এক মাসের মধ্যে ১০ কেজি ওজন কমান, চটজলদি ওজন কমাতে hi লিখুন, চটজলদি রেজাল্ট পেতে আমার সাথে এক্ষুনি যোগাযোগ করুন এই নম্বরে
সোশ্যাল মিডিয়ায় এরকম বিভিন্ন ধরনের এডভারটাইসমেন্ট আমরা দেখে থাকি।
আমি চন্দ্রিমা দে প্রফেশনালি একজন ডায়েটিশিয়ান। আমার বক্তব্য আজ থেকে ঠিক ২০-২৫ বছর আগে যেমন লাইফ স্টাইল ডিসঅর্ডার বা রোগ গুলো খুব কম পরিমাণে দেখা যেত তার পাশাপাশি এত ডায়েটিশিয়ানেরও চাহিদা ছিল না। বেশিরভাগ মানুষ খুব দ্রুত রেজাল্ট পাওয়ার জন্য কিটো ডায়েট, ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং বা বিভিন্ন সাপ্লিমেন্ট-এর সাহায্য নিচ্ছে । এটা সত্যি এই পদ্ধতিতে চটজলদি ওজন কমে যায়। কিন্তু এটা কি আপনার সারা জীবনের সলিউশন?
কখনোই নয়!!
ওজন কমানোর সঠিক পদ্ধতি আসলে তা কেবলমাত্র ব্যালেন্স ডায়েটের দ্বারাই সম্ভব।
খাদ্যে প্রধান ছটি উপাদান থাকে, যথা– কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন, মিনারেল, জল।
১. কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারকে আমরা দুটো ভাগে ভাগ করি ।
i. সিম্পল কার্বোহাইড্রেট (গ্লুকোজ, মধু, চিনি, সিরাপ, ইত্যাদি ) ।
ii. কম্প্লেক্স কার্বোহাইড্রেট (ভাত, রুটি, চিরে, মুড়ি, পাস্তা, ম্যাগি, ইত্যাদি ) ।
২. প্রোটিন জাতীয় খাদ্য বলতে বোঝায় মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, সয়াবিন, রাজমা, অঙ্কুরিত ছোলা চানা ইত্যাদি।
৩. ফ্যাট জাতীয় খাদ্য বলতে বোঝায় বাটার, ঘি, তেল খাসির মাংস ইত্যাদি।
৪. ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার বলতে বিভিন্ন রকমের ফল , কালারফুল সবজি ইত্যাদি।
৫. মিনারেল যুক্ত খাবার বিভিন্ন রকম সিডস, অঙ্কুরিত ডাল, ডাবের জল ইত্যাদি।
৬.অবশ্যই জলকে গুরুত্ব দিতে হবে।
সব খাবারের সাথে সব খাবারই পরোক্ষভাবে দরকার। ভিটামিন কে শোষণ করতে গেলে গুড ফ্যাটের প্রয়োজন হয়।
যেমন , আমন্ড বাদাম+ মিক্সড সিড। তবে আপনার মাইক্রো নিউট্রিশন অ্যাডজার্ভ হবে রক্তে।
আবার গাজরে ভিটামিন এ আছে । গাজরের সাথে যদি আপনি এক টুকরো নারকোল খান তবে আপনার রক্তে ভিটামিন এ প্রপার অবসার্ব হবে।
আসলে ফ্যাট জাতীয় খাবার দু ধরনের একটা গুড ফ্যাট এবং খারাপ ফ্যাট।
ভালো ফ্যাট অবশ্যই আমাদের চুলের হেলথ এবং ত্বকের হেলথ এর জন্য দরকার।
ভিটামিনের কথায় যদি আসি প্রত্যহ একটি করে ফল আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে বুষ্টাপ করতে সাহায্য করে। তাই প্রত্যহ একটি করে ফল অবশ্যই খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত। একইভাবে শরীরে মিনারেলের ব্যালেন্সও ঠিক রাখতে হবে। আমাদের ব্রেনের খাদ্য গ্লুকোজ। ২৪ ঘন্টা আমাদের মস্তিষ্কে গ্লুকোজ এর প্রয়োজন হয়।
তাই আপনি যদি মনে করেন খাদ্য তালিকা থেকে একেবারেই জন্য ভাত রুটি বন্ধ করে দেবেন তাহলে তা হবে আপনার সবথেকে বড় ভুল। সব খেয়ে ওজন কমানোর মর্মই আলাদা।
ব্যালেন্স ডায়েট কী?
খাদ্যের প্রত্যেকটি উপাদান যখন আপনার শরীরের চাহিদা অনুযায়ী যথোপযুক্ত মাত্রায় থেকে আপনার ওজন কমানোতে সহায়তা করবে তাকেই ব্যালেন্স ডায়েট বলে ।
ব্যালেন্স ডায়েটের মজা হল কমে যাওয়া ওজন সহজে বাউন্স করে না। একটা জিনিস মাথায় রাখবেন সহজে পাওয়া জিনিস সহজেই হারিয়ে যায়। অতএব যেকোনো লক্ষ্যে পৌঁছতে গেলে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হল ধৈর্য। আসলে খুব সহজে পাওয়া জিনিস সহজেই হারিয়ে যায়। যে কোন ক্ষেত্রে কোন জিনিস আপনি যদি কঠোর পরিশ্রম করে অর্জন করেন তবে কিন্তু তা সহজে হারিয়ে যায় না।
৭৭০০ ক্যালরি আমরা যদি আমাদের শরীর থেকে ঝরিয়ে ফেলি তবে আমাদের ১ কেজি ওয়েট লস হয়। ধরুন আপনার সারা দিনের ক্যালরির চাহিদা ২০০০ ক্যালোরি। যদি আপনাকে ব্যালেন্স ডায়েটের দ্বারা ১২০০ ক্যালোরি প্রেসক্রাইব করা হয়। তবে প্রত্যহ আপনার ৮০০ ক্যালোরি করে শরীরে ঘাটতি পরে। অতএব মাসের শেষে ক্যালরির ঘাটতির জন্য ৪ কেজি এবং বিভিন্ন রকম অ্যাক্টিভিটির জন্য আরও দু কেজি, মোট ৫ থেকে ৬ কেজি ওজন কমা উচিত।
এই ক্ষেত্রে যে সব থেকে বেশি উপকৃত হবে সে হলো শুধু আপনার শরীর।
সুতরাং,সলিউশন যদি চান পার্মানেন্টভাবে করুন , একজন ক্লিনিকাল ডায়েটিশিয়ান হিসেবে আমি বলব ব্যালেন্স ডায়েটের সাহায্য নিন….।
হেলদি খাওয়া-দাওয়া করুন মানসিক ও শারীরিকভাবে নিজেকে হেলদি রাখুন এবং ওজন কমান।