ক্যান্সার কিম্বা দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত রোগীরা বাবা-মা হতে পারবেন এ কথা আগে ভাবাও যেত না। কিন্তু ফার্টিলিটি প্রিজারভেশন পদ্ধতির মাধ্যমে তাঁরাও এখন সন্তানসুখ লাভ করতে পারছেন। বিশিষ্ট ইনফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে বেশ কিছু জরুরি তথ্য জানা গেল।
প্রথমে দেখা যাক ইনফার্টিলিটি বা বন্ধ্যাত্ব কী?
বিয়ের পর কোনো দম্পতি টানা এক বছর কোনো রকম গর্ভনিরোধক ছাড়া সহবাস করেও যদি সন্তানলাভ না করেন তাকে ডাক্তারি পরিভাষায় ইনফার্টিলিিটি বা সন্তানহীনতা বলে। অবশ্য ঐ দম্পতির কোনো শারীরিক সমস্যা থাকলে বিয়ের ছ’ মাস পরেই ইনফার্টিলিটি চিকিৎসার কথা ভাবা উচিৎ।
ইনফার্টিলিটি বা বন্ধ্যাত্ব এর কারণ
- .৩০ % ক্ষেত্রে পুরুষের সমস্যা
- .৩০% ক্ষেত্রে মহিলার সমস্যা
- . ৩০% ক্ষেত্রে উভয়ের সমস্যা
- . ১০ %ক্ষেত্রে কারণ জানা যায় না ( Unexplained Infertility)
ফার্টিলিটি প্রিজারভেশন কী?
ক্যান্সারে আক্রান্ত কোনো মহিলা বা পুরুষ নিজের সুস্থ স্পার্ম, ওভাম বা এমব্রায়ো নির্দিষ্ট দিনের জন্য ল্যাবরেটরিতে ফ্রিজ (সংরক্ষণ) করে রাখেন, যাতে পরে যখন তাঁরা প্রেগন্যান্সি চাইছেন তখন সেগুলিকে ব্যবহার করতে পারেন। ক্যান্সার ছাড়াও বিভিন্ন অসুখ থাকলে অথবা কোনো দম্পতি বা সিঙ্গেল মাদার বা ফাদার দেরিতে সন্তান চাইলে এই পদ্ধতির দিকে ঝুঁকছেন।
ফ্রিজিং কাকে বলে ?
শুক্রাণু(স্পার্ম), ডিম্বাণু(ওভাম)ও ভ্রূণ(এমব্রায়ো) মাইনাস ১৯৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় তরল নাইট্রোজেনে ফ্রিজ করে রাখা হয়। এ ক্ষেত্রে কৃত্রিম পদ্ধতিতে শুক্রাণু, ডিম্বাণু ও ভ্রূণের মেটাবলিজম বন্ধ করে দেওয়া হয় ফলে এগুলি নষ্ট হয়ে যায় না। পরে প্রয়োজনমতো এগুলিকে ব্যবহার করা হয়।
কখন ফ্রিজিং করা হয় ?
- ক্যান্সারজনিত কারণ
- কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি চললে
- জেনেটিক কন্ডিশন
- টার্নার সিনড্রোম
- Fragile X Permutation
- Reproductive Tract Surgery হলে
- ওভারিয়ান এন্ডোমেট্রিওসিস
- ওভারিয়ান নিওপ্লাজম
- সারভাইকাল / ইউটেরাইন নিওপ্লাসিয়া
- অটোইমিউন কন্ডিশন
- Autoimmune Oophoritis
ফার্টিলিটি প্রিজারভেশন পদ্ধতির সুবিধা কী?
- অনেক সময়েই ক্যান্সার রোগীরা নিজের রোগের চেয়েও এই ভেবে বেশি চিন্তিত থাকেন যে তাঁরা বাবা বা মা হতে পারবেন না। এই পদ্ধতির সাহায্যে ভবিষ্যতে তাঁরা বায়োলজিক্যাল বাবা-মা হতে পারেন।
- এখন এই পদ্ধতিতে ওভারিয়ান টিস্যুও ফ্রিজ করে রাখা সম্ভব।
- যে সব দম্পতি দেরিতে সন্তান চান তাঁদের জন্য এটি আদর্শ পদ্ধতি।
- কেউ যদি বিদেশে কর্মরত হন তাহলে দেশে থেকে তাঁর স্ত্রী স্বামীর ফ্রিজ করা স্পার্ম ব্যবহার করে মা হতে পারেন।
- শুক্রাণু ১০ এবং ডিম্বাণু ও ভ্রূণ ৫ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করে রাখা সম্ভব।
আরেকটি জরুরি বিষয়। ক্যান্সার রোগী মারা গেলে তাঁদের ফ্রোজেন শুক্রাণু, ডিম্বাণু ও এমব্রায়ো নিয়ে কী করা হবে সেই প্রশ্ন উঠতে পারে। চিকিৎসা শুরু হবার আগেই প্রত্যেক ক্যান্সার রোগীর অনুমতি নিয়ে নেওয়া হয় তাঁদের ফ্রোজেন ডিম্বাণু, শুক্রাণু ও ভ্রূণ পরে কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে সে বিষয়ে। তাঁদের সামনে এই সব বিকল্প রাখা হয়-
- গ্যামেট নষ্ট করে দেওয়া
- রিসার্চের জন্য দান করা
- অন্যান্য সন্তানহীন দম্পতির সন্তানলাভে সহায়তার জন্য এগুলিকে ব্যবহার করা
- যিনি ফ্রিজ করছেন তাঁর সঙ্গী কিম্বা পরিবারের সদস্যদের অনুমতি নেওয়া