Search
Close this search box.

কিডনি ভালো রাখার উপায়

বর্তমানে কিডনি রোগ যেভাবে বেড়ে চলেছে যে প্রতিটা মানুষেরই কিডনি ভালো রাখার উপায় সম্পর্কে না জানা থাকলে এবং সেগুলি না মেনে চললে কিডনি রোগে আক্রান্তর সংখ্যা হয়ে দাঁড়াবে বহুল।
শিড়দাঁড়ার ঠিক দু’পাশে পাঁজরের নীচে ঠিক হাতের মুঠোর আকৃতির দেহের প্রত্যঙ্গ টি হল কিডনি। এই কিডনি আমাদের শরীরের নানা কাজ সম্পন্ন করে থাকে। বিশেষত শরীরের বর্জ্য পদার্থ, অতিরিক্ত জল এবং অন্যান্য দূষিত পদার্থ রক্ত থেকে বের করে দেওয়াই কিডনির প্রধান কাজ। শরীরের দূষিত পদার্থগুলো জমা হয় মুত্রাশয়ে এবং মূত্রের মাধ্যমে তা শরীরের বাইরে বেরিয়ে যায়।
এছাড়াও কিডনি আমাদের শরীরের পি এইচ (pH) লেভেল, লবন এবং পটাসিয়ামের পরিমান সঠিক রাখে এবং ব্লাড প্রেশার কে নিয়ন্ত্রন রাখার জন্য প্রয়োজনীয় হরমোনের উৎপাদন করে এবং লোহিত রক্ত কনিকার উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে। কিডনি ভিটামিন ডি এর একটি প্রকারকে সক্রিয় করে শরীরে ক্যালসিয়াম এর আত্মীকরনে সাহায্য করে হাড় ও পেশির গঠনে সাহায্য করে।
কিডনিকে সুস্থ রাখা সামগ্রিক সুস্থ শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। কিডনি ভালো রাখার উপায়গুলি এবার আমরা আলোচনা করবো —


১) শরীর কে সক্রিয় এবং ফিট রাখা —

এক্সারসাইজ

নিয়মিত এক্সারসাইজ ক্রনিক কিডনির অসুখ থেকে শরীর কে রক্ষা করে। নিয়মিত এক্সারসাইজ ব্লাড প্রেশার কে নিয়ন্ত্রণ করে এবং হৃদপিণ্ডের সুস্থতা বজায় রাখে, যা কিনা কিডনির সুস্থতা রক্ষার জন্য খুবই দরকারি। তবে ভাববেন না যে, এক্সারসাইজের ভালো ফল পাওয়ার জন্য আপনাকে ম্যারাথনের দৌড় অভ্যাস করতে হবে; হাঁটা, দৌড়, সাইকেল চালানো এমনকি নাচ করাও আপনার শরীর ও কিডনির জন্য উপকারী।


২) রক্তে শর্করার পরিমাণ (ব্লাড সুগার) নিয়ন্ত্রণ —

ডায়াবেটিস এর রোগীদের বা যাদের শারীরিক অবস্থা হাই ব্লাড সুগার তাদের কিডনি অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যখন আমাদের শরীরের কোশগুলি রক্তে গ্লুকোজ (সুগার) কে ব্যবহার করতে পারে না তখন আমাদের কিডনিকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয় আমাদের রক্তকে পরিশুদ্ধ রাখার জন্য। বছরের পর বছর ধরে এমন অবস্থা চলতে থাকলে কিডনির মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে যা জীবন সংশয় ডেকে আনতে পারে।আপনি যদি আপনার ব্লাড সুগার কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন তাহলে কিডনির ক্ষতি আটকানো যেতে পারে এবং যদি কিডনির ক্ষতি খুব তাড়াতাড়ি ধরা পড়ে তাহলে চিকিৎসক তার নিয়ন্ত্রণ করতে এবং আরো ক্ষতির হাত থেকে কিডনি কে রক্ষা করতে পারেন।


৩) রক্তচাপের (ব্লাড প্রেশার) নিয়ন্ত্রণ —

হাই ব্লাড প্রেশার দ্রুত কিডনির ক্ষতি করে। যদি হাই ব্লাড প্রেশারের সাথে সাথে ডায়াবেটিস, হার্টের রোগ, হাই কোলেস্টেরল ইত্যাদি থাকে তার ফল কিডনির জন্য খুবই ক্ষতিকর হয়।
১২০/৮০ ব্লাড প্রেশারের স্বাভাবিক অবস্থা। প্রিহাইপারটেনশন এই মাত্রার ওপর থেকে শুরু করে ১৩৯/৮৯ এই পর্যন্ত থাকে। এই অবস্থায় জীবন যাত্রা ও খাওয়া দাওয়ার অভ্যাসের পরিবর্তন হাই ব্লাড প্রেশারের নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। যদি আপনার ব্লাড প্রেশারের রিডিং ১৪০/৯০ এর বেশি থাকে তাহলে আপনার হাই ব্লাড প্রেশার আছে। এই সময় দ্রুত আপনাকে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে এবং তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া দাওয়া, জীবন যাত্রার পরিবর্তন আনতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ খেতে হবে।


৪) স্বাভাবিক ওজন এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ —

যাঁদের শরীরের ওজন স্বাভাবিকের থেকে বেশি, তাদের শরীরে এমন কিছু সমস্যা দেখা যায় যা কিডনির ক্ষতি করে। স্বাস্থ্যকর খাদ্য যাতে সোডিয়ামের পরিমান বেশি, প্রসেসড মিট এবং অন্যান্য খাদ্য যাতে কিডনির ক্ষতি হয়, সেগুলো নিয়মিত খেলে দ্রুত কিডনি খারাপ হতে শুরু করে। সোডিয়ামের পরিমান কম আছে এমন ফ্রেশ খাবার, যেমন ফুলকপি, ব্লুবেরি, মাছ, ডাল জাতীয় গোটা দানা ইত্যাদি খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে কিডনিকে ভালো রাখার জন্য।


৫) পরিমিত জল পান —

প্রতিদিন আট গ্লাস জল খাওয়ার কথাটা আমরা বহুবার শুনেছি। এতে কোনো ম্যাজিক নেই। কিন্তু এটা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী কারণ এতে আমাদের শরীর হাইড্রেটেড থাকে। প্রতিদিন এই পরিমান জল পান আমাদের কিডনির জন্য খুবই উপকারী।
জল আমাদের কিডনি থেকে সোডিয়াম ও অন্যান্য দূষিত পদার্থ বের করে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও প্রতিদিন সঠিক পরিমানে জল পান আমাদের ক্রনিক কিডনির রোগ থেকে রক্ষা করে। প্রতিদিন অন্ততপক্ষে ২ লিটার জল পান করা উচিত। তবে আমরা দিনে কতটা জল পান করবো সেটা সম্পূর্ণ ভাবে নির্ভর করে আমাদের শারীরিক অবস্থার ওপর। জলবায়ু, এক্সারসাইজ, লিঙ্গ, আপনার সামগ্রিক শারীরিক অবস্থা, আপনি গর্ভবতী বা স্তন্যদাত্রী মা কিনা তার ওপর নির্ভর করে নির্দিষ্ট করতে হবে যে আপনি দিনে কতটা জল পান করবেন।
যাদের আগে কিডনি স্টোন হয়েছে, তাদের একটু বেশি জল পান করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে স্টোন না হয়।


৬) ধূমপান বন্ধ করতে হবে —

ধূমপান আপনার শরীরের রক্তজালিকাকে ধ্বংস করে। এর ফলে কিডনি সহ সারা শরীরে রক্তপ্রবাহ সঠিক ভাবে হয় না। এছাড়া ধূমপানের ফলে কিডনি ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যদিও ধূমপান বন্ধ করে দিলে এই ঝুঁকি আবার কমে যায়, কিন্তু যে কখনো ধূমপান করেনি, তার কিডনি সুস্থ অবস্থায় আসতে বহু বছর সময় লেগে যায়।


৭) ওভার দ্য কাউন্টার মেডিসিন—
ওভার দ্য কাউন্টার মেডিসিন

যদি কারোর ঘন ঘন ওভার দ্য কাউন্টার ওষুধ খাওয়ার অভ্যাস থাকে, তাহলে কিডনির ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা প্রচণ্ড বেড়ে যায়। আইবুপ্রুফেন এবং ন্যাপ্রক্সেন জাতীয় নন স্টেরয়ডাল অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগ যা মাথা যন্ত্রনা, গা–হাত–পা যন্ত্রণা এবং আর্থারাইটিসের ব্যথার জন্য ব্যবহৃত এইসব ওষুধ নিয়মিত খেলে কিডনির ক্ষতি হবে। কিন্তু মাঝে মাঝে খেলে কিছু হয় না। তবে আপনাকে যদি এইসব ব্যথা যন্ত্রণার জন্য প্রায়ই এইসব ওষুধ খেতে হয়, তাহলে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন, যাতে তিনি এমন ওষুধ দেন, যা কিডনির ক্ষতি করবে না।


৮) কিডনি সংক্রান্ত সমস্যায় নিয়মিত কিডনির পরীক্ষা —

যদি আপনার কিডনির রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে নিয়মিত কিডনির পরীক্ষা করান। যে যে ক্ষেত্রে এগুলো নজর রাখতে হবে, সেগুলো হল —
আপনার বয়স ৬০ বছরের বেশি হলে
জন্মের সময় যাদের ওজন খুব কম থাকে
যাদের পরিবারে বা নিজের কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ আছে
যাদের নিজেদের বা পরিবারে হাই ব্লাড প্রেশার আছে
যারা মনে করছেন, যে তাদের কিডনি ড্যামেজ হতে পারে
নিয়মিত কিডনির পরীক্ষা করানোই কিডনি কে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। নিয়মিত পরীক্ষার ফলে কিডনির কোনো সমস্যা থাকলে তা আগেই ধরা পড়ে যায়, ফলে দ্রুত চিকিৎসার মাধ্যমে তা সারিয়ে তোলা সম্ভব হয়।

সাবস্ক্রাইব করুন

স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন খবর, তথ্য এবং চিকিৎসকের মতামত আপনার মেইল বক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন.

Table of Contents

আমাদের সাম্প্রতিক পোষ্ট গুলি দেখতে ক্লিক করুন

আমাদের বিশিষ্ট লেখক এবং চিকিৎসক