পেটে গ্যাস
পাকস্থলীতে খাদ্যবস্তু পৌঁছে নানা ধরনের রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসে। রাসায়নিক বিক্রিয়ায় তৈরি হয় নানা ধরনের গ্যাস (gas)। যেমন নাইট্রোজেন, হাইড্রোজেন, মিথেন, অক্সিজেন, সালফার গ্যাস ইত্যাদি। কোনও ব্যক্তির গ্যাসের সমস্যা বেশি হওয়ার পিছনে দায়ী থাকে খাদ্যাভ্যাস। শর্করা অথবা প্রোটিনজাতীয় খাবার বেশি খেলে প্রচুর গ্যাস তৈরি হয় স্টমাকে। এছাড়া দুধে থাকা ল্যাকটোজ পাকস্থলীতে গ্যাস তৈরি করতে পারে।পেঁয়াজ , নাশপাতির মতো খাদ্যে থাকে ফ্রুকটোজ যা পাকস্থলীতে হজম হওয়ার সময় গ্যাস উৎপন্ন করে। এমনকী খাদ্যগ্রহণ কিংবা জল পানের সময়েও অনেকখানি বাতাস ঢুকে যায় স্টমাকে। এই বাতাসও গ্যাস হিসেবেই পাকস্থলীতে জমে। অন্ত্রেই গ্যাস শোষিত হয়ে যায়। তবে অনেকখানি গ্যাস জমে গেলে তখন পেট ফুলে যায়। কিছু রোগী বলেন, খাবার খেলেই পেটে গ্যাস হচ্ছে। এই ঘটনার পিছনে প্রধান কারণ হল কোষ্ঠকাঠিন্য।
শরীরচর্চার অভ্যেস না থাকলে, এক জায়গায় বসে দীর্ঘসময় কাজ করলেও গ্যাসের সমস্যা হয়। অন্ত্রে কোনও প্রতিবন্ধকতা তৈরি হলেও গ্যাসের সমস্যা চাগাড় দিতে পারে। এমন সমস্যা হওয়ার পিছনে দায়ী থাকতে পারে অন্ত্রের দেওয়াল পরস্পরের সঙ্গে জুড়ে যাওয়া, হার্নিয়া, কোলন ক্যান্সার। অসুখগুলির কারণে খাদ্যবস্তু অন্ত্রে আটকে থাকে। গ্যাস বেরনোর পথ পায় না। এছাড়া অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি হ্রাস পেলেও গ্যাসের সমস্যা মাথাচাড়া দেয়। স্টমাক আলসারের কারণেও গ্যাস হয়। রেকটাম ক্যান্সারের কারণেও পেটে গ্যাস জমার লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
গ্যাস নিয়ে ভুল ধারনা
• গ্যাস মাথায় ওঠে না। গ্যাসের কারণে মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট হয় না। তাই এই ধরনের সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ করতে হবে।
কিভাবে গাসের রোগ প্রতিরোধ করবেন ?
• গমের তৈরি খাদ্য যেমন আটা, ময়দা খেলে কারও কারও স্টমাকে গ্যাসের সমস্যা বেশি হয়। আবার দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য থেকেও কোনও কোনও ব্যক্তির গ্যাসের সমস্যা হয়। কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে ফুলকপি, বাঁধাকপি, বাদাম, আপেল, তরমুজ, কফি, দুধ চায়ের মতো খাদ্য ও পানীয় থেকে পেটে গ্যাস জমার প্রবণতা দেখা যায়। অতএব কোনও খাদ্য থেকে পেটে গ্যাস জমার সমস্যা হলে ওই ধরনের খাদ্যগ্রহণ এড়িয়ে চলতে হবে।
• নিয়মিত শরীরচর্চা জরুরি। ওজন বেশি থাকলেও গ্যাসের জটিলতা বেশি হয়। সেক্ষেত্রে ওজন কমাতে হবে।
• সময়ে খাবার খেতে হবে। বেশি রাত অবধি জেগে থাকা চলবে না।
অম্বলের সমস্যা (acidity)
পাকস্থলীতে থাকে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড (এইচসিএল)। গৃহীত খাদ্যকে ক্ষুদ্র আকারে ভাঙতে ও হজম করতে সাহায্য করে এইচসিএল। এইচসিএলকে খাদ্যনালীতে উঠতে বাধা দেয় খাদ্যনালী ও পাকস্থলীর মধ্যে ভালভের মতো অংশ। ওই ভালভ একমুখে খোলে। ফলে পাকস্থলীর অ্যাসিড খাদ্যনালীতে উঠে আসে না। অবশ্য কিছু ক্ষেত্রে স্টমাকে বেশি মাত্রায় অ্যাসিড তৈরি হয়। তখন স্টমাক থেকে অ্যাসিড উঠে খাদ্যনালীতে চলে আসতে পারে। এই কারণেই হয় বুকজ্বালা, কাশি, বুক ব্যথা, ঢেকুর ওঠা, বমি। সাধারণভাবে এই ধরনের উপসর্গকেই আমরা অম্বল বা অ্যাসিডের সমস্যা বলে চিহ্নিত করি।
ধূমপায়ী, বেদনানাশক ওষুধ সেবনকারী ব্যক্তি অ্যাসিডের সমস্যায় বেশি ভোগেন। জল পানের অভ্যেস কম থাকলেও অম্বলের সমস্যায় ভোগার আশঙ্কা থাকে। তবে সাধারণত অ্যাসিডের সমস্যা বেশি হওয়ার পিছনে খাদ্যাভ্যাস যথেষ্ট দায়ী থাকে। শাকসব্জি কম খেয়ে, বেশি পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট এবং ভাজাভুজি খেলে শরীরের পিএইচ ব্যালেন্স নষ্ট হয়। শরীরে অ্যাসিডের মাত্রা বাড়ে। সঙ্গে বাড়ে অম্বলের সমস্যা। এছাড়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে এইচ পাইলোরি বা হোলিওব্যাক্টর পাইলোরি নামে একধরনের ব্যাকটেরিয়া পাকস্থলীর দেওয়ালে বাসা বাঁধে, ঘা তৈরি করে ও পাকস্থলীতে অ্যাসিড উৎপাদন বাড়ায়। এর ফলেও গ্যাস্ট্রো ইসোফেগাল রিফ্ল্যাক্স ডিজিজ হতে পারে। এমন ক্ষেত্রে খাদ্যগ্রহণের পরেই রোগীর পেট, বুকে ব্যথা শুরু হয়। এছাড়া থাকে বমিবমি ভাব, বারবার ঢেকুর ওঠার মতো জটিলতা।
অ্যাসিডের সমস্যা প্রতিরোধ করার উপায়
এন্ডোস্কোপিতে রোগীর পাকস্থলীতে আলসারের উপস্থিতির প্রমাণ মিললে ওষুধ দেওয়া হয়। রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে হ্যাঁ, শরীরে আগে সেভাবে কোনও সমস্যা ছিল না, অথচ হঠাৎ করে অ্যাসিডের সমস্যা মাথাচাড়া দিতে শুরু করলে, খিদের অভাব হলে, ওজন কমতে শুরু করলে সতর্ক হতে হবে। সেক্ষেত্রে দ্রুত এন্ডোস্কোপি করে দেখতে হবে পাকস্থলীতে কোনও সমস্যা তৈরি হয়েছে কিনা।
দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিসের রোগীর গ্যাস, অ্যাসিডিটির সমস্যা বেশি হয়। সুগারের কারণে স্টমাকের সংকোচন-প্রসারণের ক্ষমতা হ্রাস পায়। স্বাভাবিক গতিতে খাদ্য কোলনে নেমে আসতে পারে না। পাকস্থলীতে অ্যাসিডের আধিক্য দেখা যায়। অ্যাসিডের সমস্যা প্রতিরোধে পাতে রাখতে হবে পর্যাপ্ত মাত্রায় শাকসব্জি। ডিনারের পরে আধঘণ্টা হাঁটতে হবে। সমস্যা না কমলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
গ্যাসের ওষুধ
কিছু ব্যক্তি ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই দোকান থেকে গ্যাস-অ্যাসিডিটির ওষুধ কিনে খেয়ে নেন। এইভাবে যাঁরা নিজেই নিজের চিকিৎসা করেন তাঁদের জেনে রাখা দরকার যে— কিছু অ্যান্টাসিড রয়েছে যা থেকে মুভমেন্ট ডিজঅর্ডার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই সচেতন থাকুন।