয়ে নেগেটিভ ভাবনা ভেবে ফেলেন। কিছু ধর্মে হস্তমৈথুনকে পাপ বলে মনে করা হয়। আবার কিছু লোক বিশ্বাস করেন যে মহিলাদের হস্তমৈথুন করা উচিৎ নয় বা হস্তমৈথুন অনৈতিক। আমরা অনেকেই গুজব শুনেছি যে হস্তমৈথুনের ফলে আপনি অন্ধ হয়ে যেতে পারেন বা এটির ফলে আপনার হাতের মুঠোয় চুল গজাতে পারে। যদিও এসব ভাবনা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আপনার ব্যক্তিগত বিশ্বাসের কারণে হস্তমৈথুন থেকে বিরত থাকা সম্পূর্ণ ঠিক আছে, কিন্তু আপনি যদি কোনরকম উদ্বেগ ছাড়াই হস্তমৈথুন করতে চান, তাহলে একজন থেরাপিস্টের সাথে কথা বলে উপযুক্ত পরামর্শ গ্রহণ খুব জরুরি। আমাদের শরীরকে ফিল গুড করানোর জন্য অনেক ধরনের শারীরিক চাহিদা রয়েছে,যেমন মানসিক শান্তি, সুস্থ দেহ এবং যৌন ইচ্ছা পূরণ। সাধারণত শরীরের যৌন চাহিদা সম্পর্কীয় বিষয় নিয়ে বেশি কথা বলে না বেশিরভাগ মানুষ। তবে, চিকিৎসকরা বলছেন,হস্তমৈথুন সুস্থ যৌন জীবনেরই একটি অংশ,যা আমাদের শরীরের একটি মৌলিক চাহিদা পূরণ করে। ফলে, হস্তমৈথুন আদৌ কোন বদ অভ্যাস নয়, বরং সুস্থ যৌন জীবনের চাবিকাঠি।