স্বাস্থ্য যদি সম্পদ হয়, ত্বক নিঃসন্দেহে তার স্থাবর সম্পত্তি৷ আজ আমরা আলোচনা করবো ত্বকের ক্ষতির কারণ ও তার প্রতিকার নিয়ে।
আসলে অস্থাবর সম্পত্তি যদি ভরসা হয়, স্থাবর সম্পত্তি দ্বিধাহীন ভাবে অবলম্বন। কাজেই একথা বলার আর অপেক্ষা রাখেনা যে কেন শরীরের সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের যত্নও অত্যন্ত জরুরি৷ ত্বক উজ্জ্বল হলে লোক সমাগমে বা কর্মক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসও বেড়ে যায়৷ মুখ এবং দেহের বিভিন্ন অংশে ব়্যাশ বা ত্বকের অন্যান্য সমস্যায় ভোগেন অনেকেই৷ প্রথমে জানতে হবে, তা কেন হচ্ছে ৷ তারপরই পাওয়া যাবে সমস্যা সমাধানের পথ। ত্বকে মেলানিনের মাত্রা যেমনই হোক, কিন্তু তার সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা একান্ত জরুরি। এমন অনেক কারণেই ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়,যা আমরা দৈনন্দিন জীবনে কখনও ভাবিই না। ফলত সমস্যা থেকে যায় আড়ালেই। এমন সমাধানের পথই পাওয়া যায় না৷
ত্বকের ক্ষতির জানা অজানা ৫টি কারণ ও তার প্রতিকার
আঙুলের ফাঁকে সাদা হাজা, হাতের তালুতে লালচে দাগ, নখ এবং নখের চারপাশ কালো হয়ে নষ্ট হয়ে যাওয়া — ইত্যাদি লক্ষণ দেখতে পাওয়া যায় অনেকেরই। এগুলোর একটি বড় কারণ, রক্তে মাত্রাতিরিক্ত শর্করার পরিমাণ, অর্থাৎ ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিসের ফলে ছত্রাকজনিত চর্মরোগ ক্যানডিডিয়াসিস, জীবাণুঘটিত সংক্রমণ ঘটতে পারে। এছাড়াও হতে পারে ফোঁড়া, কার্বাঙ্কাল, সারতে না চাওয়া বিশ্রী ঘা। নখে ছত্রাক সংক্রমণ হতে পারে। ছেলেদের ক্ষেত্রে খুব বেশি হতে দেখা যায় পুরুষাঙ্গের সামনের ত্বকে এবং লিঙ্গমুন্ডে প্রদাহ। বার বার এই প্রদাহ হতে থাকলে দেখা দিতে পারে ফাইমোসিস। ক্যানডিডাল ভালভোভ্যাজাইনাইটিস জনিত সমস্যায় ভুগতে পারেন মহিলারা। পায়ু আর যৌনাঙ্গে অসহ্য চুলকানি অনেক সময় ডায়াবেটিসের হাত ধরে আসে। এছাড়া পায়ে, ঊরুতে এক ধরনের ছোট ছোট কালো, বসে যাওয়া দাগ হতে দেখা যায় ডায়াবেটিক রোগীদের শতকরা প্রায় পঞ্চাশ জনের ক্ষেত্রেই। একে বলে ডায়াবেটিক ডার্মোপ্যাথি।
অর্থাৎ এই সমস্যা গুলো এড়ানোর জন্য উপসর্গ দেখা দেওয়া মাত্রই রক্ত পরীক্ষা করিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া এবং ওষুধ খাওয়া জরুরি৷
2.ধূমপান
একথা প্রায় সকলেরই জানেন যে ধূমপান আপনাদের ফুসফুসের বহুল ক্ষতি সাধন করে এবং এর ফলে কর্কট রোগের সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায় । কিন্তু এটা জানেন কি, যে ধূমপান করলে আপনার ত্বকেরও ঠিক কি পরিমাণ ক্ষতি হয়? ধূমপানের কারণে ত্বকের রক্তজালিকাগুলি সঙ্কীর্ণ হয়ে গিয়ে ত্বক কুঁচকে যেতে শুরু করে আর ত্বকের অকালবার্ধক্য নেমে আসে। ত্বক টানটান রাখতে যে ইলাস্টিন আর কোলাজেন তন্তুর প্রয়োজন হয়, ধূমপানের ফলে সেগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুধু নিজে ধূমপান ত্যাগ করাই নয়, পরোক্ষ ধূমপান থেকেও দূরে থাকুন।
3.গরমে ওয়ার্ক–আউট
প্রচন্ড গরমের মধ্যে ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করলে দেখা দিতে পারে ব়্যাশ ৷ লালচে রঙের ব্রণর মতোই দেখতে এই ফুসকরি গুলি৷ খুব রোদে বাইকে করে ঘুরলে এমনকি হাঁটলেও শরীরে দেখা দিতে পারে এই ধরনের লালচে ব়্যাশ ৷ ত্বকের এই সমস্যা থেকে নিজেকে বাঁচাতে চেষ্টা করুন যথাসম্ভব রোদ এড়িয়ে ছায়ার নীচ দিয়ে হাঁটার ৷ ছায়াতে বা খোলামেলা ঘরের ভিতর শরীরচর্চা করুন ৷ সরাসরি সূর্যের তাপ দেহে লাগতে দেবেন না ৷ বাইকে চড়লে বা হেঁটে যাতায়াত করতে হলে সারা শরীর আর মুখ ওড়না বা রুমাল দিয়ে ভালো করে ঢেকে নিন ৷ অনেক ধরনের স্কিনি কিনতে পাওয়া যায়৷ হাতের জন্য লম্বা গ্লাভস ও পাওয়া যায় এই ধরণের। ত্বকের সমস্যস থেকে বাঁচতে সেগুলি ব্যবহার করতে পারেন ৷
4.সানস্ক্রিন
রোদের প্রখর তাপ আর সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি শুধু মুখে ট্যানই তৈরি করে না, সারা দেহে ও মুখে এর ফলে ব়্যাশও হতে পারে ৷ এই অতিবেগুনী রশ্মি ত্বকে ভিতর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ৷ সানস্ক্রিন ছাড়া ভুল করেও বাড়ির বাইরে বেরোবেন না ৷ রোদে বেরোনোর অন্তত আধ ঘণ্টা আগে মুখে ও দেহের খোলা জায়গা গুলিতে সানস্ক্রিন মেখে নিন ৷ একটি কথা মনে রাখা প্রয়োজন, অধিকাংশ মানুষ ভাবেন, মেঘলা দিনে রোদের তাপ থাকেনা, ফলে সানস্ক্রিনের প্রয়োজনও নেই ৷ এই ধারণাটি অত্যন্ত ভুল ৷ মেঘলা দিনেও সানস্ক্রিন না ব্যবহার করলে একই ভাবে অতিবেগুনি রশ্মির দ্বারা ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ভারতীয় গ্রীষ্মপ্রধান আবহাওয়ায়, এসপিএফ ৫০ যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে পারলে সবচেয়ে ভাল ৷ তাপমাত্রার তারতম্যে এসপিএফ ৪০ যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করা যেতে পারে।
5.জিমে ওয়ার্ক আউট
শরীরচর্চার জন্য জিমে যাওয়া বর্তমান সময়ে অত্যন্ত প্রচলিত একটি ব্যাপার। একসাথে বহু মানুষ একই জিনিস ব্যবহার করেন সেখানে। তাই একটা কথা মনে রাখতে হবে, জিম থেকেও আপনার শরীরে নানা ধরনের রোগ বাসা বাধতে পারে ৷ প্রতিদিন জিমে যাওয়ার পর যদি লক্ষ্য করেন, সারা শরীরে ব়্যাশ বা ফুসকুরি হয়েছে, তাহলে বুঝতে হবে জিমের মেশিন ব্যবহার থেকেই বাসা বেঁধেছে এই রোগ ৷ এরকম উপসর্গ একবার দেখা দিলে কিন্তু ইনফেকশন হয়ে ব়্যাশ ছড়িয়ে যেতে বেশি সময় নেয় না ৷ কিন্তু জিম থেকে কীভাবে হতে পারে এমন ব়্যাশ? আসলে, জিমে যেসব ফিটনেস মেশিন ব্যবহার করা হয়, তা আরও বহু সংখ্যক মানুষ প্রতিদিন ব্যবহার করে থাকেন ৷ যাঁর এই রোগটা ইতিমধ্যেই আছে, আর তার ব্যবহারের পরে মেশিনটি ব্যবহার করে, এবং হাত না ধুয়ে সেই হাতই মুখে দিলে মুহূর্তে ছড়িয়ে যাবে এই রোগ৷ তাই প্রতিবার মেশিন ব্যবহার করার আগে অবশ্যই মেশিনটি মুছে নিন ৷ আর তা সম্ভব না হলে ওয়ার্ক আউটের পর হাত না ধুয়ে কখনও মুখে হাত দেবেন না ৷ প্রয়োজনে খানিকক্ষণ অন্তর হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে।