আলোচনা শুরুর আগে একটা ছোট গল্প বলে নেওয়া যাক। এক ক্যান্সারের রোগীর চিকিৎসা হচ্ছিল আমারই পরামর্শ মেনে। এর মধ্যে ওই ভদ্রলোকের জন্য একটা ওরাল কেমোথেরাপি নেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলাম। রেকারেন্ট কার্সিনোমার সমস্যায় ভুগছিলেন ওই রোগী। ২ থেকে ৩ মাস অন্তর রোগীর চেকআপ থাকে। এর মধ্যে একদিন চেম্বারে আসতেই রোগীকে দেখে হতবাক হয়ে গেলাম। দেখি রোগী অত্যন্ত শীর্ণকায় হয়ে গিয়েছেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে জানতে চাইলাম, কী ব্যাপার, আপনার তো খুব ভালো চেহারা ছিল। হঠাৎ করে এমন শীর্ণকায় অবস্থা কেন?
প্রশ্নের উত্তরে রোগী বললেন, ‘একজন প্রাকৃতিক উপায়ে চিকিৎসা করেন এমন এক চিকিৎসকের কাছে আমি পরামর্শ নিয়েছিলাম। তিনি আমাকে বলেছেন, সুগার খেলে ক্যান্সার বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ চিনি জাতীয় খাদ্য খেলে শরীরে দ্রুত ক্যান্সার বেড়ে ওঠে। তাই ওই চিকিৎসক সুগারহীন একটি বিশেষ ডায়েট অনুসরণ করতে বলেছেন। এই ডায়েটের প্রধান খাদ্য হল হুইট গ্রাসের জ্যুস।’
হুইট গ্রাস কী ?
হুইট গ্রাস হল এককথায় গমের পাতা। অর্থাৎ রোগীকে উক্ত চিকিৎসক গমের পাতা থেঁতো করে যে রস বেরোয় তা পান করতে পরামর্শ দিয়েছিলেন।
উনি সবুজ রঙের একটা জ্যুস পান করছিলেন। শুধু ওই রোগীই নয়, ক্যান্সার এবং সুগার নিয়ে বহু রোগীর মনেই বিবিধ প্রশ্ন এবং ভুল ধারণা রয়েছে। অনেকেই ভাবেন ক্যান্সার থাকলে চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাদ্য খাওয়া সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা উচিত, নাহলে ক্যান্সারের বৃদ্ধি ঘটবে। অর্থাৎ প্রচলিত ধারণা অনুসারে সুগার ক্যান্সারের কোষগুলির বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। আর শুধু রোগী কেন, বহু অন্য ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও আমাকে প্রশ্ন করেছেন, ক্যান্সারে সুগার খাওয়া কি সত্যিই অনুচিত? তাহলে আমার এক আত্মীয়কে সুগার খেতে নিষেধ করে দেব।
সুগার কি ক্যান্সার বৃদ্ধি করে ?
ক্যান্সার নির্ণয়ে একটা বিশেষ ধরনের টেস্ট রয়েছে। টেস্টটির নাম পেট স্ক্যান। এই পরীক্ষায় রেডিও অ্যাকটিভ একটি ওষুধ দেওয়া হয় রোগীকে। ওই ওষুধে সুগার যোগ করা থাকে। যেখানে ক্যান্সার কোষ বেশি থাকে সেখানে সুগার জমা হয় বেশি। স্ক্যান-এ শরীরের ওই অংশের কোষগুলি বেশি উজ্জ্বল দেখায়। তাতে ক্যান্সার কোষগুলি সহজেই শনাক্ত করা যায়। এর চাইতে সুগারের বেশি কিছু ভূমিকা নেই। ক্যান্সারের রোগীর কোনওমতেই ডায়েটে সুগার বন্ধ করার প্রয়োজন নেই। এখন তাই বলে ইচ্ছেমতো বা মাত্রাতিরিক্ত সুগার, মিষ্টি, চিনি খাওয়া যাবে না। তাতে দুটো বিষয়ের আশঙ্কা বাড়ে। ১) ডায়াবেটিস। ২) স্থূলত্ব।
একবার ডায়াবেটিস হলে তা শরীরে আরও নানাবিধ জটিলতা ডেকে আনে। অন্যদিকে স্থূলত্ব ডায়াবেটিসের আশঙ্কা বাড়ায়। সঙ্গে ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ায়। তবে মোদ্দা বিষয়টা হল সুগারের সঙ্গে ক্যান্সারের সরাসরি যোগাযোগ এখনও অবধি কোনও গবেষণায় পাওয়া যায়নি। তাই মুখে স্বাদের জন্য যেটুকু সুগার দরকার তা খেতে পারেন তাতে সমস্যা নেই। ভালো থাকুন।