Search
Close this search box.

Written by

Health and Wellness Blogger

কেন বাড়ে ইউরিক অ্যাসিড? কমানোর উপায় কি?

নিউক্লিক অ্যাসিড নামে একটি উপাদান থাকে আমাদের কোষে। নিউক্লিক অ্যাসিডের আবার দু’টি উপাদান পিউরিন এবং পাইরিডিন। আমরা জানি প্রতিটি কোষেরই একটি আয়ুষ্কাল থাকে। সেই সময় পেরলে কোষ একটা সময়ের পরে ধ্বংস হয়। কোষ নষ্ট হওয়ার পর বিপাকক্রিয়ায় কোষের নানা অংশ ভাঙতে ভাঙতে অন্য ধরনের উপাদানে পরিণত হয়। যেমন লোহিত কণিকার মেটাবলিজমের ফলে তৈরি হয় হিম প্রোটিন এবং বিলিরুবিন। একইভাবে কোষ যখন ধ্বংস হয়, তখন কোষে থাকা পিউরিন ভেঙে পরিণত হয় ইউরিক অ্যাসিডে। কিডনির মাধ্যমে এই ইউরিক অ্যাসিড শরীরের বাইরে বেরিয়ে যায়।

অতএব সব মানুষেরই শরীরে ইউরিক অ্যাসিড থাকে। মুশকিল হল, কারও কারও ক্ষেত্রে শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বেশি তৈরি হতে থাকে। সেইসময়ইে বেশ কিছু জটিলতা তৈরি হয়।

শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের স্বাভাবিক মাত্রা

প্রতি ডেসিলিটার রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা হওয়া উচিত সর্বোচ্চ ৬.৫ থেকে ৭ মিলিগ্রাম। তবে দেখা গিয়েছে ব্যক্তিবিশেষে কারও কারও ক্ষেত্রে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকলেও কোনও উপসর্গ দেখা যায় না। আবার স্বাভাবিকের তুলনায় কম মাত্রার ইউরিক অ্যাসিড থাকলেও উপসর্গ প্রকাশ পেতে পারে।

ইউরিক অ্যাসিড থেকে ক্ষতি

দেহে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে বেশ কতকগুলি সমস্যা দেখা দিতে পারে—

ইউরিক অ্যাসিড ক্রিস্টাল আকারে শরীরের নানা অস্থিসন্ধিতে জমা হতে থাকে। এই সমস্যাকে বলে গাউট। ক্রিস্টালগুলি অস্থিসন্ধিতে থাকা কার্টিলেজগুলির প্রবল ক্ষতি করে। প্রদাহ তৈরি হয় ও জয়েন্টে ব্যথা হয়। অস্থিসন্ধি ফুলে যায়।

  • মাত্রাতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড থেকে কিডনিতে ইউরিক অ্যাসিড স্টোন হওয়ার আশঙ্কাও থাকে।
  • কোনও কোনও ব্যক্তির ত্বকের নীচেও ইউরিক অ্যাসিডের ক্রিস্টাল জমা হতে পারে। এই  ধরনের ক্রিস্টালকে বলে টোফাই। টোফাই থেকে ঘা হওয়ার ঘটনাও  ঘটে কোনও কোনও রোগীর ক্ষেত্রে।
  • হাড়েরও টেনডনের সংযোগস্থলেও জমতে পারে ক্রিস্টাল।
  • নানা অস্থিসন্ধির মধ্যে ক্রিস্টাল জমে দেখা দিতে পারে গাউটি আর্থ্রাইটিস।

ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ

প্রথমদিকে শরীরের ছোট ছোট জয়েনেটি ইউরিক অ্যাসিড জমা হয়। এরপর বড় বড় জয়েন্টে জমা হতে থাকে। এই কারণে দেখা যায়, প্রথমদিকে রোগীর বুড়ো আঙুলে ইউরিক অ্যাসিডের স্টোন জমে ও তীব্র ব্যথার উদ্রেক ঘটায়।

সকাল বা দিনের যে কোনও সময় হঠাৎ বুড়ো আঙুল ফুলে যায়, ব্যথা হয়। লালবর্ণও ধারণ করতে পারে। রোগী চলাফেরা করতে পারেন না। রোগীর আবার জ্বরও আসতে পারে।

অনেকে রাতে অ্যালকোহল পান করেন। দেখা যায় অ্যালকোহল পানের পর রাতে বুড়ো আঙুলে ব্যথা হচ্ছে।

কেন বাড়ে ইউরিক অ্যাসিড?

• পরিবারের সদস্যদের ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যায় ভোগার ইতিহাস থাকলে ওই পরিবারের সুস্থ সদস্যেরও ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যায় পড়ার আশঙ্কা থাকে।

• কিছু কিছু খাদ্য বেশি খেলে রক্তে বাড়তে পারে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা। এমন খাদ্যগুলি হল, রেড মিট, সি ফুড, অরগ্যান মিট যেমন লিভার, স্প্লিন, হার্ট, ব্লাড, ব্রেন, কিডনি। এই ধরনের খাদ্য বেশি খেলে শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের আধিক্য ঘটতে পারে।

যে কোনও ধরনের অ্যালকোহল পানের অভ্যেসও শরীরে ইউরিকের অ্যাসিডের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।

• কিছু কিছু ওষুধ যেমন কিছু হার্টের ওষুধ, ব্লাড প্রেশারের ওষুধ,

টিউবারক্যুলোসিসের ওষুধ খেলেও রক্তে বাড়তে পারে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা। কিছু কিছু ক্যান্সারের ওষুধও শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়াতে পারে।

পরীক্ষা

রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি লক্ষণ প্রকাশ পেলে অতি অবশ্যই ফাস্টিং ব্লাড ইউরিক অ্যাসিড টেস্ট করাতে হবে। এছাড়া শরীরের ছোট ও বড় জয়েন্টের এক্স রে করাতে হবে। দরকার পড়লে এমআরআই করাতেও হতে পারে।

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায় কি?

খাদ্যাভ্যাসে অবশ্যই পরিবর্তন আনতে হবে।  কমাতে হবে প্রাণিজ প্রোটিন খাওয়ার মাত্রা। এছাড়া পিউরিনের মাত্রা বেশি আছে যে সকল খাদ্যে, সেই সমস্ত খাদ্য গ্রহণের উপরেও আনতে হয় নিয়ন্ত্রণ। বাদ দিতে হবে অ্যালকোহল পান। এছাড়া নিয়মিত ওষুধ খেয়ে যেতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ বন্ধ করা যাবে না। কয়েকমাস অন্তর রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা পরীক্ষা করেও দেখা দরকার। আর অতিঅবশ্যই এক্সারসাইজ করুন। এক্সারসাইজ শরীরে সবসময়ই ইতিবাচক ফল দেয়।

সাবস্ক্রাইব করুন

স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন খবর, তথ্য এবং চিকিৎসকের মতামত আপনার মেইল বক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন.

Table of Contents

আমাদের সাম্প্রতিক পোষ্ট গুলি দেখতে ক্লিক করুন

আমাদের বিশিষ্ট লেখক এবং চিকিৎসক