গত কয়েকবছর ধরে ডান হাতে একটানা প্রবল ব্যাথা হতো। এতখানিই যে কোনও কাজই করতে পারতেন না বিহারের সমস্তিপুরের শঙ্কর মাহাতো। দিনমজুর শঙ্করের হাত ক্রমশ অসাড় হয়ে যাচ্ছিল। অবশেষে পাটনা মেডিক্যাল কলেজে যান ওই ব্যক্তি। পরীক্ষানিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা জানান যে শঙ্করের হাতের ভিতর রয়েছে টিউমার। হাত কেটে বাদ দিতে হবে। পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যায় শঙ্করের পরিবারের। খোঁজখবর নিয়ে তাঁরা শ্রীরামপুরে আসেন। অপারেশনও হয়। তবে হাত কেটে বাদ দেওয়ার দরকার পড়েনি মোটেই। কিছুদিনের মধ্যে স্বাভাবিক কর্মময় জীবনে ফিরতেও বাধা নেই কোনও। ফলে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে শঙ্করবাবুর পরিবার।
জানা গিয়েছে সমস্তিপুরের কাউয়া গ্রামে বাড়ি শঙ্কর মাহাতোর। সারবছর অন্যের জমিতে ভাগচাষ আর শীতকালে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে দিন গুজরান করেন শঙ্করবাবু। নুন আনতে পান্তা ফুরানো দশায় যখন শঙ্করবাবুর ডান হাত বাদ পড়ার কথা ওঠে, তখন একটা চিন্তাই শঙ্করবাবুকে ভাবিয়ে তুলছিল— কী হবে পরিবারের?
এমনসময় শ্রীরামপুরের এক আত্মীয় শঙ্করবাবুর কথা শুনে তাঁকে আসতে বলেন। তাঁরা এরপর শল্য চিকিৎসক দীপ্তাংশু দাসের পরামর্শ নেন। হাতের দরকারি পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। এরপর শ্রীরামপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে শঙ্করের হাতের অপারেশন করা হয়। বিভিন্ন মাপের সাতটি টিউমার হয় । সেগুলিকে বাদ দেওয়া হয়।
কয়েক ঘণ্টার জটিল ও কঠিন অস্ত্রোপচারের পর দীপ্তাংশু দাস রোগীর পরিবারকে জানিয়ে দেন শঙ্করের হাত বাদ দিতে হবে না। চিকিৎসকের মুখে একথা শুনে পুনরায় আগের মতো স্বাভাবিক জীবনে ফেরার ব্যাপারে আশাবাদী হন শঙ্করবাবু ও তাঁর পরিবার।
শঙ্করবাবুর শ্রীরামপুরের আত্মীয় বিনয় চৌধুরী। তিনি জানিয়েছেন, শঙ্করবাবুর বয়স মাত্র ৩৭। স্ত্রী ও তিন ছেলে মেয়ে রয়েছে। এমন অবস্থায় ওর হাত বাদ গেলে স্ত্রী ও পরিবার নিয়ে পথে বসতে হতো শঙ্কর বাবুকে। তাই শঙ্করবাবুর কথা জানার পর তাঁকে শ্রীরামপুরে আসার কথা বলেন বিনয়বাবু।
তিনি আরও বলেন, ‘শ্রীরামপুরে ওয়ালশ হাসপাতালের দীপ্তাংশু দাসের বিরাট নামডাক। তাই ওঁর কাছেই প্রথম নিয়ে যাই শঙ্করকে। উনি শেষ পর্যন্ত শঙ্কর এবং ওর পরিবারকে রক্ষা করলেন। সাধ্যের মধ্যেই অপারেশন করেন ডাক্তারবাবু।শঙ্কর পেয়েছে নতুন জীবন।’
অন্যদিকে শঙ্করবাবু জানান, অনেকদিন ধরে একটানা হাতের ব্যথায় এতটাই কষ্ট হচ্ছিল যে কাজকর্ম কিছুই করা সম্ভব হয়নি। রোজগার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তিনি আরও বলেন, ‘পাটনা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসকদের কথা শুনে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। পরে এক আত্মীয়ের পরামর্শে শ্রীরামপুরে এসে হাত বাঁচল।’
ডাঃ দীপ্তাংশু দাস বলেন, ‘রোগীর হাতের রক্তবাহী নালীতে হয়েছিল টিউমার। এই ধরনের টিউমারে রক্তবাহী নালী ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়। হাতও ক্রমশ অসাড় হয়ে পড়ে। কয়েক ঘণ্টার অপারেশনে টিউমারগুলি বাদ দেওয়া সম্ভব হয়েছে। রোগী দ্রুত সুস্থ হচ্ছেন।’