ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আপনি কী কখনও ঘুমে ঢুলে পড়েছেন ? অথবা আপনি হয়ত ভাবছেন যে ঘুম থেকে ওঠার সময় হয়েছে কিন্তু ঘুম থেকে উঠে দেখছেন যে রাত ২ টো বাজছে? এইরকম যদি চলতে থাকে তাহলে বিপদ বাড়বে বৈ কমবে না। সেক্ষেত্রে আপনাকে মেনে নিতেই হবে যে আপনার আরও ভাল ঘুমের প্রয়োজন। তবে শুধু ঘুমোলেই হবে না, তার জন্য ঘুমের আগে কয়েকটি নিয়মকানুনও মেনে চলা দরকার। শুধু তাই নয়, কীভাবে আপনার রোজকার জীবনের অভ্যাসগুলি আপনার পর্যাপ্ত ঘুমের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াতে, সেই বিষয়েও সম্পর্কে অবগত হওয়া দরকার ৷ ভালো ঘুমের জন্য সঠিক নিয়মকানুন কী কী এবং ঘুমের সময় ও শোওয়ার অভ্যাসে কী কী পরিবর্তন আনা দরকার।
ভালো ঘুমের জন্য বেশ কয়েকটি নিয়মকানুন খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ আপনার মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি আপনার জীবনের সামগ্রিক মানের জন্য ভালো ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কতটা ভাল ঘুমান সেটার উপরেই আপনার দিনের বেলার আচরণ নির্ভর করে। তবে এই প্রসঙ্গে বলে রাখা দরকার, আপনার রোজকার খাবার, পানীয়, দিনলিপি, সন্ধ্যার কাজকর্ম, এবং সারাদিনের ক্রিয়াকলাপ সবই আপনার ঘুমের উপর প্রভাব ফেলে ৷
ভালো ঘুমের সহজ টিপসগুলি হল :-
1. নিয়মিত ঘুমের সময়সূচী তৈরী করুন : প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়ার চেষ্টা করুন এবং প্রতিদিন প্রায় একই সময়ে জেগে উঠুন – এমনকি সপ্তাহান্তেও এটি করুন। এটি আপনার শরীরের ঘুমের সাইকেলটাকে ঠিক রাখতে সাহায্য করবে। একটি নির্দিষ্ট সময়সূচী প্রতিদিন মেনে চললে দিনের বেলাতেও ঘুমের ইচ্ছাটা আসতে আসতে কমতে শুরু করবে। তবে, এটাও আপনার মাথায় রাখা দরকার যে, প্রতি রাতে 7 থেকে 8 ঘন্টা ঘুমের দরকার।
2. বিছানায় যাওয়ার আগে মানসিক চাপ কম করুন : আপনি যে বিষয়ে চিন্তিত সেই বিষয়ে চিন্তা করা আপনাকে রাতে জাগিয়ে রাখতে পারে। বিছানায় যাওয়ার আগে আপনার উদ্বেগ মাথা থেকে বের করে আনার জন্য খাতায় লিখুন। যদি আপনার রোজকার কার্যকলাপ আপনাকে মানসিক চাপ দেয় তবে তাও লিখুন। আগামীকাল এবং সপ্তাহের বাকি সময় আপনার যা করতে হবে সেটাকে আগে লিখুন। তারপর মস্তিষ্ককে শান্ত করার চেষ্টা করুন। আপনার মন শান্ত করতে সাহায্য করার জন্য বিছানার আগে ধ্যান করার চেষ্টা করুন।
3. আপনার ঘুমের পরিবেশ ঠিক করুন : একটি শীতল, অন্ধকার, শান্ত ঘর আপনাকে খুব সহজে ঘুমিয়ে পড়তে সাহায্য করতে পারে। বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই, 60°F এবং 67°F (15.6°C এবং 19.4°C) এর মধ্যে থাকা বেডরুমের তাপমাত্রা ঘুমানোর জন্য সর্বোত্তম তাপমাত্রা।আপনার কাছে কী ধরণের গদি, বালিশ এবং বিছানার চাদর রয়েছে তা নিশ্চিত করাও গুরুত্বপূর্ণ।আপনি যত বেশি আরামদায়ক হবেন, ঘুমিয়ে পড়া এবং ঘুমিয়ে থাকা সহজ হবে৷ আপনার ঘুম যদি খুবই পাতলা হয় বা কোলাহলপূর্ণ প্রতিবেশী থাকে তবে একটি ভাল ইয়ারপ্লাগ আপনাকে ঘুমাতে সহায়তা করতে পারে। এছাড়াও, যদি আপনার বেডরুমটি অত্যধিক আলোয় পরিপূর্ণ হয়, আপনি আপনার ঘরের পরিবেশকে যতটা সম্ভব অন্ধকার রাখতে ব্ল্যাক পর্দা বা চোখের মাস্ক ব্যবহার করার কথা বিবেচনা করতে পারেন।
4. আপনি ক্লান্ত হলেই বিছানায় যান : দীর্ঘক্ষণ বিছানায় শুয়ে থাকা এড়িয়ে চলুন। পরিবর্তে, ক্লান্ত বোধ না হওয়া পর্যন্ত হালকা কার্যকলাপ করার চেষ্টা করুন, তারপরে বিছানায় যান। বিছানায় যাওয়ার 20 মিনিটের মধ্যে যদি আপনার ঘুম না আসে তবে উঠুন। ঘুমাতে না পারার কারণে আপনি হতাশ হতে পারেন, যা আপনাকে আরও বেশি সময় জাগিয়ে রাখবে। একবার আপনি বিছানা থেকে উঠে বসলে, আপনার মনকে শান্ত করতে সাহায্য করার জন্য কিছু করুন যতক্ষণ না আপনি বিছানায় ফিরে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট ক্লান্ত হয়ে পড়েন। যেমন সোফায় পড়া, হালকা গান শোনার মত কাজ করতে পারেন ।
5. নিয়মিত ব্যায়াম করুন : প্রতিদিন 30 মিনিটের মতো অ্যারোবিক ব্যায়াম আপনার ঘুমের মান উন্নত করতে পারে, সেইসাথে আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যও।আপনি যদি বাইরে ব্যায়াম করতে পারেন, তবে এটি আরও বেশি লাভদায়ক হবে। সেক্ষেত্রে প্রাকৃতিক আলোর এক্সপোজার আপনার ঘুমের চক্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। তবে আপনি যদি বাইরে যেতে না পারেন তবে চিন্তা করবেন না।এমনকি নিয়মিত ঘরের মধ্যে করা ব্যায়ামও আপনাকে ভাল ঘুমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে, আপনার শোওয়ার এক বা দুই ঘন্টা আগে ব্যায়াম করা এড়িয়ে চলুন। এটি আপনার শরীরের তাপমাত্রা বাড়াতে পারে। ফলে ঘুমিয়ে পড়া কঠিন হয়ে যেতে পারে।
এইসব টিপসগুলো অনুসরণ করে আমি গাঢ় ঘুমের অধিকারী হতে পারেন যা আপনার দেহ এবং মনকে আগামী দিনের বিভিন্ন কার্যকলাপের জন্য সর্বদা শক্তিতে ভরিয়ে তুলবে। এছাড়াও, আপনার বন্ধু বান্ধব পরিবার এবং প্রিয়জনদের যাতে করে ঘুমের কোন ব্যাঘাত না ঘটে এবং তারা যেন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয় তার জন্য এই টিপসগুলি তাদের সাথে শেয়ার করুন৷