অ্যাডিনো ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ
শ্বাসনালী যে ভাইরাস দ্বারাই সংক্রমিত হোক না কেন, রোগ লক্ষণগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একইরকম। অ্যাডিনো ভাইরাসও শ্বাসনালীকেই আক্রমণ করে। তাই অ্যাডিনো ভাইরাসের সংক্রমণের প্রাথমিক লক্ষণগুলিও কমন কোল্ডের মতোই। এক্ষেত্রেও সংক্রামিতর দেহে জ্বর, নাক দিয়ে কাঁচা জল ঝরা, সর্দি, কাশি, গলা ব্যথার মতো উপসর্গগুলি দেখা যায়। কিছু ক্ষেত্রে বাচ্চাদের অবশ্য শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যাও দেখা যাচ্ছে। কিছু কিছু বাচ্চাদের চোখও লালবর্ণ ধারণ করছে। আবার বমি, ডায়ারিয়ার মতো সমস্যাও এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম উপসর্গ হিসেবে প্রকাশ পাচ্ছে।
কেন বাড়ছে অ্যাডিনো ভাইরাস সংক্রমণ
অ্যাডিনো প্রাপ্তবয়স্ককে আক্রমণ করলে সেভাবে সমস্যা হচ্ছে না। কারণ বড়দের ইমিউনিটি বেশি। ছোটদের ক্ষেত্রে সমস্যাটা হল, তাদের ইমিউনিটি কম। তাই তারা বিপর্যস্ত হচ্ছে বেশি। এছাড়া তারা অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্কের সংস্পর্শে আসছে ও সংক্রমিত হচ্ছে। এখন একটি বাচ্চা আক্রান্ত হলে অন্যান্য বাচ্চার সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কা যথেষ্ট বেশি। কারণ এই ভাইরাস ড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়ায়। অর্থাৎ সর্দি, কাশি, হাঁচির মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। তাই স্কুলে একটি বাচ্চা সংক্রামিত হলে বাকি বাচ্চারাও দ্রুত এই সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়া আরও একটা কথা বলা দরকার। তা হল, বাচ্চাদের শ্বাসনালী তুলনামূলকভাবে সরু। এর ফলে সর্দিতে শ্বাসনালী রুদ্ধ হয়ে পড়ছে ও বাতাস যাতায়াতে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ফলে শিশুকে জোর করে শ্বাস নিতে হচ্ছে।
এছাড়া কোনও শিশুর আগে থেকে হার্টের অসুখ, অ্যাজমা ইত্যাদি সমস্যা থাকছে তাদের ক্ষেত্রে অ্যাডিনো সংক্রমণ জটিল আকার ধারণ করছে।
রোগ নির্ণায়ক পরীক্ষা
কোভিডের পরীক্ষার সময় যেমন রোগীর নাক ও গলা থেকে লালারস সংগ্রহ করা হতো তেমনই করা হয় অ্যাডিনো ভাইরাস নির্ণয়ের ক্ষেত্রে। লালা রস সংগ্রহের পর ওই নমুনা থেকে পিসিআর পদ্ধতিতে ভাইরাসের উপস্থিতি নির্ণয় করা যেতে পারে। তবে সবার এই পরীক্ষা করানোর দরকার নেই। সাধারণত লক্ষণ বুঝেই রোগ নির্ণয় সম্ভব।
কী করবেন?
বাচ্চা বমি করলে তাকে একসঙ্গে অনেকখানি খাবার খাওয়াবেন না। অল্প অল্প করে খাবার খাওয়ান। এছাড়া একেবারে সদ্যোজাত বাচ্চা যারা শুধু মায়ের দুধ খেয়েই থাকে তাদের ব্রেস্টফিড করানোর আগে দেখে নিন নাকে সর্দি জমে আছে কি না। এমন ক্ষেত্রে বাচ্চার নাক স্যালাইনের জল দিয়ে নাক পরিষ্কার করে তারপর ব্রেস্ট ফিড করান।
প্রায় সাতদিন অবধি জ্বর থাকছে। তাই সাতদিন অবধি বাচ্চাকে একটু নজরে রাখতে হবে।
অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত বাচ্চার মধ্যে কিছু বাচ্চার বাচ্চার নিউমোনিয়ার মতো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে। তবে এই সংখ্যাটা খুবই নগণ্য। তবু সাবধান অবশ্যই থাকতে হবে।
ডায়েট কেমন?
জল পান খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। শরীরে জলের মাত্রা যেন পর্যাপ্ত থাকে। বাচ্চাদের বার বার ডায়ারিয়া, বমি হলে ওআরএস দিন চিকিৎসকের পরামর্শ মতো। না হলে বাচ্চার শরীরে জলশূন্যতা তৈরি হবে। সঙ্গে ফলের রসের সঙ্গে মিশিয়ে দিনে দু’বার প্রোবায়োটিক খাওয়াতে পারেন। শুধু জল পান করতে সমস্যা হলে অল্প অল্প ফলের রস, ডাবের জল পান করাতে পারেন। দেহে জল এবং ইলেকট্রোলাইটস-এর সরবরাহ বজায় থাকলে এনার্জি লেভেল থাকবে পরিপূর্ণ মাত্রায়।
সাধারণ সহজপাচ্য খাবার দিন। অতি মশলাদার খাবার খাওয়াবেন না এই সময়। সাধারণ মাছ, ভাত, ডাল, তরকারি। পারলে দই দিতে পারেন পাতে।
বাচ্চার পর্যাপ্ত বিশ্রাম খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। শিশুর ঘুম হলে তা ওর রোগ প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করবে।
যে কোনও ধরনের রেডি টু ইট প্যাকেটজাত খাদ্য এড়িয়ে চলুন।
রোগ প্রতিরোধ
ভিড় এড়িয়ে চলুন। বাচ্চার বাড়ির লোকেরা মুখে মাস্ক পরুন। খুব ছোট বাচ্চাদের মাস্ক পরানো যায় না, তবে যে বাচ্চা স্কুলে যাচ্ছে, তাকে মাস্ক পরিয়েই স্কুলে পাঠানো উচিত। এছাড়া এখন নানাবিধ অনুষ্ঠান এবং নিমন্ত্রণ লেগেই থাকবে। এমন জায়াগায় বাচ্চাকে নিয়ে না গেলেই ভালো। তবে নিয়ে গেলেও ভিড় থেকে একটু দূরে রাখার চেষ্টা করতে হবে। এসি থেকে হঠাৎ বাইরে বেরিয়ে যাওয়া, কিংবা বাইরের গরম পরিবেশ থেকে ঘুরে এসিতে ঢুকে পড়া, ফ্রিজের জিনিস, আইসক্রিম খাওয়া চলবে না।
বাড়ির কোনও বড় সদস্যের সর্দি-কাশি হলে তাকে কয়েকদিন বাচ্চার থেকে একটু দূরে থাকতে হবে।
মনে রাখবেন, বাচ্চা অসুস্থ হলে ডাক্তারের সঙ্গে কথা না বলে নিজের মতো চিকিৎসা করা যাবে না। বিশেষ করে কিছু অভিভাবক ভাইরাসের সমস্যাতেও অ্যান্টিবায়োটিক খাইয়ে ফেলছেন বাচ্চাকে। মনে রাখবেন ভাইরাস সেলফ লিমিটিং। অর্থাৎ ভাইরাস আক্রমণ করার পর একটা সময় পরে নিজের মতো শরীর চলে যায়। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে কাজে আসে। ভাইরাস অ্যান্টিবায়োটিকে নষ্ট হয় না। তবে ভাইরাসের আক্রমণে শরীর অসুস্থ হয়ে পড়লে সেই সুযোগে অনেক ব্যাকটেরিয়াও শরীরে ঢুকে পড়ে। সেক্ষেত্রে অবস্থা বুঝে চিকিৎসক রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক দিতে পারেন। তবে সমস্ত বিষয়টিই নির্ভর করে চিকিৎসকের সিদ্ধান্তের উপর। তবে প্রাথমিকভাবে বাচ্চার জ্বর কমাতে ওকে প্যারাসিটামল দিতে পারেন।