আমাদের এই সময়ে বিশ্বব্যাপী মোটা হওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সমান তালে চলছে ওজন কমানোর বিভিন্ন পথের খোঁজ। এ ব্যাপারে গবেষণা অব্যাহত। অত্যন্ত উন্নত মানের কিছু ওষুধ নিয়ে শেষ পর্যায়ের পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে এখন। সেগুলির বেশিরভাগ এখনও তৃতীয় বিশ্বের বাজারে পাওয়া যায় না। টিরজেপাটাইড এবং ক্যাগ্রি-সেমা নামের দুটি ওষুধ এই মুহূর্তে প্রচলিত ওজন কমানোর ওষুধগুলির চেয়ে ঢের বেশি সুফল দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এখনই এসব উন্নত মানের ওষুধ নিয়ে শেষ কথা বলা যাবে না। আগামী দিনই বলে দেবে ওজন কমাতে এই সব আধুনিক ওষুধ কতটা কার্যকর হবে। মোট কথা, স্থূলত্ব বা ওবেসিটি একটি জটিল ও দীর্ঘকালীন ব্যাধি। এই সমস্যা ঠিকঠাক সারাতে বহুস্তরীয় দৃষ্টিভঙ্গী দরকার। একেকজন মানুষের শরীরের নিজস্ব ব্যবস্থা (সিস্টেম) একেক রকম। এই বিষয়টি মাথায় রেখে একেকজন মোটা মানুষের ওজন কমানোর জন্য পৃথক উপায় বার করতে হবে।
কম বয়সীদের ওজন বাড়ার অনেক কারণ। রোজ ঠিক সময়ে না খাওয়া, জাঙ্ক ফুড খাওয়া, মদ্যপান, ঘন্টার পর ঘন্টা কম্পিউটারের সামনে বসে থাকা, শারীরিক কসরত না করা সমেত আরো বহু কারণ স্থূলত্বের জন্য দায়ী। বেশি মোটাদের হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস, ফ্যাটি লিভার এবং হার্ট ও কিডনির সমস্যা হতে পারে।
ওজন কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরণের ডায়েট, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ট্রেনারের নির্দেশে নিয়মিত ব্যায়াম এবং লাইফস্টাইল বা জীবনশৈলীতে বদল কাজে আসে। সেই সঙ্গে ওষুধপত্র দিয়ে ড্রাগ থেরাপি এবং রোগীর ক্লিনিকাল প্রোফাইল-এর ওপর ভিত্তি করে বেরিয়াট্রিক বা মেটাবলিক সার্জারি করা যেতে পারে। নতুন নতুন যে সব ওষুধ আসছে সেগুলিও ওজন কমাতে সহায়তা করবে। তরুণ প্রজন্ম ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য মরিয়া। ব্যায়াম ও সুষম ডায়েটের পাশাপাশি অনেকেই অ্যান্টিওবেসিটি ড্রাগস নিতেও পিছপা নন।
ওরলিস্টাট – ওজন কমানোর এই ওষুধটি আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি প্রেসক্রাইব করা হয়। এছাড়াও ওজন কমানোর জন্য লিরাগ্লুটাইড এবং সেমাগ্লুটাইড নামে দুটি ওষুধও ভারতের বাজারে পাওয়া যায়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এগুলি খাওয়া বিপজ্জনক।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
মনে রাখা দরকার যে ওজন কমানোর সমস্ত ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। সাইড এফেক্টগুলি এরকম – পেট ফাঁপা, পাতলা পায়খানা, উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনসন), বমিভাব, মাথাব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য। প্রথম বিশ্বের বাজারে বুপ্রোপিয়ন-নালট্রেকজোন নামে ওজন কমানোর একটি ওষুধের মোড়কে আত্মহত্যার ঝুঁকি বিষয়ক সতর্কতাও লেখা থাকে। এই ওষুধটিকে ভারতে অনুমোদন দেওয়া হয়নি।
ওজন কমানোর কোনও কোনও ওষুধ হার্টবিট বাড়িয়ে দেয়। এগুলি সেবন করলে নার্ভাসনেস বা সহজে ঘাবড়ে যাওয়ার অনুভূতিও হয়। অন্য দিকে ওজন কমানোর জন্য টোপিরামেট গোত্রের ওষুধ খেলে সন্তানের মধ্যে বিকৃতিও আসতে পারে।
বেশি রোগা হওয়া সত্যিই কি কোনও সমস্যা
যাদের Body Mass Index (বিএমআই) ১৮.৫-এর কম, মেডিকেল সায়েন্স অনুযায়ী তাদেরকে রোগা বলা হয়। বেশি রোগা হলেও কিন্তু কিছু সমস্যা হতে পারে। সেগুলি নিচে বর্ণনা করা হল।
i.ত্বকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। বেশি রোগাদের ত্বক খুব বেশি শুষ্ক হয়ে যায়। শুষ্কতার জেরে সংক্রমণ দেখা দেয়। চামড়ার তলায় চর্বি কম থাকায় ওয়েদার ইনটলারেন্স হয়। তার মানে, এরা গরম কিংবা ঠান্ডা কোনওটাই বেশিক্ষণ সহ্য করতে পারেন না। অতিরিক্ত রোগা মানুষজন অল্প ঠান্ডাতেই কাবু হয়ে পড়েন। তাঁদের নানা রকম সংক্রমণ হওয়ার প্রবণতা একটু বেশি থাকে।
ii.অনেকের দাঁতের সমস্যাও হয়। তার ওপর শরীরে ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থেকে সমস্যা হয়। পেটের অনেক সমস্যা হতে পারে। বেশি রোগাদের হজমশক্তি কমজোর হয়ে পড়ে।
iii.বেশি রোগাদের শরীরে কোষ বিভাজন স্বাভাবিকভাবে হয় না বলে নানা রকম সমস্যা হয় যার জেরে মুখে ও জিভে ঘা হতে পারে এবং ইনটেসটাইন ও স্টমাকের বিভিন্ন অংশে ঘা হতে পারে।
iv.খুব রোগাদের শ্বাসপ্রশ্বাসের অনেক সমস্যা হতে পারে। ফুসফুস দুর্বল হয়ে পড়ে।
v.অতিরিক্ত কম ওজন দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। তাই অসুখবিসুখের আশঙ্কা বাড়ে।
vi.এছাড়াও যাদের ওজন ভীষণ কম তাদের হাড়ের ভঙ্গুরতা বা অস্টিওপোরোসিস এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে বন্ধ্যাত্বের মতো সমস্যাও তীব্র হয়ে উঠতে পারে। তবে সবার ক্ষেত্রে এক ধরণের সমস্যা হয় না।
বেশি মোটা বা রোগা মানুষের হীনমন্যতায় ভোগার কোনও কারণ নেই। শারীরিক কসরত করা এবং ঠিক সময়ে খাওয়াদাওয়া করার পরেও সমস্যা থেকে গেলে ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিৎ। রোগা মানুষ ব্যায়াম করলে ওজন কমে যাবে এমন ধারণা বেঠিক। তবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ট্রেনারের নির্দেশ মতো তাঁদের ব্যায়াম করতে হবে। সেই সঙ্গে কোনও পরিস্থিতিতেই মোটা হওয়ার জন্য কোনও ওষুধ, ইঞ্জেকশন, লাগামছাড়া উপোস এবং টোটকা ইত্যাদি একেবারেই চলবে না।
একটা কথা মনে রাখতে হবে। মানসিক শান্তি পাওয়ার জন্য ধ্যান করলে মনের ওপর চাপ অর্থাৎ স্ট্রেস কমবে। কে না জানে, স্ট্রেস ফ্রি লাইফ মানুষের মুখে যে প্রশান্তি এনে দেয় তার সঙ্গে স্থূলত্ব বা কম ওজনের কোনও সম্পর্ক নেই।