রুমিনেটিং কি?
নিজের মনে মনে একই বিষয়ে কথা বলাকে রুমিনেটিং বলে। কখনো আপনি অনুভব করেছেন, আপন খেয়ালে মত্ত আপনি বারবার এক বা একাধিক বিষয়ে নেগেটিভ দুঃশ্চিন্তা করছেন। এই ক্রমাগত একই বিষয় নিয়ে বারবার দুশ্চিন্তা করে দুঃখ পাওয়া, কাঁদা অথবা ক্ষোভ প্রকাশকেই রুমিনেটিং বলে। রুমিনেটিং মানষিক স্বাস্থ্যের জন্য বিপদ সংকেত বহন করে। ইতিবাচক চিন্তার ক্ষমতাকে ও আবেগ প্রকাশের ধারাকে নষ্ট করে ক্রমশ ডিপ্রেশনের দিকে ঠেলে দেয়। আক্রান্তরা ক্রমশ মানুষের থেকে দূরে সরে যান। মানষিক অবসাদ ও একাকীত্বের যন্ত্রণায় ভোগেন।
রুমিনেটিং এর জন্য কোন কোন কারন দায়ী?
ব্যক্তিবিশেষে কারনের বিভিন্নতা থাকে। তবে, আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন কিছু কমন কারনের ব্যাখা করেছেন।এগুলি হলো-
● নিজের মনে একই কথা বলার ফলে জীবনে চলা সমস্যাগুলির কোন সমাধান পাবেন এই ভ্রান্ত বিশ্বাস।
● মানষিক চাপে থাকা।
● অতীতে ইমোশনাল অথবা সাইকোলজিক্যাল ট্রমার সম্মুখীন হওয়া।
এছাড়াও যাদের স্নায়বিক উত্তেজনা, পারফেক্টনিজম্ জনিত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থাকে, তারাও রুমিনেটিং-এ আক্রান্ত হন। অনেকক্ষেত্রে বিশেষ একটি সম্পর্ককে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিয়ে অন্যদের দূরে ঠেলে দেওয়া এবং সমস্ত কিছু নিঃস্বার্থ ভাবে মেনে নেওয়া বা ত্যাগ করার জন্যও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
রুমিনেটিং থটস্ গুলি চিহ্নিত করুনঃ-
রুমিনেটিং থটস্ সাইকেলে একবার আঁটকা পড়লে তা থেকে মনকে বের করা খুবই কঠিন। তবুও চেষ্টা করুন হতাশা, একাকীত্ব আর অবসাদগ্রস্ত হওয়ার আগেই বেরিয়ে আসার। যেকোন বাহনের স্পিড কম থাকে, চলতে চলতে ক্রমশ সেটি দ্রুততর হয়। সেরকমই এই চিন্তা ভাবনাগুলিও প্রাথমিক পর্বে ধীরে ধীরে উদ্রেক হয়। সেসময়েই এগুলির উপর গুরুত্ব আরোপ করা বন্ধ করুন।
কীভাবে এইধরনের চিন্তা ভাবনা করা বন্ধ করবেন?
যখনই আপনার মনে হবে, আপনি অমূলক বিষয় নিয়ে মনে মনে দুশ্চিন্তা করছেন। তৎক্ষণাৎ অন্য যে কোন কাজের দ্বারা মনকে বিভ্রান্ত করুন।
● বাগান অথবা রুমের মধ্যেই হাঁটাহাঁটি করুন।
● পরিবারের প্রিয় সদস্য অথবা বন্ধুদের সাথে ফোনে কথা বলুন।
● বই পড়ুন।
● সিনেমা দেখুন।
● গান করুন অথবা শুনুন।
● আর্ট অথবা ক্রাফটের কাজ করুন।
একই বিষয়ে বারবার নেতিবাচক চিন্তাভাবনা করার বদলে সমস্যা চিহ্নিত করে সেটির সমাধানের জন্য পরিকল্পনা করুন। পরিকল্পনার প্রতিটি পদক্ষেপ মাথায় গেঁথে নিন অথবা কোথাও লিখে রাখুন। নিজের আশানুরূপ বাস্তবধর্মী সমাধান খুঁজুন। এর ফলে রুমিনেটিং বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি রুমিনেটিং এর জন্য দায়ী চিন্তা ভাবনাগুলিও পুরোপুরি ভাবে মাথা থেকে বেরিয়ে যাবে।পরিকল্পনা অনুযায়ী রুমিনেটিং চিন্তাভাবনা জনিত সমস্যা গুলির সমাধানে ছোট্ট ছোট্ট পদক্ষেপ গ্রহন করে সমস্যাটির সমাধান করে ফেলুন। এর ফলে উক্ত বিষয়টি আর কখনো মানষিক অশান্তির সৃষ্টি করবেনা।
খুব বড়ো কোন ভুল করে ফেললে এবং ট্রমাটিক কোন ঘটনা ঘটে যাওয়ার জন্য নিজেকে দায়ী করার জন্য রুমিনেটিং থটস্ মনে আসে। এসময় পুরো ঘটনাবলি সম্পর্কে পুনরায় চিন্তাভাবনা করুন। এইভাবে নিজের চিন্তাভাবনাগুলিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ফলে আপনি ক্রমশ বুঝতে সক্ষম হবেন, দুশ্চিন্তা উদ্রেককারী ভাবনাগুলির কোন বাস্তবতা নেই। অবাস্তব, অমূলক লক্ষ্য নির্ধারন ও অর্জনে ব্যর্থতা অনেকসময় রুমিনেটিং উদ্রেককারী চিন্তা ভাবনা বাড়িয়ে তোলে। কেন এবং কীভাবে ব্যর্থ হলেন অথবা কী করলে সাফল্য পেতেন সেই দুশ্চিন্তা অবসাদগ্রস্ত করে তোলে। তাই সাফল্য পেতে বাস্তবধর্মী লক্ষ্য নির্ধারন করুন।
আত্মবিশ্বাসের অভাব রুমিনেটিং ও ডিপ্রেশন বৃদ্ধির প্রধান সহায়ক। নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের বৃদ্ধি করুন। প্রয়োজনে সাইকোথেরাপি নিন। নিজের প্রতি যত্ন নিন। যে কাজে আপনি দক্ষ সেই কাজ করুন। ধীরে ধীরে হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবেন এবং রুমিনেটিং এর প্রভাব কমবে।
নেতিবাচক চিন্তাভাবনা বৃদ্ধি পায় যখন আপনি, নিজের অস্তিত্বকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেন। অর্জিত সাফল্যের জন্য নিজের প্রশংসা করুন। ব্যর্থতাগুলো থেকে শিক্ষা নিন কিন্তু ব্যর্থতার জন্য নিজেকে দায়ী করা বন্ধ করুন।
☆ মেডিটেশন মনকে শান্ত ও কন্ট্রোল করার সবচেয়ে ভালো ওষুধ। যখনই আপনার মনে হবে, পুরোনো কথা মনে পড়ছে, তখন সবকিছু বাদ দিয়ে শান্ত ও স্থির হয়ে বসে ব্রিদিং এক্সারসাইজ করুন।
☆ যখনই রুমিনেটিং হবে, তৎক্ষণাৎ সেই সময়, সে জায়গা, সেই দিন, কোন ঘটনা, কী কাজ আপনি করছিলেন, কে সাথে ছিল সমস্ত তথ্য লিখে রাখুন। পরবর্তীকালে সেই সমস্ত কিছু এড়িয়ে চললে রুমিনেটিং ভাবনাগুলি কন্ট্রোল করতে পারবেন।
☆ রুমিনেটিং থটস্ মনে এলে এমন কোন বন্ধুর সাথে কথা বলুন, যে অনান্য ইন্টারেস্টিং বিষয়ে আলোচনা করবে।
☆ যদি আপনার মনে হচ্ছে আপনার রুমিনেটিং থটস্ আপনার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করছে, তাহলে থেরাপির সহায়তা নিন। থেরাপিস্ট রুমিনেটিং চিন্তা গুলি চিহ্নিত করে তার সমাধানে সহায়তা করবেন।
☆ দীর্ঘদিন যাবত এই রুমিনেটিং সমস্যায় ভুগছেন, বুঝতে পারছেন এই সমস্যা আপনার জন্য সমূহ ক্ষতিকর হচ্ছে। পরিপূর্ণ ভাবে এইসব চিন্তা ভাবনা বাদ দিতে চাইলে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনুন। মন ও শরীর ভালো রাখতে—
● শরীরচর্চা করুন
● নিজের যত্ন নিন।
● সমাজকল্যানকর কাজকর্মে যুক্ত হন।
● সুষম আহার গ্রহন করুন।
● পরিবারের সাথে সময় কাটান।
পরিশেষে, নিজের মানষিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য নিজে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন। মন খারাপ করা কারনগুলির উপর গুরুত্ব আরোপ না করে মন ভালো করা কাজকর্ম ও কারনগুলির দিকে দৃষ্টিপাত করুন। অত্যাধিক নেতিবাচক চিন্তা শুধুমাত্র আপনাকে হতাশাগ্রস্তই করবে, সমস্যাগুলিকে চিহ্নিত করে সমাধান খুঁজলে ভালো থাকার খোরাক আপনার হস্তগত হবে। নিজে ভালো থাকুন অনান্যদের ভালো রাখুন।
আপনার পরিবার, এই সমাজ এমনকি পৃথিবীকে ভালো রাখার দায়িত্ব কর্তব্য আপনারই।