ব্যালানাইটিস রোগের চিকিৎসা ও প্রতিরোধ কিভাবে সম্ভব তা বিস্তারিত ভাবে নিম্নাংশে জানানো হল।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলি বিশেষ করে ভারতবর্ষে একটা বড় সামাজিক অংশে আজও যৌন রোগ মাত্রই গোপনীয়তা বলে মনে করেন। যৌন রোগ মানেই তা যৌন সংসর্গের কারণেই হবে এমনটা মোটেও নয়৷ শারীরিক অবস্থা, নিম্নমানের স্বাস্থ্যবিধির কারণেও দেখা দেয় কিছু যৌন রোগ। পুরুষদের যৌন রোগ গুলির মধ্যে অন্যতম হলো ব্যালানাইটিস বা পেনাইল ইনফ্ল্যামেশন। এমনিতে গুরুতর না হলেও, এই রোগ প্রতিকারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সময় মতো না নিলে তা ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে।
ব্যালানাইটিস কী?
গ্লান্স পেনিস অর্থাৎ লিঙ্গের মাথার অংশের যন্ত্রণাকেই ব্যালানাইটিস বলে। আনসার্কামসাইস্ড, অর্থাৎ ফোরস্কিন অস্ত্রোপচার করে সরানো হয়নি এমন পুরুষদের ক্ষেত্রে এটি বর্তমানে খুব সাধারণ সমস্যা যা নিম্নমানের স্বাস্থ্যবিধি এবং ফোরস্কিনের নিচে ইস্ট সহ অন্যান্য অণুজীব জমে যাওয়ার ফলে হয়। ফলে ব্যালানোপসথাইটিস (গ্লান্স এবং ফোরস্কিনের যন্ত্রণা) এবং পার্শ্ববর্তী পেনাইল টিস্যুতেও ইনফ্ল্যামেশন হতে থাকে। এটি সাধারণত এইচআইভি, ডায়াবেটিস এবং ক্যান্সার আছে তাদের মধ্যে দেখা যায়। এছাড়া অন্যান্য কারণেও হয়।
ব্যালানাইটিস রোগের লক্ষণ গুলি কী কী?
• জনন অঙ্গে চুলকানো
• আক্রান্ত জায়গায় ব্যথা অনুভব হওয়া
• যন্ত্রণাদায়ক ইরেক্শ
• লালভাব ও ছোটো ছোটো ফুসকুড়ি
• লিঙ্গে ফোলাভাব
• গন্ধ যুক্ত ডিসচার্জ
এছাড়াও যে লক্ষণ গুলি ব্যালানাইটিস এর দেখা দেয়, তা হলো —
ফিমোসিস (ফোরস্কিনের দৃঢ়তা)
প্যারাফিমোসিস (ফোরস্কিনকে যখন পূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায় না)
ব্যালানাইটিস রোগের কারণ কী?
• ব্যালানাইটিস আসলে এক ধরনের ইনফ্ল্যামেশন যা কোনো ইনফেকশন অথবা ত্বকের ক্রনিক সমস্যার কারণে হয়৷
• গ্লান্সের ত্বকে উপস্থিত অণুজীবগুলির অতিবৃদ্ধির কারণেই ইনফ্ল্যামেশন হয়। উষ্ণ আর্দ্র পরিবেশ এইসব প্রাণীর বৃদ্ধির পক্ষে সহায়ক হয়ে ওঠে।
• এটি মূলত ছত্রাক ক্যানডিডা অ্যালবিকান্স দ্বারা সংক্রমণের কারণে হয়। ডায়াবেটিস সহ কিছু ত্বকের রোগের কারণেও ব্যালানাইটিস হতে পারে।
• অপরিষ্কার এবং নিম্নমানের স্বাস্থ্যবিধির ফলেও ব্যালানাইটিস হতে পারে।
• ফোরস্কিনের নিচে জীবাণু, ঘাম, নোংরা ও মৃত চামড়া জমে চুলকানি হয় ৷
• টাইট ফোরস্কিন এই সমস্যাটিকে আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে ৷
• পুরুষের লিঙ্গে সুগন্ধী সাবান, লোশন, এবং স্প্রে-র ব্যবহার ব্যালানাইটিসের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে ৷
• বারবার সাবানের ব্যবহার জনন অঙ্গের ত্বককে শুষ্ক করে তোলে।
• পুরুষের লিঙ্গ পরিষ্কারের সময় সাবান ঠিকমতো ধোয়া না হলে ব্যালানাইটিস হতে পারে।
• কিছু যৌন সংক্রামিত রোগ যেমন গনোরিয়া, ট্রাইকোমোনাস এবং সিফিলিস রোগের কারণে ব্যালানাইটিসের উপসর্গ দেখায়।
• অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস এবং রিয়্যাক্টিভ আর্থারাইটিসের কারণেও ব্যালানাইটিস হতে পারে।
• কিছু ঘুমের ওষুধ, পেইনকিলার, ল্যাক্সেটিভ, অ্যান্টিবায়োটিকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলেও ব্যালানাইটিসের উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
কীভাবে নির্ণয় করা হয় ব্যালানাইটিস?
• ব্যালানাইটিস মূলত লক্ষণ বা উপসর্গ গুলির ওপর ভিত্তি করে শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমেই নির্ণয় করা হয়।
• ডিসচার্জ হলে একটি কটন বলে তার সোয়াব নিয়ে পরীক্ষা করা হয়। কখনও মূত্রের নমুনাও সংগ্রহ করা হয়।
• সংক্রমণের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাসকে সনাক্ত করা হয়।
• যদি কোনো ক্রনিক ত্বকের সমস্যার কারণে হয়, সেক্ষেত্রে ডাক্তার বায়োপসি করার পরামর্শ দিতে পারেন।
• রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরীক্ষা করাও এক্ষেত্রে একান্ত প্রয়োজনীয়।
ব্যালানাইটিস রোগের চিকিৎসা
• ফোরস্কিনের যন্ত্রণা বা অস্বস্তি এড়াতে সুগন্ধি সাবান, লোশন বা পাউডারের ব্যবহার বন্ধ করে দিতে হবে।
• ব্যালানাইটিস নির্ণীত হওয়ার পর ডাক্তাররা সাধারণত অ্যান্টি – ইচিং ক্রিম ব্যবহারের পরামর্শ দেন ৷
• ইনফেকশন তৈরি হয়ে থাকলে ডাক্তাররা অ্যান্টি ব্যাক্টেরিয়াল, অ্যান্টি ফাঙ্গাল ওষুধ ব্যবহার করতে পরামর্শ দেন ৷
• ইনফ্ল্যামেশন কমাতে স্টেরয়েড সম্বলিত ক্রিম ব্যবহার করতে বলেন ডাক্তাররা।
ব্যালানাইটিস রোগের প্রতিরোধের উপায়
সঠিক হাইজিন বজায় রাখলে ব্যালানাইটিসকে সহজেই রুখে দেওয়া যায়।
• ঘাম হলে বা যৌন সংসর্গের পর ভালো করে স্নান করা একান্ত জরুরি।
• লিঙ্গে সুগন্ধি স্প্রে বা পাউডার ব্যবহার বন্ধ করে দিতে হবে।
• স্নানের পর ভালো করে শুকনো করে লিঙ্গ মুছে নিতে হবে৷