আমরা অনেকেই ভাবি যে , সদ্যোজাত শিশুদের ঘুম পাড়ানো খুব কঠিন একটি বিষয়। তার জন্য আমরা অনেক রকম চেষ্টাও করে থাকি, কিন্তু শিশুরা কিছুতেই ঘুমায় না। আসলে বাচ্চাদের ঘুমের সময় বাবা-মায়েরা খুব সাধারণ কিছু ভুল করে থাকেন। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে বেশ কিছু সমস্যা এড়িয়ে চলা উচিৎ।
শিশুদের ঘুম পাড়ানোর সহজ উপায়গুলি হল :-
১) শিশুদের বেডটাইম রুটিন তৈরী করা :- বেশিরভাগ লোকেরই ঘুমানোর আগে কিছু সময় প্রয়োজন। বলা বাহুল্য, শিশুরাও এর থেকে আলাদা নয়। তবে, সকলের জেনে রাখা দরকার, একটি সঠিক বেডটাইম রুটিন আপনার ছোট্ট শিশুটিকে শুধু ঘুমোতেই সাহায্য করবে না এটি আপনি এবং আপনার শিশুর মধ্যে একটি সুন্দর বন্ডিং তৈরী করবে। শিশুর বেডটাইম রুটিন কীভাবে তৈরী করবেন সেই নিয়ে অনেকের চিন্তা থাকে। শিশুটিকে ঘুম পাড়ানোর অন্তত এক ঘন্টা আগে থেকে একটি রুটিন তৈরী করা উচিৎ। এর জন্য প্রথমেই ঘরটিকে অন্ধকার করা প্রয়োজন। শুধু তাই নয়, তাকে ভালো করে পেট ভরিয়ে খাবার খাওয়ান এবং সব শেষে গল্প শোনানোর জন্য একটি গল্প প্রস্তুত করুন। অনেক সময় হালকা গরম জলে স্নান আপনার ছোট্টটিকে শান্ত করতে সাহায্য করতে পারে ৷ এছাড়াও আপনি যা করতে পারেন তা হলো, আপনার শিশুটিকে একটি গল্প পড়ে শোনান এবং তারপর তাকে কোলে করে নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে খাবার খাওয়ান। তারপর একবার শিশুর কাজ শেষ হয়ে গেলে , তাকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করুন এবং ধীরে ধীরে তাকে বিছানায় শুইয়ে দিন।
২) শিশুর ঘুমের সংকেত উপেক্ষা করবেন না:- দ্য স্লিপ লেডি’স গুড নাইট, স্লিপ টাইট-এর লেখক কিম ওয়েস্ট বলেছেন, শিশুরা তাদের নানা রকম অঙ্গ ভঙ্গির মাধ্যম বোঝানোর চেষ্টা করে যে তারা ক্লান্ত হয়ে পড়ছে এবং তাদের ঘুম পেয়েছে । এর মধ্যে কী কী লক্ষণ পড়ে ? এই লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে চোখ ঘষা , হাঁচি দেওয়া, হঠাৎ করে শান্ত হয়ে যাওয়া, বা কান্নাকাটি করা এবং খেলার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলা । তাই সারাদিন আপনার ছোট্টটির উপর নজর রাখুন এবং প্রতি রাতে যখন আপনি ঘুমাতে যাবেন তখন এগুলি একটু বোঝানোর চেষ্টা করুন। পাশাপাশি আপনার শিশুটি যদি অতিরিক্ত চঞ্চল হয়, তাহলে তাদের খেলার জায়গা থেকে সরিয়ে একটি শান্ত জায়গায় নিয়ে যান এবং তাদের ঘুম পাড়ানোর জন্য একটু বেশি সময় ব্যয় করার চেষ্টা করুন।
৩) ঘুমের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরী করুন:- শিশুকে দোলনায় দোলানো, নার্সিং করানো, হাঁটানো, গান গাওয়া, তাদের পিঠে হাত বোলানো ইত্যাদি ঘুমের জন্য সহায়ক পরিবেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত থাকে। আপনার শিশুর ৩ বা ৪ মাস পেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে এই সাধারণ অভ্যাসগুলি ঘুমের সহায়িকা বা সাহায্যকারী হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ এর মানে হল যে আপনার শিশু প্রতিদিন রাতে জেগে উঠলেই তার জন্য সবাইকে সারা রাত ধরে বেশ কয়েকবার জেগে থাকতে হবে—তারপরে তাকে দোলনায় দোলাতে, নার্সিং করতে বা আপনাকে ঘুম পাড়ানোর জন্য গান গাইতে হবে। মূল বিষয় হল আপনার কাজ শিশুকে ঘুমের ঘোরে বিছানায় শুইয়ে রাখা উচিত, যাতে তারা প্রতিবার জেগে ওঠার পর খেলতে খেলতে ক্লান্ত হয়ে গিয়ে আবার নিজেরাই ঘুমাতে শেখে।
৪) আপনি যেখানেই আছেন সেখানেই তাদের ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করুন:- কেউই তাদের সন্তানের ঘুমের সময় সূচীতে বা বেডটাইম রুটিনে বন্দী করে রাখতে চায় না। তবে সহজ সত্য হল যে শিশুরা স্ট্রলারে, গাড়ির সিট বা উঁচু চেয়ারে ঘুমালে আপনার শিশু তার প্রয়োজনীয় ঘুম ঘুমাতে পারে না। শিশুর ভালো ঘুমের অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য, আপনার উচিৎ শিশুর পরিচিত জায়গায় তাকে ঘুম পাড়ানো।
৫) তাদের রাত অবধি জাগিয়ে রাখা:- চিকিৎসকরা বলেছেন, “শিশুদের বডি ক্লক সাধারণত প্রতিদিন সকালে একই সময়ে ঘুম থেকে উঠতে সাহায্য করে, তারা রাতে যে সময়েই ঘুমাতে যায় না কেন। সুতরাং বাবা-মায়েরা যারা তাদের সন্তানকে দেরী করে ঘুম পাড়ান তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, শিশুটি পরের দিন অতিরিক্ত ক্লান্ত আছে”। পরিবর্তে, আপনার শিশু প্রতি রাতে তার প্রয়োজনীয় ১০ থেকে ১১ ঘন্টা ঘুমায় তাহলে সে নিশ্চিত একটি সুস্থ ও প্রাণবন্ত জীবন লাভ করে এবং সব সময় হাসিখুশি থাকে। তবে, মনে রাখবেন যদি আপনার ছোট্ট খুদেটি খুব তাড়াতাড়ি (সকাল ৬টার আগে) ঘুম থেকে উঠছে তবে এটি সম্ভবত তার ঘুম সম্পূর্ণ হচ্ছে না। এর ফলে পরে শিশুরা খিটখিটে হয়ে যায়।