পাইলস কী?
পাইলস হল একটি ফোলা অংশ । আমাদের মলত্যাগের জন্য যে দ্বার থাকে, সেখানে ভিতরের ও বাইরের অংশে অনেকগুলি মাংসপেশি থাকে। এই মাংসপেশিগুলি সমষ্টিবদ্ধ হয়ে মলদ্বারে ভালবের মতো কাজ করে। এই ভালবের মতো পেশি ও মলদ্বারের অন্দরে থাকা কোষের মধ্যে যে রক্তবাহী নালী থাকে সেগুলি কিছু কারণে ফুলে যায়। এই ফুলে যাওয়া অংশগুলিকে পাইলস বলে। মলত্যাগের সময়, মলের সঙ্গে এই ফুলে যাওয়া অংশের ধাক্কা লাগে তার ফলে রক্তপাত হতে থাকে। মুশকিল হল, মলদ্বারে বেদনাবাহী স্নায়ু না থাকায় রক্তপাত হলে প্রথমদিকে সেভাবে ব্যথা বেদনা টের পাওয়া যায় না ।
পাইলস-এর প্রাথমিক লক্ষণ
মলত্যাগের পরে রক্তপাত হবে। রক্তের রং হবে টকটকে লাল। অনেকসময় রক্ত মলদ্বার থেকে ছিটকে বেরোতে পারে।
পাইলস রোগের পর্যায়
পাইলস অসুখটিকে মোটামুটি তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়। প্রথম পর্যায়ে রোগীর মলত্যাগ করার সময় রক্তপাত হয় ও মাঝেমধ্যে পাইলসটি মলদ্বার দিয়ে বেরিয়ে যায়। দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রতিবার মলত্যাগ করার সময় পাইলস মলদ্বার দিয়ে বেরিয়ে আসে। তৃতীয় পর্যায়ে পাইলসের আকার বেড়ে যায় ও সবসময়ই মলদ্বারের বাইরে বেরিয়ে ঝুলতে থাকে।
পাইলসের কারণ:
• কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে অতিরিক্ত চাপ দিয়ে মলত্যাগ করেন রোগী। ফলে মলদ্বারের মাংসপেশিগুলির টানটান ভাব কমে যায় ও বাইরের দিকে বেরিয়ে আসে।
• ক্রনিক ডায়ারিয়া ও দীর্ঘসময় ধরে মলত্যাগের অভ্যেসের কারণে পাইলস হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
• প্রেগন্যান্সির সময় বিভিন্ন ধরনের হরমোনের পরিবর্তন দেখা দেয় শরীরের। সেখান থেকে কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পাইলস হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।
• অনেকের রেকটামের গঠনগত সমস্যার কারণেও পাইলস দেখা যেতে পারে।
• কিছু কিছু ক্ষেত্রে পাইলস হওয়ার পিছনে নির্দিষ্ট কোনও কারণ পাওয়া যায় না।
কাদের সমস্যা বেশি হয়?
স্ত্রী-পুরুষ উভয়েরই এই সমস্যা হতে পারে। বর্তমানে জীবনযাত্রার অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। বদলে গিয়েছে খাদ্যাভ্যাস। মনে রাখতে হবে, পাইলস হওয়ার পিছনে খাদ্যাভ্যাস অনেকাংশেই দায়ী। খাদ্যাভাসের পরিবর্তনের কারণে কম বয়সেই লোকে আজকাল পাইলস-এর শিকার হচ্ছে। এমনকী কিছু কিছু বাচ্চারও এমন সমস্যা দেখা যাচ্ছে।
পাইলস রোগীদের কি কি খাওয়া উচিত ?
মাত্রাতিরিক্ত রেডমিট, চিকেন, অতিরিক্ত আয়রন আছে এমন খাদ্য, ফাস্ট ফুড, ময়দার তৈরি খাদ্য খাওয়ার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। তাই কোষ্ঠ পরিষ্কার রাখবে এমন খাদ্যগ্রহণ করাই উচিত। বিশেষ করে ফাইবার আছে এমন খাদ্য পর্যাপ্ত মাত্রায় পাতে রাখতে হবে। উদাহরণ হিসেবে সবুজ শাকসব্জির কথা বলা যায়। এছাড়া যে ফলে অনেকটা পরিমাণে ফাইবার থাকে সেই ফল খাওয়া দরকার যেমন পেয়ারা, পেঁপে, কমলালেবু, তরমুজ ইত্যাদি। গমের তৈরি খাদ্যেও প্রচুর পরিমাণে ফাইবার আছে। তাই পাতে রাখুন গমের তৈরি রুটি। প্রতিদিন গমের তৈরি খাদ্য খেতে সমস্যা হলে ফাইবার সমৃদ্ধ ডালিয়া, ওটস, মিলেট খেতে পারেন। মনে রাখবেন ছোলা, মটরেও থাকে ভালো মাত্রায় ফাইবার। প্রতিদিন পাতে ছোলার তৈরি তরকারি বা ছোলা সেদ্ধ কিংবা ভেজানো ছোলা রাখতে পারেন। লাঞ্চের সময় প্রচুর স্যালাড খেতে পারেন। বিশেষ করে শশায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা মলের আকার বৃদ্ধি করে। আর ফাইবার জল ধারণ করতেও সাহায্য করে। তাই স্টুলও নরম হয়।
রোগ নির্ণয়
প্রক্টোস্কোপি যন্ত্রের সাহায্যে খুব সহজেই পাইলস নির্ণয় করা যায়। এছাড়া চিকিৎসক রোগীকে পরীক্ষা করে দেখেও রোগ নির্ণয় করতে পারেন।
চিকিৎসা
কিছু ওষুধ আছে যার দ্বারা প্রাথমিকভাবে পাইলস সারিয়ে তোলা যায়। ওষুধ ছাড়াও রয়েছে পোলিডোকানোল জাতীয় ইঞ্জেকশন। এছাড়া ব্যান্ডিং পদ্ধতিতে প্রাথমিক পর্যায়ের পাইলস নির্মূল করা যায়। লেজারের সাহায্যেও পাইলস শুকিয়ে দেওয়া যায়। তবে রোগের দ্বিতীয় বা তৃতীয় পর্যায়ে অপারেশন ছাড়া গতি থাকে না।
এখন আধুনিক পদ্ধতির সার্জারি আছে। এই পদ্ধতির নাম এমআইপিএইচ (মিনিমালি ইনভেসিভ প্রসিডিওর ফর হেমোরয়েড)। পায়ুদ্বারে একটি যন্ত্র প্রবেশ করিয়ে পাইলসটিকে বাদ দিয়ে দেওয়া যায়। বাইরে থেকে কাটাছেঁড়া করতে হয় না। এই প্রক্রিয়ার সময় খুব কম লাগে। ব্যথা যন্ত্রণাও কম হয়। রোগী দিনদুয়েকের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন।
অপারেশনের পর কি কি করতে হবে
• ফাইবার আছে এমন খাদ্য বেশি করে খেতে হবে রোগীকে।
• ফাস্টফুড খাওয়ার অভ্যেস ত্যাগ করা দরকার।
• নিয়মিত শরীরচর্চাও করা প্রয়োজন। কারণ শরীরচর্চা কোলনের স্বাভাবিক সংকোচন এবং প্রসারণে সাহায্য করে। অর্থাৎ হিসেবমতো শরীরচর্চা পাইলস এবং কোষ্ঠকাঠিন্য উভয় রোধ করে।
• দীর্ঘসময় ধরে মলত্যাগ করার অভ্যেস ত্যাগ করতে হবে।
• পর্যাপ্ত জলপান খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রতিদিন একজন প্রাপ্তবয়স্কের আড়াই থেকে ৩ লিটার অবধি জল পান করা দরকার। পর্যাপ্ত জল পানের অভ্যেস স্টুল নরম রাখে ও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকেও মুক্তি দিতে পারে।
মনে রাখবেন
মলত্যাগের সময় রক্তপাত কিন্তু ক্যান্সারেরও লক্ষণ। তাই রক্তপাত হতে দেখলে পাইলস হয়েছে ভেবে রোগ ফেলে রাখবেন না। সত্ত্বর চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।