অ্যাকিউট প্যাংক্রিয়াটাইটিস অত্যন্ত গুরুতর বিষয়। অ্যাকিউট প্যাংক্রিয়াটাইটিস (Acute pancreatitis) অসুখে প্যাংক্রিয়াসে প্রদাহ দেখা দেয় এবং তা অল্প কয়েকদিনের জন্য স্থায়ী হয়। প্রশ্ন হল প্যাংক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয় কী? কাজই বা কী এই অঙ্গের? ইনসুলিন ক্ষরণ করে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বিভিন্ন পাচক রস ক্ষরণ করাও প্যাংক্রিয়াসের কাজ।
অ্যাকিউট প্যাংক্রিয়াটাইটিস এবং ক্রনিক প্যাংক্রিয়াটাইটিস
অ্যাকিউট প্যাংক্রিয়াটাইটিসে রোগী ভোগেন অল্প সময়ের জন্য। অন্যদিকে ক্রনিক প্যাংক্রিয়াটাইটিসে রোগীকে ভুগতে হয় দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে।
অ্যাকিউট প্যাংক্রিয়াটাইটিস এর উপসর্গ
- হঠাৎ করে পেটের মাঝখানে তীব্র ব্যথার অনুভূতি। মনে হয় শরীর হঠায করে অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
- শুরু হতে পারে ডায়ারিয়া।
- ব্যথা ক্রমশ বাড়তে থাকে ও পিঠের দিকেও ছড়িয়ে পড়ে। এমনকী ঘাড়েও ব্যথা উঠতে পারে। জল পান বা খাদ্যগ্রহণ উপসর্গ আরও জটিল করে তোলে।
- সামনে ঝুঁকে থাকলে মনে হয় ব্যথার একটু উপশম হচ্ছে। চিত হয়ে শুলে মনে হয় ব্যথা বাড়ছে।
- বমি বমি ভাব থাকে।
- বদহজম।
- গায়ে তীব্র জ্বর থাকতে পারে।
- কারও কারও জন্ডিস হয়।
- পেট ফুলে যায় অনেকের।
- গলস্টোনের কারণে পাংক্রিয়াটাইটিস হলে অনেকটা পরিমাণ খাবার খাওয়ার পর এমন ব্যথা চাগাড় দিয়ে উঠতে পারে। অন্যাদিকে অ্যালকোহল পানের কারণে প্যাংক্রিয়াটাইটিস হলে অ্যালকোহল পানের ৬ থেকে ১২ ঘণ্টা বাদে দেখা দিতে পারে ব্যথা।
প্যাংক্রিয়াটাইটিস কেন হয়?
প্যাংক্রিয়াসে কিছু কিছু এনজাইমের ভারসাম্যে গন্ডগোলের জন্য এমন প্রদাহ দেখা দেয় বলে মনে করা হয়। এছাড়া পিত্তথলিতে পাথর হলে, মাত্রাতিরিক্ত অ্যালকোহল পানের অভ্যেস থেকেও এমন সমস্যা হতে পারে।
গলস্টোন (gall stone)
পিত্তথলিতে পাথর তৈরি হলে এবং কোনও কারণে সেই পাথর বাইল ডাক্ট বা পিত্তনালী দিয়ে নেমে আসলে এবং পিত্তনালী যেখানে ক্ষুদ্রান্ত্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সেই অংশে আটকে গেলে ঘটে বিপদ। কারণ ওই একই নালী দিয়েই প্যাংক্রিয়াস থেকে নানা এনজাইম ক্ষুদ্রান্ত্রে পৌঁছায়। পাথর দ্বারা নালীর মুখ বন্ধ থাকায় প্যাংক্রিয়াস থেকে বেরনো এনজাইম পুনরায় প্যাংক্রিয়াসে প্রবেশ করে প্যাংক্রিয়াসে প্রদাহ তৈরি করে।
অ্যালকোহল (Alcohol)
অ্যালকোহল কীভাবে প্যাংক্রিয়াসের ক্ষতি করে তা সম্পূর্ণভাবে জানা না গেলেও একটা বিষয় পরিষ্কার যে কোনও না কোনওভাবে অ্যালকোহল প্যাংক্রিয়াসের এনজাইমগুলির ভারসাম্যে বিঘ্ন ঘটায় ও প্যাংক্রিয়াসে তৈরি হয় প্রদাহ। দেখা গিয়েছে খুব অল্প সময়ের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে মদ্যপান করলে অ্যাকিউট প্যাংক্রিয়াটাইটিস দেখা দিতে পারে।
মৃদু ধরনের অ্যাকিউট প্যাংক্রিয়াটাইটিস সাধারণত ১ সপ্তাহের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়। তবে সিভিয়র প্যাংক্রিয়াটাইটিসের সমস্যা সারতে দেরি হতে পারে।
অন্যান্য কারণ
দুর্ঘটনার কারণে প্যাংক্রিয়াসে আঘাত থেকেও কারও কারও অ্যাকিউট প্যাংক্রিয়াটাইটিসের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কাদের ঝুঁকি বেশি?
মধ্যবয়সি এবং বয়স্ক মানুষের অ্যাকিউট প্যাংক্রিয়াটাইটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। তবে যে কোনও বয়সেই এই অসুখ হতে পারে। আবার এও দেখা গিয়েছে, পুরুষের মধ্যে অ্যালকোহল পানের অভ্যেস বেশি থাকার কারেণ তাদের মধ্যে পাংক্রিয়াটাইটিসের প্রবণতা বাড়ে। এছাড়া স্থূলত্বও অ্যাকিউট প্যাংক্রিয়াটাইটিসের পিছনে অন্যতম বড় কারণ। এছাড়া ধূমপানে আসক্তিও প্যাংক্রিয়াটাইয়িসের অন্যতম বড় কারণ।
জেনেটিক মিউটেশন
সাম্প্রতিককালে কিছু গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, এমসিপি জিন-১-এর মিউটেশনের কারণেও অ্যাকিউট প্যাংক্রিয়াটাইটিস ঘটতে পারে।
রোগ নির্ণায়ক পরীক্ষা
অ্যাকিউট প্যাংক্রিয়াটাইটিস হলে পেটের বেশিরভাগ অংশ অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়ে থাকে। হাত দিলেই রোগী ব্যথার অভিযোগ করেন। কিছু রক্তপরীক্ষা করে অসুখ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। রক্তে লাইপেজ এবং অ্যামাইলেজের মাত্রা অত্যধিক হয়ে গেলে সেক্ষেত্রে অ্যাকিউট প্যাংক্রিয়াটাইটিস সন্দেহ করা যেতে পারে।
আরও কিছু পরীক্ষা
সিটি স্ক্যান করেও প্যাংক্রিয়াসের অবস্থা দেখা যেতে পারে। দরকার পড়লে করা যেতে পারে এম আর আই। এন্ডোস্কোপিক রেট্রোগ্রেড কোলাঞ্জিওপ্যাংক্রেটোগ্রাফি (ইআরসিপি) করারও দরকার পড়তে পারে কিছু কিছু ক্ষেত্রে।
প্যাংক্রিয়াটাইটিসের চিকিৎসা
প্রদাহ কমে যাওয়া অবধি শরীরের অন্যান্য অঙ্গের কার্যকারিতা বজায় রেখে যাওয়াই হল একমাত্র চিকিৎসা। ইন্ট্রাভেনাস ফ্লুইডের মাধ্যমে শরীরে পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করা, বেদনানাশক দেওয়া, এবং অক্সিজেন চালানোর মাধ্যমে করা হয় চিকিৎসা।
সিভিয়র প্যাংক্রিয়াটাইটিসের ক্ষেত্রে সুস্থ হতে সময়টা আরও বেশি লাগে এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে রোগীকে আইসিইউতেও ভর্তি করার প্রয়োজন হয়।
মনে রাখবেন
অ্যাকিউট প্যাংক্রিয়াটাইটিস হলে শরীরে জলশূন্যতা তৈরি হতে পারে। আবার জলপান করলে পেটে ব্যথা শুরু হয়। তাই স্যালাইন চালানো জীবনদায়ী পদ্ধতি হিসেবে গণ্য হতে পারে।
পথ্য
সাধারণত চিকিৎসা চলাকালীন শক্ত খাবার রোগীকে দেওয়া হয় না।
মূল অসুখের চিকিৎসা
অ্যাকিউট প্যাংক্রিয়াটাইটিসের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে চলে এলে এরপর
তারপর মূল কারণের চিকিৎসা করতে হয়। অর্থাৎ ঠিক যে কারণে প্যাংক্রিয়াটাইটিস শুরু হয়েছিল সেই কারণগুলি চিহ্নিত করে তার চিকিৎসা করার দরকার পড়ে।
অর্থাৎ গলস্টোনের কারণে প্যাংক্রিয়াটাইটিস দেখা দিলে তার চিকিৎসা করতে হয়। কিংবা মদ্যপানের কারণে প্যাংক্রিয়াটাইটিস হলে বন্ধ করতে হয় মদ্যপান।
ক্রনিক প্যাংক্রিয়াটাইটিস
বারংবার অ্যাকিউট প্যাংক্রিয়াটাইটিসের সমস্যা হলে তখন তাকে বলে ক্রনিক প্যাংক্রিয়াটাইটিস। ক্রনিক প্যাংক্রিয়াটাইটিস স্বাস্থ্যে ভয়ঙ্কর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলতে পারে।
অ্যাকিউট প্যাংক্রিয়াটাইটিস প্রতিরোধ
মদ্যপান বন্ধ করলে অন্তত একটি দিক থেকে অ্যাকিউট প্যাংক্রিয়াটাইটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব।