যৌনমিলন সুখকর হয় কখন? শীঘ্রপতন এবং শীঘ্রপতন থেকে মুক্তির উপায় প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গেলে সামনে আসে এই বিষয়টিও। কারণ অধিকাংশ পুরুষেরই ধারণা যে যৌনতার আসল আনন্দ লুকিয়ে রয়েছে যৌন সঙ্গিনীর শরীরে প্রবেশের মধ্যেই। ইংরেজিতে যাকে বলা হয় পেনিট্রেশন (Penetration)। সঙ্গিনীর শরীরে প্রবেশ করার পর একজন পুরুষ কতক্ষণ তাঁর বীর্যপতন ধরে রাখতে সক্ষম হলেন, কতক্ষণ তিনি সঙ্গিনীকে আনন্দ দিয়ে নিজেও তৃপ্ত হলেন, ধরেই নেওয়া হয় যে এর মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে রতিসুখ বা Orgasm-এর মূল চাবিকাঠি৷
শীঘ্রপতন কি?
শীঘ্রপতন পুরুষদের এমন একটি অবস্থা যখন একজন ব্যক্তি যৌনমিলনের সময় প্রবেশের আগে বা কিছুক্ষণ পরেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বীর্যপাত করেন। এছাড়াও যাদের যৌন উদ্দীপনা কম তারাও শীঘ্রপতনের সমস্যায় ভোগেন ৷
মিলনের মানসিক চাপ একজন ব্যক্তির যৌনতা নিয়ে দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়ে তোলে এবং অতিরিক্ত উদ্বেগ এই সমস্যাকে আরও প্রকট করে তোলে। এটি পুরুষদের প্রকাশিত সাধারণ যৌন দুর্বলতাগুলির মধ্যে একটি। প্রায় সব পুরুষই তাদের যৌন জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে এই অবস্থার শিকার হয়েছেন।
শীঘ্রপতন কত প্রকার?
আজীবন:
আজীবন শীঘ্রপতন অথবা প্রাথমিক শীঘ্রপতন সাধারণত প্রথম যৌন মিলনের সময় ঘটে।
অর্জিত:
সেকেন্ডারি প্রিম্যাচিউর ইজাকুলেশন বা অর্জিত শীঘ্রপতন সাধারণত পূর্ববর্তী সময়ে কোনো সমস্যা ছাড়াই যৌন মিলনের পর দেখা দিতে পারে।
একজন সুস্থ পুরুষের লিঙ্গ উত্তেজিত অবস্থায় গড়ে কতক্ষণ দৃঢ় থাকতে পারে?
গবেষণায় জানা যায় একজন মানুষের উত্তেজিত অবস্থা গড়ে স্থায়ী হয় প্রায় ৫.৪ মিনিট, কিন্তু কখনও কখনও শারীরিক গঠনের তারতম্যের কারণে তা প্রায় কয়েক মিনিট থেকে এক ঘন্টা অব্ধিও স্থায়ী হতে পারে। লিঙ্গের দৃঢ়তার স্থায়ীত্ব নির্ভর করে বয়স, স্বাস্থ্য এবং যৌন কার্যকলাপ সহ মোট চারটি বিষয়ের উপর।
বীর্যপাতের আগে একজন পুরুষের উত্তেজনা কতক্ষণ স্থায়ী হওয়া উচিত?
এটি ব্যক্তি বিশেষে পরিবর্তিত হয়। তবে বীর্যপাতের আগে অব্ধি একজন পুরুষের স্থায়ীত্বের গড় সময় ৪-১১ মিনিট সাধারণ হিসেবে ধরা হয়।
শীঘ্রপতনের লক্ষণগুলি কী কী?
সঙ্গিনীর শরীরে লিঙ্গ প্রবেশের পরে শীঘ্রপতনের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে বীর্যপাতের অক্ষমতা বা বীর্যপাতের ক্ষেত্রে দ্রুততা লক্ষ্য করা যায়। অর্থাৎ স্বাভাবিক সময়ের আগেই বীর্যপাত। যৌন ক্রিয়াকলাপ করার পরে এবং এমনকি হস্তমৈথুনের সময়ও এই সমস্যা হতে পারে।
শীঘ্রপতন-এর প্রধান কারণ গুলি কী কী?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর সঠিক কারণ সম্বন্ধে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি এবং এ বিষয়ে স্পষ্টতার অভাব রয়েছে এখনও। সময়ের সাথে সাথে, পুরুষরা তাদের প্রচণ্ড উত্তেজনা কিছুটা স্থগিত করতে শেখে। নতুন যৌন সঙ্গীরা প্রায়ই ট্রিগার করে। কিছু যৌন পরিস্থিতি এই ধরনের অবস্থাকে ট্রিগার করতে পারে। এমনকি বীর্যপাতের মধ্যে দীর্ঘ সময়ও অপরাধী হতে পারে।
যৌন সমস্যা এই ফর্ম মধ্যে মানসিক সমস্যাও ভয়ঙ্কর গুরুত্বপূর্ণ। এটি অপরাধবোধ, উদ্বেগ এবং হতাশার কারণে হতে পারে। কারণটি হরমোনের সমস্যা, আঘাত বা নির্দিষ্ট ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে চিকিৎসা প্রকৃতিরও হতে পারে। বিপুল সংখ্যক পুরুষ মনে করেন যে তারা অকাল বীর্যপাতের শিকার হচ্ছে কিন্তু রোগ নির্ণয়ের জন্য কোন মানদণ্ড নির্ধারিত নেই।
কিভাবে শীঘ্রপতন নির্ণয় করা হয়?
এক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ের জন্য, ডাক্তার রোগীর যৌন এবং পূর্ব চিকিৎসার হিষ্ট্রি সম্পর্কে আলোচনা করবে। এর উপর নির্ভর করেই শারীরিক পরীক্ষা করা হয়। শীঘ্রপতনের শিকার হলে ডাক্তাররা ছাড়াও, সঙ্গীর সাথে এই অবস্থা নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। প্রয়োজন অনুযায়ী ডাক্তাররা ল্যাবরেটরি টেস্টের মাধ্যমেও রোগ নির্ণয় করতে পারেন৷
শীঘ্রপতন কি নিরাময়যোগ্য?
শীঘ্রপতন এমন একটি অবস্থা যার চিকিৎসা করা হয় এবং আজকাল এটি অত্যন্ত সাধারণ সমস্যায় পরিণত হয়েছে। পুরুষরা যৌন চিকিৎসা, ধ্যান এমনকি কাউন্সেলিং করাতে পারেন যদি তাদের বীর্যপাত হতে দেরি হয়। যদিও এক্ষেত্রে সঙ্গীর সাথে যৌন জীবনও আরও সুন্দর হয়।
শীঘ্রপতন থেকে মুক্তির উপায় বা চিকিৎসা
টপিকাল অ্যানেশথিক্স:
এগুলি একপ্রকার ক্রিম যা বেনজোকেন, লিডোকেন বা প্রিলোকেন নামক এজেন্ট যুক্ত যা কোনও অংশকে অসাড় করে দিতে করে এবং অনেক ক্ষেত্রে এগুলিই শীঘ্রপতন নিরাময়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই ক্রিমের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে এটি যৌন আনন্দ হ্রাস করতে পারে অথবা শরীরের সংবেদনশীলতার সাময়িক ঘাটতি হতে পারে।
মৌখিক ওষুধ:
কিছু ওষুধ অর্গ্যাজম আসতে দেরি করায়। এগুলি সাধারণত অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস, ফসফোডিসটেরেজ-5 ইনহিবিটারস এবং পেনকিলার হয়। এই ওষুধ ডাক্তাররা একক ভাবে অথবা অন্য ওষুধের সাথে ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস:
এগুলি শীঘ্রপতন রোধ করার জন্য দেওয়া হয় দেওয়া হয়। ফ্লুক্সেটাইন, সার্ট্রালাইন, এসিসিটালপ্রাম, বা প্যারোক্সেটিন যুক্ত হয়।
অ্যানালজেসিক বা বেদনানাশক:
ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে ট্রামাডল সাধারণত ব্যবহৃত হয়, এর ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় যা বীর্যপাতে দেরি করে। এসএসআরআইয়ের সাথেই বেশিরভাগ সময় ট্রামাডল প্রেসক্রাইব করা হয়।
ফসফোডিস্টেরেস -5 ইনহিবিটারস:
কিছু ওষুধ ইরেকটাইল ডিসফাংশনের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয় যার মধ্যে রয়েছে সিলডেনাফিল, ভার্ডেনাফিল, ট্যাডালাফিল।
কাউন্সেলিং:
শীঘ্রপতনের চিকিৎসায় একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এই কাউন্সেলিং। এখানে ডাক্তার রোগীর সাথে তার সমস্যা সম্পর্কে কথা বলেন। এক্ষেত্রে একজন ব্যক্তির ল পারফরম্যান্সের চাপ থেকে মুক্ত হন এবং স্ট্রেসের মোকাবিলা করার অন্যান্য উপায় খুঁজে পান। কাউন্সেলিং এবং ড্রাগ থেরাপি একসাথে করা হয়।
কিভাবে সম্ভব শীঘ্রপতনের প্রতিরোধ?
স্টপ অ্যান্ড স্টার্ট পদ্ধতিঃ
এই পদ্ধতিতে শুরুতে ক্লাইম্যাক্সের কাছে সঙ্গীর শরীর থেকে লিঙ্গটি সরিয়ে নিয়ে কিছুক্ষণ রিল্যাক্স করে আবার শুরু করতে হবে। এটি দীর্ঘকালীন যৌন আনন্দ পেতে সাহায্য করবে।
স্কুইজ পদ্ধতিঃ
এই পদ্ধতিতে উত্তেজিত অবস্থায় বীর্যপাত হওয়ার আগের মুহূর্তে একজন পুরুষ তাঁর লিঙ্গের উপরের অংশটি নিজে অথবা তার সঙ্গীর দ্বারা প্রায় ১০-২০ সেকেন্ড চেপে ধরে রাখতে হবে। নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী যতক্ষণ না বীর্যপাত হওয়ার প্রয়োজন হয় ততক্ষণ স্কুইজ পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে।
শীঘ্রপতনের সমস্যার সাথে কিভাবে মোকাবিলা করবেন?
অন্যমনস্কতাঃ
শুরুতেই উত্তেজিত হয়ে গেলে মনকে অন্যকিছুতে সরাতে হবে। অন্য কথা ভাবতে হবে। অপ্রাসঙ্গিক, বিরক্তিকর কোনো বিরক্তিকর কোনো কথা ভাবা যেতে পারে।
ডিসেনসিটাইজিং ক্রিমঃ
লিঙ্গের সংবেদনশীলতা কমাতে এই ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি লিঙ্গের শেষ ভাবে প্রয়োগ করতে হয়।
হস্তমৈথুনঃ
আপনি যদি শীঘ্রপতনের শিকার হন, সেক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই আপনার শরীরের উত্তেজনায় সাড়া দিতে হবে এবং কিভাবে বীর্যপাত দেরি করতে হবে তা শিখতে হবে। যৌনতার কথা চিন্তা করা অথবা নিয়মিত যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব।