Anxiety বা উদ্বেগ কাকে বলে ?
মানসিক চাপের সামনে আমাদের শরীরের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াকে উদ্বেগ বলা হয়। উদ্বেগ যেটিকে কিছু ক্ষেত্রে ভয় বা দুশ্চিন্তাও বলা যায়, তার পেছনে অনেক কারণ থাকে। একটু দেখে নেওয়া যাক কারণগুলি কি রকম। বিশেষজ্ঞদের মতে, বংশগত (জেনেটিক), পরিবেশগত এবং মস্তিষ্কের নিজস্ব রসায়ন সব কিছু মিলেমিশে উদ্বেগের সৃষ্টি।
উদ্বেগের লক্ষণগুলি হল :
১. হার্টের গতি বেড়ে যাওয়া ।
২. দ্রুত নিশ্বাসপ্রশ্বাস ।
৩. অস্থিরতা ।
৪. মনোসংযোগ করতে না পারা ।
মনে রাখতে হবে যে একেকজনের শরীরে উদ্বেগের একেক রকম লক্ষণ দেখা দেয়। কারো কারো অসম্ভব ভয় লাগে আবার কারো কারো প্যানিক অ্যাটাক হয়, তাঁরা দুঃস্বপ্ন দেখেন অথবা কোনও দুঃখজনক চিন্তা তাঁদের মনে ঘুরেফিরে আসতে শুরু করে। এখানে বলা দরকার যে প্রতিদিনকার উদ্বেগ এবং উদ্বেগজনিত শারীরিক সমস্যার (Anxiety Disorder) মধ্যে পার্থক্য আছে। নিত্য নৈমিত্তিক জীবনে নতুন কোনও ব্যাপার নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া বা মানসিক চাপে থাকা এক ব্যাপার। কিন্তু উদ্বেগ অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেলে বা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে আমাদের জীবনের স্বাভাবিক ছন্দের পতন হয়। উদ্বেগ সেই পর্যায়ে পৌঁছে গেলে সমস্যা হয়ে ওঠে। তখন উদ্বেগ মোকাবিলার জন্য তৎপর হতে হবে।
উদ্বেগ জনিত কিছু সমস্যা :
i. প্যানিক ডিজঅর্ডার বা ভয় পেয়ে অসঙ্গত আচরণ ।
ii. ট্রমা পরবর্তী মানসিক চাপ জনিত সমস্যা বা Post-Traumatic Stress Disorder (PTSD) যা দেখা দিলে ভয়াবহ কোনও অভিজ্ঞতার পর মানুষ স্বাভাবিক হতে পারে না।
iii. ঘুরেফিরে একই ধরণের চিন্তা ও আচরণ অথবা Obsessive Compulsive Disorder(OCD) যা দেখা দিলে মানুষ অবাঞ্ছিত চিন্তা ও ধ্যানধারণার বশবর্তী হয়ে পড়ে।
iv. প্রিয়জনের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার উদ্বেগ বা শিশুদের মনে বাবা-মায়েদের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া বিষয়ক উদ্বেগ, যাকে বলে Separation Anxiety ।
v. গুরুতর অসুখ হয়েছে যা নির্ণয় করা যাচ্ছে না এই ধরণের উদ্বেগ বা Illness anxiety ।
vi. কোনও ব্যাপারে ব্যাখ্যাতীত মারাত্মক ভয় বা ঘৃণা যাকে বলা হয় Phobia ।
vii. যে কোনও বিষয়ে মারাত্মক উদ্বেগ যা প্রতি দিনকার জীবনকে প্রভাবিত করে বা Generalised Anxiety Disorder(GAD) ।
viii. সামাজিক মেলামেশা সম্পর্কে উদ্বেগ বা Social Anxiety Disorder ।
উদ্বেগের চিকিৎসা
একাধিক উপায়ে চিকিৎসা করে উদ্বেগ সারিয়ে দেওয়া যায়। সচরাচর Cognitive Behavioural Therapy (CBT) নামের পদ্ধতিতে উদ্বেগের চিকিৎসা হয়। এই থেরাপির সাহায্য নেওয়া মানুষজনকে উদ্বেগ হওয়ার সময় মোকাবিলা করার জন্য কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়া অবসাদ নিরোধক এবং সিডেটিভ বা স্নায়ু শান্ত করার ওষুধ দিয়েও উদ্বেগের চিকিৎসা হয়। এই সব ওষুধ মস্তিষ্কের রসায়নে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে এবং উদ্বেগের আগ্রাসন আটকে দেয়। এই সব ওষুধ প্রয়োগ করা হলে অনেক সময় উদ্বেগের চূড়ান্ত লক্ষণগুলিও মিলিয়ে যায়।
এসবের পরেও বলা যায়, যিনি উদ্বেগে ভুগছেন তিনি যদি স্বাভাবিকভাবে এই সমস্যা থেকে রেহাই চান সে পথও খোলা। অভ্যাসে কিছু পরিবর্তন যেমন ব্যায়াম করা, ঘুম ও ডায়েটের বদল এনে উদ্বেগের মোকাবিলা করা যায়। এ ছাড়া অ্যারোমাথেরাাপি অথবা ধ্যান প্রভৃতি নতুন উপায়ও কাজে আসতে পারে। আপনার লাইফস্টাইল অনুযায়ী আপনাকে যে ভাবেই চলতে হোক না কেন, প্রতিটি ব্যক্তির জন্যই উদ্বেগ থেকে মুক্তি পাওয়ার স্বাভাবিক পথ খোলা রয়েছে।
উদ্বেগ থেকে মুক্তি পাওয়ার দশটি সহজ উপায়:
১.ব্যায়াম করুন, সক্রিয় থাকুন। নিয়মিত ব্যায়াম শুধু শারীরিক স্বাস্থ্যের বিষয় নয়। কসরতের ফলে মনও ভালো থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে যে সব ব্যক্তি উদ্বেগজনিত শারীরিক সমস্যায় কষ্ট পান তাঁরা শারীরিক কসরত বাড়িয়ে দেওয়ার পরে আর আগের মতো অত উদ্বেগে ভুগছেন না। এই ব্যাপারটির অনেক কারণ থাকতে পারে। একটি সম্ভাব্য কারণ এই রকম। যে ব্যাপার উদ্বেগ ঘটায় ব্যায়াম করার সময় সেটির থেকে মনোযোগ সরে যায়। এ ছাড়া ব্যায়াম করলে হৃৎপিন্ডের গতি বেড়ে যায় ফলে উদ্বেগ নির্মূলকারী কয়েকটি নিউরোকেমিকালের ক্ষরণ বেড়ে যায়। এই সব নিউরোকেমিকালের মধ্যে রয়েছে সেরোটোনিন, গামা-অ্যামাইনোবুটিরিক অ্যাসিড (GABA / গাবা), ব্রেন ডিরাইভ্ড নিউরোট্রোফিক ফ্যাক্টর ( BDNF) এবং এন্ডোকানাবিনয়েডস।
অ্যামেরিকান সাইকোলজিকাল অ্যাসোসিয়েশন (APA) জানাচ্ছে, নিয়মিত ব্যায়াম মনোসংযোগ করার ক্ষমতা বাড়ায় ও ইচ্ছাশক্তিকে প্রবল করে তোলে। কি ধরণের ব্যায়াম করতে হবে সেটা ব্যক্তি নিজে বেছে নেবেন। কেউ হার্টের গতি বাড়াতে চাইলে হাই ইনটেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিং বা HIIT ধাঁচের ব্যায়াম বা দৌড়নো বেছে নেবেন। অন্য দিকে কেউ যদি হাল্কা ব্যায়াম দিয়ে নিয়মিত কসরত শুরু করতে চান, তাহলে Pilates (পিলাটেস) এবং যোগব্যায়াম আদর্শ।
২. মদ্যপান বন্ধ করতে হবে যদিও এটি সোজা নয়। প্রথম দিকে কাজটা কষ্টকর বলে মনে হবে কারণ মদ্যপান করলে স্বাভাবিকভাবে ঘুম আসে। তবে গবেষণা বলছে যে উদ্বেগের সঙ্গে মদ্যপানের একটা সম্পর্ক রয়েছে। উদ্বেগজনিত কষ্ট এবং অ্যালকোহল ইউজ ডিজঅর্ডার (AUD) পাশাপাশি লক্ষ্য করা যায়। ২০১৭ সালের একটি সমীক্ষা থেকে জানা গেছে যে মদ্যপান কমালে উদ্বেগ এবং অবসাদও কমতে শুরু করে। মনে রাখতে হবে যে অতিরিক্ত সুরাপান সেই সব নিউরোট্রান্সমিটারগুলির ভারসাম্যে তারতম্য ঘটায় যেগুলি মন ভালো রাখার কাজ করে। এগুলির ভারসাম্যে পরিবর্তনের জেরে উদ্বেগের কয়েকটি উপসর্গ সৃষ্টি হয়। মদ্যপান ছেড়ে দেওয়ার পরপর উদ্বেগ বেড়ে যেতে পারে কিন্তু শেষ পর্যন্ত অনেক কমে যায়। তাছাড়া নিয়মিত মদ্যপান করলে স্বাভাবিকভাবে ঘুম আসতে চায় না। অন্য দিকে রাতে ভালো ঘুম না হলে উদ্বেগ বেড়ে যায়।
৩.ধূমপান বর্জন করুন। ধূমপায়ীরা চাপের মুখোমুখি হলে বিড়ি সিগারেট খেতে শুরু করেন। কিন্তু এর ফল ভালো হয় না। ধূমপান সাময়িকভাবে উদ্বেগ কমালেও এই অভ্যাস আসলে উদ্বেগ বাড়িয়ে দেয়। গবেষণা আরো বলছে, যিনি যত কম বয়সে ধূমপান শুরু করেন তাঁর বেশি বয়সে উদ্বেগে ভোগার আশঙ্কাও তত বেশি। সিগারেটের মধ্যে নিকোটিন ও অন্যান্য কেমিকাল মস্তিষ্কে এমন পরিবর্তন আনে যার ফলে উদ্বেগ বেড়ে যায়। ধূমপান ছাড়ার সময় কয়েকটি নিরাপদ বিকল্পের সুপারিশ করা হয়। এরকমই একটি বিকল্প হল টুথপিক। তাছাড়া ধূমপান ছেড়ে দিতে চাইলে আপনার উচিৎ এমন এমন অভ্যাস গড়ে তোলা যেগুলো ধোঁয়া বিবর্জিত জীবনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করবে। এছাড়া একটি Support System তৈরি করা যায় যেটি শুধু যে ধূমপান ছাড়তে উৎসাহ দেবে তা নয়। সেই সঙ্গে বিড়ি সিগারেটের আকর্ষণ থেকেও আপনার দৃষ্টি সরিয়ে আনবে।
৪.ক্যাফিন বর্জন করুন বা পরিমিত নিন। যাঁরা দীর্ঘ দিন উদ্বেগজনিত অসুবিধায় ভুগছেন, ক্যাফিন তাঁদের জন্য ভালো নয়। শরীরে ক্যাফিন ঢুকলে ভয় পাওয়ার অনুভূতি হয় এবং অস্থির অস্থির লাগে। এ দুটোই উদ্বেগ বাড়িয়ে দিতে পারে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যাফিন উদ্বেগজনিত দৈহিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে বা ইতিমধ্যে উদ্বেগ হয়ে থাকলে তা বাড়িয়ে দিতে পারে। অ্যালকোহলের মতো ক্যাফিনও উদ্বেগের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। তার কারণ ক্যাফিনও মস্তিষ্কের নিজস্ব রসায়নে পরিবর্তন ঘটাতে পারে। ২০০৮ সালের একটি সমীক্ষা দেখাচ্ছে যে ক্যাফিন মাথার মধ্যে অ্যাডেনোসাইন নামের এমন একটি রাসায়নিকের গতিপথ রোধ করে যা দেহকে ক্লান্ত হওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া এবং একই সঙ্গে অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণ বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য দায়ী। এই রাসায়নিকের গতি রুদ্ধ হওয়ার ফলে মস্তিষ্ক সতর্ক হয়ে ওঠে যা উদ্বেগের জন্য ভালো নয়। এত কিছুর পরেও বলা যায় যে সীমিত পরিমাণ ক্যাফিন বেশিরভাগ মানুষের জন্য ভালো। কেউ ক্যাফিন (কফি) পুরো ছাড়তে বা অনেকটা কমিয়ে দিতে চাইলে কাজটা করতে হবে আস্তে আস্তে। কেউ প্রতি দিন যত কাপ কফি পান করেন তার সংখ্যা ক্রমে ক্রমে কমিয়ে দিতে হবে। ক্যাফিনযুক্ত যে কোনও পানীয়র বদলে জল পান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এর ফলে শুধু তরল পদার্থর জন্য দেহের তৃষ্ণা মিটবে তা নয়। শরীরে জমে থাকা ক্যাফিন বেরিয়ে যেতেও সুবিধা হবে এবং আপনার শরীরে জলের মাত্রা ঠিকঠাক থাকবে।
৫.রাতে ঠিকমতো বিশ্রাম নিতেই হবে। রাতের নিদ্রাকে অবহেলা করবেন না। ২০১২ সালের একটি সমীক্ষা বলছে, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষজনের প্রায় এক তৃতীয়াংশ রাতে ছয় ঘন্টার কম ঘুমোন। প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে সাত থেকে ৯ ঘন্টা ঘুম হওয়া দরকার। না হলে উদ্বেগ দেহে-মনে বাসা বাঁধতে পারে। রাতে ঘুম নিশ্চিত করার জন্য কতকগুলি ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে। দিনের অন্যান্য সময়ে না ঘুমনোর অভ্যাস করলে রাতে সহজে ঘুম আসবে। রাতে ঘুমনোর আগে বিছানায় শুয়ে শুয়ে টিভি দেখা, মোবাইল ফোন, ট্যাব বা ল্যাপটপ ব্যবহার করা উচিৎ নয়। বিছানায় বেশি এ পাশ ও পাশ না করে স্থির হয়ে শুয়ে থাকলে ঘুমিয়ে পড়তে সুবিধা হয়। রাতে ঘুমনোর জন্য শুয়ে পড়ার পরে নিদ্রা না এলে এ ঘর ও ঘর যাওয়া ঠিক না। শোয়ার আগে কফি বা যে কোনও কড়া পানীয়, ভারী খাওয়াদাওয়া এবং ধূমপান চলবে না। শোয়ার ঘরটা যেন অন্ধকার ও ঠান্ডা থাকে। এসব ছাড়াও ঘুমোতে যাওয়ার আগে একটা কাগজে নিজের দুশ্চিন্তাগুলো লিখে ফেলুন। এই অভ্যাস ঘুম আনতে সাহায্য করে। প্রতি রাতে নির্দিষ্ট একটি সময়ে শুতে গেলে ভালো।
৬.ধ্যান করুন। Mindful Meditation এর উপর গুরুত্ব দিতে হবে। ধ্যানের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হল নিজের বর্তমান মুহূর্তটি সম্পর্কে পুরোপুরি সচেতন হয়ে ওঠা। সেই সচেতনতার মধ্যেই রয়েছে সমালোচনার মানসিকতা বাদ দিয়ে নিজের সমস্ত চিন্তাভাবনাগুলো সম্পর্কে অবহিত হওয়া। এর ফলে মানুষ শান্ত ও সন্তুষ্ট হয়ে ওঠে কারণ এই অভ্যাস নিজের সমস্ত চিন্তা ও অনুভূতিকে সযত্নে মেনে নিতে শেখায়। ধ্যান করলে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমে যায়। আমেরিকার জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা জানাচ্ছে, প্রতি দিন তিরিশ মিনিট ধ্যান করলে উদ্বেগের লক্ষণগুলি প্রশমিত হয় এবং অবসাদ কমে। পদ্মাসনে বসে চোখ বন্ধ করে গভীর শ্বাস নিয়ে নিজের প্রিয় বিষয়ে চিন্তা করা, মোটের ওপর এই হল ধ্যান। নিজে করতে না পারলে সাইকিয়াট্রিস্ট অথবা ধ্যান প্রশিক্ষকদের সাহায্য নেওয়া উচিৎ।
৭.সুষম খাদ্যাভ্যাস জরুরি। ডায়েট মেনে চলুন। সুষম ডায়েট রক্তে চিনির মাত্রা কমে যাওয়া, ডিহাইড্রেশন (জল কমে যাওয়া) এবং প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের রাসায়নিকগুলি ( কৃত্রিম ঘ্রাণ, রঙ এবং প্রিজারভেটিভ) কারো কারো মনমেজাজে পরিবর্তন সৃষ্টি করে। খাদ্যে চিনির পরিমাণ অতিরিক্ত বেশি হলে ব্যক্তির স্বভাবও প্রভাবিত হয়। খাওয়াদাওয়ার পর অনেকের উদ্বেগ বাড়তে শুরু করে। সে ক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাস নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। খেয়াল রাখুন, শরীরে জলের মাত্রা যেন ঠিক থাকে, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য এড়িয়ে চলুন এবং সুষম ডায়েট গ্রহণ করুন যার মধ্যে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট, ফল, সব্জি এবং লিন প্রোটিন থাকবে।
৮.গভীর শ্বাস নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। অতিরিক্ত উদ্বেগ নি:শ্বাসকে হাল্কা করে তোলে। হাল্কা শ্বাস নিলে হার্টের গতি বেড়ে যেতে পারে এবং মাথা ঘোরা, মাথা ভোঁ ভোঁ করা অথবা প্যানিক অ্যাটাকের মতো উপসর্গও দেখা দিতে পারে। দীর্ঘ শ্বসন ব্যায়াম হল জেনেবুঝে ধীর গতিতে গভীর শ্বাস নেওয়ার উপায়। এর ফলে নিশ্বাসপ্রশ্বাস ক্রমশ স্বাভাবিক হয়ে ওঠে এবং উদ্বেগ কমে যায়।
৯.অ্যারোমাথেরাপি প্রয়োগ করা যেতে পারে। উদ্বেগ কমাতে বিভিন্ন aroma অর্থাৎ ঘ্রাণের ব্যবহার কয়েক হাজার বছর ধরে চলে আসছে। সামগ্রিক চিকিৎসা প্রণালীর অঙ্গ এই পদ্ধতি। অ্যারোমাথেরাপি করার সময় গন্ধ শোঁকা ও ত্বকের শোষণ ক্ষমতাকে কাজে লাগানো হয়। এই থেরাপি করার সময় বিভিন্ন উদ্ভিদ ও ভেষজের নির্যাস কাজে লাগে। এই সব উদ্ভিদের ঘ্রাণ ও নির্যাস থেকে তৈরি এসেনশিয়াল অয়েল বা অপরিহার্য তেল শরীর ও মনের স্বাস্থ্য ভালো করতে কাজে লাগানো হয়। ল্যাভেন্ডার, পেপারমিন্ট, রোজমেরি, তুলসী, লেমন গ্রাস, বার্গামট, আঙুর প্রভৃতি উদ্ভিদের ঘ্রাণ কাজে লাগিয়ে প্রচলিত এই থেরাপির উদ্দেশ্য হল, শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানো ও মন ভালো রাখা। অ্যারোমাথেরাপির উপকরণগুলি থেকে সরাসরি ঘ্রাণ নেওয়া যায় অথবা গরম জল বা ডিফিউজারের মাধ্যমে গ্রহণ করা যায়। মনে রাখতে হবে, কখনও কখনও বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধি ছড়ানোর যন্ত্র এবং ইনহেলারের মাধ্যমেও নাকে বিশেষ গন্ধ পৌঁছে দেওয়া হয়। কখনও স্নান করার বিশেষ ধরনের নুন, সাবান ও তেল ব্যবহার করে ত্বকে মাখানো হয় বিভিন্ন উপাদান। প্রয়োজন অনুসারে মালিশ করা বা ভাপ দেওয়ার মতো পদ্ধতিও কাজে লাগানো হয়। নির্দিষ্ট ধরনের কাদামাটি দ্বারা তৈরি মুখোশও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অ্যারোমাথেরাপি করলে শরীর ও মন বিশ্রাম পায়, সহজে ঘুম আসে এবং মনমেজাজ ভালো হয়ে যায়। হার্টের গতি ও রক্তচাপ কমাতেও কাজে আসে এই পদ্ধতি।
১০.ক্যামোমাইল চা পান করুন। ক্যামোমাইল (বাবুনা) ফুল ডেইজি ফুলের মতো দেখতে এবং প্রাচীন যুগ থেকেই শান্তি ও স্বস্তির সঙ্গে জড়িত। এই ফুলের শুকনো পাপড়ি থেকে বানানো চা মনের চাপ কমাতে বিশেষ কার্যকর। ২০১৬ সালের একটি সমীক্ষা দেখাচ্ছে ক্যামোমাইল ফুল থেকে তৈরি চা দীর্ঘ দিন পান করলে প্রতি দিনকার উদ্বেগ (Generalised anxiety disorder) নিয়ন্ত্রণে থাকে ।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে উদ্বেগ না কমলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।