গণেরিয়া রোগটি ‘দ্য ক্ল্যাপ’ নামেও পরিচিত, এটি এক ধরনের ‘সেক্সুয়ালী ট্র্যানোমিটেড ইনফেকশন (STI) বা যৌনবাহিত রোগ।সংক্রমণের প্রথম দিকে গনোরিয়া রোগের লক্ষণ বিশেষ একটা লক্ষ্য করা যায় না তবে কিছুদিন পর গলা ব্যাথা ও মূত্রত্যাগের সময় জ্বালা বা ব্যথার মাধ্যমে নিজের উপস্থিতি জানান দেয়। এই রোগে পুরুষ এবং স্ত্রী দুজনকেই ফল ভোগ করতে হয়।
রোগটি ‘নেইসেসরিয়া গণোরিয়া (Neisseria gonorrhoeae) নামক ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা সংঘটিত হয়।এই ব্যাকটেরিয়া শরীরের উষ্ণ ও আদ্র অংশকে বেছে নেয়, যেমন-
- মূত্রনালি
- চোখ
- গলা
- যোনিদ্বার
- মলদ্বার
- মহিলাদের প্রজনন অঙ্গ (জরায়ু, ফ্যালপিয়ান টিউব)
গণেরিয়া রোগটি কি ভাবে বিস্তারলাভ করে?
আগেই বলা হয়েছে এটি একটি যৌনবাহিত রোগ, এটি সাধারণত অসুরক্ষিত যৌন মিলন, ওরাল সেক্স অথবা সিরিঞ্জ বা অন্য কোনও মাধ্যমে সংক্রমিত ব্যাক্তির রক্ত সুস্থ মানুষের দেহে প্রবেশ করার মাধ্যমে এই রোগটি ছড়ায়।
অশিক্ষা ও অসচেতনতাও এই ধরনের যৌনবাহিত রোগের বিস্তারলাভের একটি কারণ। দেখা গেছে ভারত তথা বাংলাদেশের মতন তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে আজও যৌন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে কুণ্ঠা বোধ করেন, সমস্যা থাকলেও অলোচনা করেন না উপরন্ত তিনি রোগটি বয়ে বেড়ানোর পাশাপাশি অন্যদেরও সংক্রমিত করতে থাকেন।
গনোরিয়া রোগের লক্ষণ কি কি ?
সংক্রমণের ২-১৪ দিনের মধ্যেই রোগটির লক্ষণ প্রকাশ পায়। তবে অনেক রোগীর ক্ষেত্রে এই রোগটি কোনও রকম লক্ষণ সৃষ্টি করে না।তবে সাধারণত নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি লক্ষ্য করা যায়-
পুরুষদের ক্ষেত্রে
- মূত্রত্যাগের সময় জ্বালা ও ব্যথা অনুভব হয়।
- বার-বার প্রস্রাবে যেতে হয়।
- যৌনাঙ্গ (লিঙ্গ) থেকে ঈষৎ হলুদ অথবা সবুজ পুঁজ বের হয়।
- পুরুষাঙ্গ লালচে বর্ণ ধারণ করে এবং ফুলে যায়।
- অণ্ডকোষে ব্যাথা অনুভূত হয়।
- গলায় সবসময় ব্যাথা থাকে।
মহিলাদের ক্ষেত্রে
- মূত্র ত্যাগ এর সময় ব্যথা ও জ্বালা।
- বার-বার প্রস্রাবে যেতে হয়।
- পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত।
- যোনি থেকে ঈষৎ হলুদ অথবা সবুজ পুঁজের মতন তরল বের হয়।
- যৌনসঙ্গমের সময় ব্যথা।
- গলায় ব্যাথা থাকে।
- তলপেটে তীব্র ব্যাথা থাকে
- জ্বর।
গনোরিয়া হলে আর কি কি ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হয়?
দীর্ঘদিন ধরে এই রোগের চিকিৎসা না হলে রোগটি জটিল ও দীর্ঘ মেয়াদি সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে এমনকি প্রাণঘাতীও হতে পারে।
মহিলাদের ক্ষেত্রে এই ব্যাকটেরিয়াটি জনন অঙ্গের সমূহ ক্ষতি করে। জরায়ু, ফ্যালপিয়ান টিউব, ওভারি একত্রে আক্রান্ত হলে তলপেটে তীব্র ব্যাথা হয় এবং অনেক সময়ই ফ্যালপিয়ান টিউব দুটি ব্লক হয়ে যায়, ফলস্বরূপ ভবিষ্যতে সন্তান ধারণে সমস্যার সৃষ্টি করে।
পুরুষদের ক্ষেত্রেও বন্ধাত্বর সৃষ্টি করতে পারে।
কোনও মহিলা যদি প্রেগন্যান্ট থাকাকালীন সময়ে এই রোগে আক্রান্ত হন তাহলে ডেলিভারির সময় তার সন্তানও এই ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে।
এই ব্যাকটেরিয়া রক্তে প্রবেশ করলে বাতের ব্যাথা বা আর্থ্রাইটিস, মস্তিষ্ক এবং স্পাইনাল কর্ডে প্রদাহ এবং হার্ট-এর ভালভ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
গনোরিয়া রোগ থেকে মুক্তির উপায় কি?
এই রোগের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকে বেশ ভাল সুফল পাওয়া যায়।২০১৬ সাল থেকে ইনজেকশনের মাধ্যমে ceftriaxone এবং ট্যাবলেট বা ক্যাপসুলের মাধ্যমে অ্যাজিথ্রোমাইন (azithromycin) ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে।
কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এই ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না, সেক্ষেত্রে অন্য চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। রোগটি যদি অ্যাডভান্স স্টেজে ধরা পড়ে সেক্ষেত্রে চিকিৎসা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে এবং রোগীর মৃত্যু ঘটে।
গনোরিয়া প্রতিরোধ এর উপায় কি ?
- অসুরক্ষিত যৌন সঙ্গম এড়িয়ে চলুন, কন্ডমের ব্যবহার করুন।
- কোনও রকম সমস্যা হলে আপনার সঙ্গীকে জানান।
- সন্দেহ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
গনোরিয়ায় আক্রান্ত হলে কি করনীয় ?
- দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান এবং তাকে সবটা খুলে বলুন, যেমন-
- আপনার সমস্ত লক্ষণ ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যা
- আপনার যৌন জীবন
- পূর্ববর্তী একই রকম সমস্যা থেকে থাকলে
- আপনার সঙ্গীকে দ্রুত জানান, এবং তাকেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলুন।
- চিকিৎসক আপনাকে যে অ্যান্টিবায়োটিক এর কোর্সটি নিতে বলেছেন সেটি অবশ্যই সম্পূর্ণ করুন।
- ৭-১০ দিনের ব্যাবধানে ডাক্তারের ফলোআপে থাকুন।
- আপনি এবং আপনার সঙ্গীর সমস্ত পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ এলে তারপর যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হন।