ব্রণ বা অ্যাকনে, কম বেশী আমাদের সকলের কাছেই এটা একটা মস্ত সমস্যা। প্রায়শই আমাদের মনে হয় এর থেকে কী মুক্তি পাওয়ার কোনো উপায় নেই? অথবা কী করেই বা পাওয়া যেতে পারে নিখুঁত একটি ত্বক? চলুন আজ এই রহস্যের উদ্ঘাটন করা যাক।
মুখভর্তি এই ব্রণ বা অ্যাকনের মূল কারণ হলো, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা। তাহলে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসতেই পারে মনে হরমোনজনিত ব্রণ বা অ্যাকনে কী? হরমোনজনিত ব্রণ হরমোনের তারতম্যের সাথে যুক্ত। সাধারণত বয়ঃসন্ধির সময় এমন সমস্যা হয়ে থাকে।যদিও,হরমোনের সমস্যা প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও ঘটতে পারে এবং এটি মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী দেখা যায়। ২০০৮ সালের একটি গবেষণা অনুসারে, প্রায় ৫০% মহিলাদের যাদের বয়স ২০ থেকে ২৯ বছর এবং প্রায় ২৫% মহিলাদের যাদের বয়স ৪০ থেকে ৪৯ বছর। তাদের মধ্যে ব্রণর সমস্যা বেশী দেখা যায়। সাধারণত, হরমোনাল ব্রণ যেভাবে চিহ্নিত করা হয়, সেগুলি হলো- গাল এবং চোয়ালের চারপাশে ব্রণ, ব্ল্যাকহেডস, হোয়াইটহেডস বা সিস্ট, তৈলাক্ত ত্বক, প্রদাহ, সংবেদনশীলতা।
হরমোনজনিত ব্রণ হওয়ার কারণ
বেশিরভাগ সময় ত্বকের তেল গ্রন্থিগুলি থেকে এন্ড্রোজেন নামে একটি হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে গেলে অ্যাকনের সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করে। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের কথায়, এন্ড্রোজেন সাধারণত ত্বকের তৈল গ্রন্থি বৃদ্ধি করে ত্বকে তেলের উৎপাদন বাড়ায়। এমনিতে সমস্ত মানুষের মধ্যে কিছু মাত্রার এন্ড্রোজেন থাকে এবং বয়ঃসন্ধির সময় এগুলি বৃদ্ধি পায়। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন যে,কিছু মহিলার ত্বকে অন্যদের তুলনায় অ্যান্ড্রোজেনের পরিমাণ বেশী থাকায় তাদের ত্বক অন্যদের চেয়ে বেশী সংবেদনশীল এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে হরমোন নিঃসরণের ক্ষেত্রেও তারতম্য হয়। এর পাশাপাশি জানিয়ে রাখা দরকার, কখনও কখনও কোনো প্রোডাক্ট বা ক্রিমের চয়েস আপনাদের ত্বকের সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, একাধিক স্কিন প্রোডাক্ট ব্যবহার করলে ত্বকে অনেক সময় জ্বালা করে বা প্রদাহ সৃষ্টি হয়, যার ফলে ত্বক লালচে হয়ে যায় এবং প্রায়শই ব্রণের জন্ম হয়।
যে কোনো বয়সে কি ব্রণর সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়?
চিকিৎসকরা বলছেন যে, এমন কোন বয়স নেই যখন আপনার ত্বকে হরমোনজনিত ব্রণ থেমে যাবে বা শুরু হবে। যদিও কিছু মহিলার কখনোই ব্রণ হয় না। সাধারণত ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী মহিলাদের তৈলাক্ত ত্বক ব্রণ-প্রবণ হয় এবং তা মেনোপজের পরেও এটি অব্যাহত থাকে। এখন এই ব্রণর সমস্যা আটকাতে ত্বকের পরিচর্যা করা খুবই জরুরী। চিকিৎসকদের মতে,অত্যধিক প্রোডাক্টের ব্যবহার ত্বকে যেমন ব্রণ তৈরী করতে পারে এবং ব্রণ আপনার ত্বককে আরও খারাপ করে তুলতে পারে, ঠিক তেমনই ফেসিয়ালও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।এক্ষেত্রে অবশ্য বিশেষজ্ঞরা আপনার ত্বকের বেসিক পরিচর্যার জন্য শুধু ক্লিনজার, ময়েশ্চারাইজার এবং সানস্ক্রিন ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
ব্রণ সমস্যার চিকিৎসা
সমস্যা গুরুতর হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া খুব দরকার। চিকিৎসকদের কথায়,একটি লোশন যাতে ২% মতো স্যালিসিলিক অ্যাসিড থাকে, সেই রকম কিছু দিয়ে শুরু করুন, যা সহজেই বাজারে পাওয়া যায়। কয়েক সপ্তাহের জন্য এটি ব্যবহার করুন এবং দেখুন আপনার ত্বকের কোনো উন্নতি হচ্ছে কিনা। বর্তমানে ব্রণের জন্য উন্নত মানের চিকিৎসা রয়েছে। একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ আপনার ত্বকের পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বলতে পারবেন কোন ধরনের ট্রিটমেন্ট আপনার জন্য সবচেয়ে বেশি কার্যকর হবে। পাশাপাশি, অ্যাকনের সমস্যা প্রতিরোধে চিকিৎসকরা বলেছেন যে গর্ভনিরোধক পিল ব্রণের জন্য অন্যতম একটি চিকিৎসা পদ্ধতির অংশ হিসাবে গ্রহণ করা হয়, যতক্ষণ না আপনার ডাক্তার এটি নিতে বারণ করছেন ততক্ষন এটি নিরাপদ। একই সঙ্গে বিশেষজ্ঞদের কথায়, ব্রণ চিকিৎসার জন্য পেসক্রাইব করা যায় এমন কোনো নির্দিষ্ট ব্র্যান্ড নেই। তবে, এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখা দরকার যে শুধুমাত্র প্রোজেস্টেরন-মিনিপিল গ্রহণ করলে তা অনেক সময় ব্রণকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে। পিলটি সবাই গ্রহণ করতে পারবেন না এবং পিলটি গ্রহণ করলে একটি অস্বস্তিকর, অসুবিধাজনক এবং এমনকি বেদনাদায়ক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি আছে। তাই সম্পূর্ণ সামগ্রিক সুস্থতার পাশাপাশি পরিষ্কার ত্বকের জন্য আপনার নিজের ত্বক কেমন এবং আপনার ত্বকের জন্য কোন চিকিৎসা পদ্ধতিটি সবচেয়ে দরকারি সেটা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ।