ক্র্যাডল ক্যাপ কী ? চিকিৎসকের মুখে নামটা শুনে এই প্রশ্নই করেছিল এক নতুন মা। তার কোলে দেড়মাসের ছোট্ট শিশু। গত কয়েকদিন ধরেই মায়ের নজরে এসেছে তার খুদের মাথার ত্বক মানে তালু খুব খসখসে আর লাল হয়ে আছে। এছাড়াও ত্বকটা কেমন যেন আঁশ-আঁশ হয়ে গিয়েছে । চিকিৎসককে এটা দেখাতেই তিনি বললেন শিশুর ক্র্যাডল ক্যাপ হয়েছে।
ক্র্যাডল ক্যাপ কী ?
ক্র্যাডল ক্যাপ হল শিশুদের মধ্যে একটি সাধারণ ব্যাধি যাকে চিকিৎসাবিদ্যার ভাষায় ইনফ্যান্টাইল সেবোরিক ডার্মাটাইটিস বলা হয়। এটি প্রাথমিকভাবে শিশুর মাথার ত্বকে দেখা যায়, তবে এটি মুখ, পিঠে, শরীরের ওপরের অংশে যেখানে যেখানে শরীরের তেল গ্রন্থি বা সেবেসিয়াস গ্রন্থি রয়েছে এমন যেকোনো স্থানে হতে পারে। আজ আমরা আলোচনা করে নেবো শিশুর শরীরে এই ক্র্যাডল ক্যাপের ব্যাপারে। এই অসুখ কেন হয়, কীভাবেই বা প্রতিকার করা যায় সেই বিষয়েই আজ আলোচনা করব।
ক্র্যাডল ক্যাপ কী কারণে হয় ?
ক্র্যাডল ক্যাপের কারণগুলির মধ্যে রয়েছে আপনার শিশুর মাথার ত্বকে মৃত কোশ, সেখানে জমে থাকা তেল, আভ্যন্তরীণভাবে অতিরিক্ত সক্রিয় তেল গ্রন্থি এবং মায়ের কাছ থেকে পাওয়া হরমোন। কিছু বিশেষজ্ঞ বিশ্বাস করেন যে ইস্ট ইনফেকশন ক্র্যাডল ক্যাপ হওয়ার একটি কারণ হতে পারে, তবে এটি কতোটা সত্য তা এখনো প্রমাণ হয়নি। ক্র্যাডল ক্যাপ কোনো ভাবেই সংক্রমিত রোগ নয় এবং সাধারণত আপনার শিশুর তেলগ্রন্থি এবং হরমোনগুলির নিঃসরণ ঠিক হয়ে গেলে কয়েক মাস পরে এটি নিজের থেকেই সেরে যায়।
ক্র্যাডল ক্যাপের লক্ষণগুলি কী কী ?
সাধারণত, আপনার শিশুর জীবনের প্রথম মাসে ক্র্যাডল ক্যাপ শুরু হয়, যখন শিশুর বয়স প্রায় ৬ সপ্তাহ হয়। ক্র্যাডল ক্যাপ কোনও অস্বস্তি, ব্যথা বা চুলকানির কারণে হয় না এবং এটি ক্ষতিকারক নয়, তবে বেশিরভাগ মানুষ শিশুর মাথার ত্বকে এর উপস্থিতি অপছন্দ করে। আপনার শিশুর আলোচিত লক্ষণ বা উপসর্গগুলির মধ্যে যেকোনো একটি থাকতে পারে: মাথায় লাল দাগ, সাদা বা হলুদ আঁশ জাতীয় ত্বক অথবা পুরু, খসখসে ত্বক।
শিশুর হাতে এবং পায়ে কী ক্র্যাডল ক্যাপ হতে পারে ?
ক্র্যাডল ক্যাপ আপনার শিশুর শরীরের অন্যান্য অংশেও হতে পারে, সম্ভবত হাত ও পায়ের চামড়ার ভাঁজে। এর মানে এই নয় যে ফুসকুড়ি ছড়িয়ে পড়ছে; এটা শুধু বিভিন্ন এলাকায় হচ্ছে। যদি এটি হয়, তাহলে আপনার শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে একবার পরামর্শ করুন।
কীভাবে ক্র্যাডল ক্যাপ থেকে মুক্তি পাবেন ?
ক্র্যাডল ক্যাপ প্রতিরোধের জন্য কোন নির্দিষ্ট পদ্ধতি নেই। ক্র্যাডল ক্যাপ কমানোর একটি ভালো উপায় হল আপনার শিশুকে শ্যাম্পু করানো । ভালো করে শিশুর স্নান এর প্রতি নজর দিতে হবে । শিশুরা জীবনের প্রথম বছরে ত্বকের বিভিন্ন ধরণের অবস্থার সম্মুখীন হয় এবং ক্র্যাডল ক্যাপ সাধারণত ৬ মাসের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে যায়। ক্র্যাডল ক্যাপ সাধারণত নিজে থেকেই চলে যায় কিন্তু আপনি যদি এই সমস্যাকে এক্কেবারে কমিয়ে ফেলতে চান, তাহলে আপনার শিশুর মাথা ঘন ঘন হাইপোঅ্যালার্জেনিক শ্যাম্পু দিয়ে গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তারপরে মাথার ত্বক থেকে শুষ্কতা কাটানোর জন্য একটি নরম ব্রাশ ব্যবহার করুন। প্রতিবার শ্যাম্পু করলে এবং ব্রাশ করলে তাদের মাথা থেকে ফ্লেক্স সরিয়ে দেবে।
তেল দিয়ে ক্র্যাডল ক্যাপ কীভাবে কমাবেন?
শিশুর স্নানের আগে, আপনার হাতের তালুতে বেবি অয়েল যেমন নারকেল তেল এবং অলিভ অয়েল নিন এবং তার মাথা এবং আশেপাশের এলাকায় আলতো করে ম্যাসাজ করুন। খুব বেশি তেল ব্যবহার করবেন না। এটিকে ১০ মিনিটের জন্য থাকতে দিন, এটি ত্বকের শুষ্কতা রোধ করে। তারপরে স্নানের সময়, নরম ব্রাশ ব্যবহার করে নরম ফ্লেক্সগুলিকে আলতো করে মুছে ফেলুন। আপনার শিশুর মাথা সাবান এবং জল দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। যদি আপনার শিশুর বেশি চুল না থাকে, তাহলে আর্দ্রতা আটকাতে ভেসলিন ব্যবহার করুন। ক্র্যাডল ক্যাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে আপনাকে সপ্তাহে কয়েকবার এটি করতে হতে পারে।