প্রতিদিন বাড়ছে ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা। অথচ রাজ্যে এতদিন ক্যান্সারের চিকিৎসা সীমাবদ্ধ ছিল হাতে গোনা কয়েকটি হাসপাতালে। হাব অ্যান্ড স্পোক মডেলে চিকিৎসার সেই গণ্ডি মুছে ফেলার চেষ্টা শুরু হয়েছে। আগামীদিনে ক্যান্সার চিকিৎসার পরিষেবা পাওয়া যাবে সমস্ত সরকারি মেডিক্যাল কলেজ এবং জেলা সদর হাসপাতালে। উল্লিখিত সকল হাসপাতালে শুরু হতে চলেছে ইনডোর এবং আউটডোর পরিষেবা। ফলে সরকারি হাসপাতালেই মিলবে ক্যান্সার সার্জারি এবং কেমোথেরাপির মতো পরিষেবা। তবে রেডিয়েশন থেরাপির জন্য রোগীকে রেফার করা হতে পারে মেডিক্যাল কলেজে। সম্প্রতি সব জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং সব মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষদের নিয়ে স্বাস্থ্যভবনের এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যদপ্তরের তরফে সব হাসপাতালে দ্রুত এই বিষয়ে প্রস্তুতি সেরে ফেলার নির্দেশও পৌঁছে গিয়েছে। নয়া এই প্রকল্প চালু হলে রাজ্যের প্রান্তিক এলাকার মানুষের ভোগান্তি কমবে। চিকিৎসার জন্য দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এবং অর্থ খরচ করে দূরের হাসপাতালে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকতে হবে না জেলার ক্যান্সার রোগীকে। ফলে চিকিৎসায় বিলম্ব যেমন ঠেকানো যাবে তেমনই রুখে দেওয়া যাবে অকাল মৃত্যু।
বর্তমানে ক্যান্সার চিকিৎসা মেলে বেশ কয়েকটি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। আরও কয়েকটি মেডিক্যাল কলেজে ক্যান্সার চিকিৎসার পরিষেবা চালু হয়েছে বিগত মাসগুলিতে। সেই হাসপাতালগুলিকেই মুখ্য (হাব) হিসেবে গণ্য করে বিভিন্ন জেলা হাসপাতাল স্পোক হিসেবে পরিষেবা প্রদান করবে। জেলা হাসপাতালের পরিকাঠামো ও পরিষেবার দিকটি সামলাবে ‘হাব’ হাসপাতাল এবং সেই হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ দল।
প্রতি মঙ্গল ও শুক্রবার— এই দু’দিন রাজ্যের সব নতুন মেডিক্যাল কলেজে ও জেলা হাসপাতালে অঙ্কোলজি আউটডোরে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী দেখা হবে বলে আপাতত নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সরাসরি ওই আউটডোরে ডাক্তার দেখানো যাবে না। মূলত জেনারেল আউটডোর বা সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে রেফার হয়ে আসা রোগীদের দেখা হবে অঙ্কোলজি আউটডোরে। প্রয়োজনে রোগীকে ভর্তি করাও হবে। এছাড়া খুব প্রয়োজন না থাকলে রোগীকে রেফার করার প্রথা ঠেকানো হবে। নতুন এই প্রকল্পে কী কী সুবিধা পেতে চলেছেন রোগীরা?
স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন নতুন ক্যান্সারের রোগী চিহ্নিতকরণের পাশাপাশি অপারেশন, কেমোথেরাপি ইত্যাদি পরিষেবা মিলবে ইনডোর বিভাগে। তবে রেডিয়েশন থেরাপি এখনই সব হাসপাতালে চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। খুব দ্রুত পরিষেবা শুরু করাও সম্ভব নয়। ফলে যে কয়েকটি হাসপাতালে রেডিয়েশন থেরাপি ইউনিট রয়েছে সেখানে রোগী রেফার করা হবে প্রয়োজন বুঝে। এমনকী খুব উন্নততর রোগপরীক্ষার জন্য রোগীকে নির্দিষ্ট কয়েকটি হাসপাতালে রেফার করাও হতে পারে।
জানা গিয়েছে, ক্যান্সার চিকিৎসার বাকি সব পরিষেবা মিলবে জেলা স্তরের সব হাসপাতালেই। এর জন্য প্রতিটি হাসপাতালকে মেডিসিন, সার্জারি, গাইনিকোলজি, ইএনটি, রেডিওলজি, ডেন্টাল সার্জারি, প্যাথোলজি এবং রেডিওথেরাপির আট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে নিয়ে প্রতি সপ্তাহে ১ দিন করে ‘টিউমার বোর্ড’-এর বৈঠকে বসতে হবে। ওই বোর্ড হাসপাতালে ভর্তি ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসার প্রোটোকল নির্ধারণ করবে।