নিজস্ব প্রতিনিধি, হেলথ ইনসাইড: সম্প্রতি ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সস কলকাতা (আইএনকে কলকাতা)-এর তরফে এক সাংবাদিক বৈঠক এবং সেমিনারের আয়োজন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন ডাঃ আরপি সেনগুপ্ত, ডাঃ হৃষীকেশ কুমার, ডাঃ এসএস আনন্দ এবং ডাঃ দুর্জয় লাহিড়ী সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। চিকিৎসকরা জানান, কয়েক মাস আগেই ৩৬ বছর বয়সি গৃহবধূ, বারবার মন খারাপ এবং অবসাদের অভিযোগ নিয়ে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হচ্ছিলেন। তিনি এও জানিয়েছিলেন, গত ১ বছর ধরে বাড়িতে শাশুড়ির সঙ্গে নানা কারণে তাঁর ঝগড়া হচ্ছে। এছাড়া গত ৬ মাস ধরে ঘরের প্রতিদিনের কাজেও নানা ভুল থেকে যাচ্ছে কারণ তিনি ছোট ছোট বহু বিষয় স্মরণে রাখতে পারছেন না।
তিনি একাধিক চিকিৎসকের কাছে সমস্যাটি সম্পর্কে জানিয়েছিলেন। তবে সুরাহা মেলেনি। একাধিক অ্যান্টিডিপ্রেসান্ট বা অবসাদমুক্তির ওষুধও খেয়েছিলেন। তবে কোনও উপকারই হয়নি। মুডও ঠিক হয়নি, ভুলে যাওয়ার অসুখও সারেনি। রক্ত পরীক্ষা এবং এমআরআই-এর রিপোর্টও স্বাভাবিক।
তবে ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স-এ আসার পরে তাঁর বিশেষ একটি সমস্যা আছে কি না জানতে সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড নিয়ে পরীক্ষা করাতে দেওয়া হয় ও সেই রিপোর্ট পজিটিভ আসে। ওই বিশেষ অসুখটি হল ‘অ্যালঝাইমার্স ডিজিজ’। অর্থাৎ সিএসএফ পরীক্ষার সাহায্যে ওই ভদ্রমহিলা প্রাথমিক অবস্থায় অ্যালঝাইমার্সে আক্রান্ত বলে নির্ণীত হয়।
সমগ্র বিশ্বেই স্নায়ুর ক্ষয়জনিত অসুখগুলির মধ্যে অ্যালঝাইমার্স ডিজিজ হল সবচাইতে পরিচিত ডিমেনশিয়া। সাধারণভাবে অসুখের উপসর্গ এবং বিভিন্ন ইমেজিং টেস্ট করালে অসুখটি সম্পর্কে ধারণা করা সম্ভব। তবে শারীরবৃত্তীয়ভাবে অসুখটি আছে কি নেই তা প্রতিষ্ঠার একমাত্র উপায় হল সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইডের বিশ্লেষণ করা।
বর্তমান সময়ে অ্যালঝাইমার্স নির্ণয়ের গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড পরীক্ষা বলতে রয়েছে— ‘টিএইউ স্ক্যানের মাধ্যমে অ্যামাইলয়েডের উপস্থিতি নির্ণয়। এই পরীক্ষার সঙ্গে একমাত্র তুলনীয় পরীক্ষা হল সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইডের পরীক্ষা। সিএসএফ-এর পরীক্ষার মাধ্যমে প্রায় নিখুঁতভাবে অসুখ সম্পর্কে ধারণা করা যায়। খরচও অন্যান্য পরীক্ষার তুলনায় কম। পশ্চিমী দেশগুলিতে পেট স্ক্যানের পাশাপাশি সিএসএফ নিয়ে গবেষণা চালানো হয়েছে। সেই গবেষণার ফলাফলই বলছে অ্যালঝাইমার্স জিজিজ নির্ণয়ে ‘শারীরবৃত্তীয় নির্দেশক’ হিসেবে সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড-এর পরীক্ষা যথেষ্ট কার্যকরী।
অ্যালঝাইমার্স ডিজিজ নির্ণয়ে সিএসএফ বায়োমার্কার ব্যবহারের উপযোগিতা—
১) শারীরবৃত্তীয় নির্দেশক হিসেবে সিএসএফ অত্যন্ত উপযোগী।
২) সমস্যা অত্যন্ত জটিল হওয়ার অন্তত ১০-১৫ বছর আগে থেকে সিএসএফ বায়োমার্কারের সাহায্যে সমস্যা সম্পর্কে ধারণা করা যেতে পারে।
৩) ভুলে যাওয়া বা স্মৃতিভ্রংশের পিছনে একাধিক কারণ দায়ী থাকতে পারে। তার মধ্যে অন্যতম হল অ্যালঝাইমার্স। অর্থাৎ একজন ব্যক্তির ভুলে যাওয়ার পিছনে সত্যিই অ্যালঝাইমার্স দায়ী নাকি অন্য কিছু।
৪) অ্যালঝাইমার্সের কিছু ভিন্ন ধরনের প্রকাশ রয়েছে যেমন আচরণগত, ভাষাগত সমস্যা। বিশেষ করে অ্যালঝাইমার্স ডিজিজ-এর প্রাথমিক অবস্থায় এমন নানা সমস্যা ধরা পড়ে।
৫) অ্যালঝাইমার্স, ডিমেনশিয়ার রোগীর ব্রেনের স্নায়ুকোষের উপর অ্যামাইলয়েড নামে বিশেষ ধরনের প্রোটিনের আস্তরণের অস্তিত্ব মিলেছে। বর্তমানে অ্যান্টি অ্যামাইলয়েড ওষুধও পাওয়া যাচ্ছে। এই ওষুধটি অ্যামাইলডেডের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডির মতো কাজ করে। ফলে অ্যালঝাইমার্স শুরু হওয়ার পর রোগী ওষুধটি খেতে শুরু করলে তার শারীরিক পরিস্থিতির অবনমন রোধ কর সম্ভব। আর বছর দেড়েকের মধ্যেই ওষুধগুলি সম্ভবত ভারতেও পাওয়া যাবে। তবে কারও অসুখটি করেছে তার প্রমাণ না মেলা অবধি ওষুধ প্রয়োগ করা সম্ভব নয়। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দাবি, এই মুহূর্তে পূর্ব ভারতে ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল ছাড়া আর কোনও হাসপাতালে অ্যালঝাইমার্স জানার জন্য সিএসএফ টেস্ট হয় না। এমনকী সারা দেশেও মাত্রা দু’টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে এমন স্টাডি করা হয়।
পূর্বভারতে ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হল এমন এক হাসপাতাল যা সাধ্যের মধ্যে রোগীকে বিশ্বমানের ব্রেন এবং স্পাইন সার্জারির সুযোগ দেয়। এই হাসপাতালের মূল লক্ষ্যই হল রোগীকে সুস্থ করার জন্য সর্বাধুনিক চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করা।