যৌথ জীবন শুরু করার আগে ভাবী স্বামী ও স্ত্রীর রক্ত পরীক্ষা আবশ্যক। আমাদের দেশে এ ব্যাপারে এখনো বেশি সচেতনতা আসেনি। অথচ বিয়ের আগে ব্লাড টেস্ট পরের প্রজন্মের অনেক শারীরিক সমস্যা প্রশমিত করতে সহায়তা করে। বিষয়টি নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক। বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা স্বামী-স্ত্রীর জন্য জরুরী। রক্ত পরীক্ষা করে ব্লাড গ্রুপ জানা যাবে।
ব্লাড গ্রুপ
প্রথমেই রক্তের গ্রুপগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। রক্তের গ্রুপের দুটি বিভাজন রয়েছে । এবিও পদ্ধতি ( অর্থাৎ এ, বি, এবি এবং ও ) অন্যটা আরএইচ ফ্যাক্টর ( আরএইচ পজেটিভ এবং আরএইচ নেগেটিভ ) ।
আরএইচ ফ্যাক্টর একটি জিনবাহিত প্রোটিন যা লোহিত রক্তকণিকার ভেতরে থাকে। যাদের ব্লাড টাইপ পজিটিভ তাদের রক্তে আরএইচ প্রোটিন থাকে। ব্লাড টাইপ নেগেটিভ হলে এই প্রোটিন থাকে না।
আরএইচ ফ্যাক্টরই ঠিক করে দেয়- ব্লাডগ্রুপ পজেটিভ হবে, না নেগেটিভ হবে । ব্লাড গ্রুপগুলো হলো- এ পজেটিভ, এ নেগেটিভ, বি পজেটিভ, বি নেগেটিভ, এবি পজেটিভ, এবি নেগেটিভ, ও পজেটিভ এবং ও নেগেটিভ ।
স্বামীর রক্তের গ্রুপ যদি পজিটিভ হয়, তাহলে স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ পজিটিভ হলে ভালো। আবার স্বামীর রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ হলে, স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ হওয়া বাঞ্ছনীয়। তবে স্ত্রীর ব্লাডগ্রুপ পজিটিভ হলে ক্ষতি নেই। কিন্তু স্বামীর রক্তের গ্রুপ যদি পজিটিভ হয়, স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ একই গ্রুপের নেগেটিভ না হলেই ভালো। আর স্ত্রীর গ্রুপ যদি নেগেটিভ হয়, তবে তার জন্য নেগেটিভ গ্রুপধারী স্বামী হলে অনাগত সন্তানের স্বাস্থ্য বিষয়ক কিছু ঝুঁকি এড়ানো যায়। বিষয়টি এভাবে বলা যেতে পারে, স্বামীর রক্ত পজিটিভ আর স্ত্রীর যদি নেগেটিভ হয়, তবে প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রে বড় মাপের জটিলতা না হলেও দ্বিতীয় সন্তান থেকে সমস্যা শুরু হতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রথম সন্তান যদি পজিটিভ গ্রুপের রক্ত নিয়ে জন্মগ্রহণ করে এবং দ্বিতীয় সন্তানেরও যদি রক্ত পজিটিভ হয় সে ক্ষেত্রে বেশি জটিলতা দেখা দেয়। যদি কারো স্বামীর গ্রুপ পজিটিভ ও স্ত্রীর গ্রুপ নেগেটিভ হয়, তবে সন্তান প্রসবের আগেই স্ত্রীর শরীরে বিশেষ ইমিউনোগ্লোবিউলিন প্রয়োগ করে মৃত্যুর আশঙ্কা কমানো যায়।
স্বামী ও স্ত্রী শরীরে থাকা জিন অনেক অসুখের কারণ হতে পারে, যেমন—থ্যালাসেমিয়া এবং সিকল্ সেল ডিজিজ। বিশেষ করে, মা-বাবা থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক হলে সন্তানের এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অন্য দিকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একজন হেপাটাইটিস – বি রোগে আক্রান্ত হলে অন্যজনেরও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। রক্ত পরীক্ষা করলে এ ব্যাপারে অনেক তথ্য জানা যায়। ফলে দাম্পত্যজীবন নীরোগ হওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতে সন্তানের ব্যাধি সারাতে সুবিধা হতে পারে।
সিফিলিস
বিয়ের আগে ব্লাড টেস্ট করলেই জানা যাবে পাত্র বা পাত্রী কেউ সিফিলিসের জীবাণু বহন করছে কি না । ভিডিআরএল টেস্ট করলে জানা যাবে দুজনের কারো যৌন রোগ আছে কি না। মনে রাখা দরকার, সিফিলিসে আক্রান্ত বাবা-মায়ের সন্তান বিকলাঙ্গ হতে পারে । এছাড়া ব্লাড টেস্ট করেই এইডসের জীবাণুর অস্তিত্ব জেনে নেওয়া সম্ভব।
থ্যালাসেমিয়া
রক্ত পরীক্ষা করিয়ে দেখে নিতে হবে ভাবী স্বামী বা স্ত্রী থ্যালাসেমিয়ার বাহক কি না । পাত্র-পাত্রীর শরীরে থ্যালসেমিয়া থাকলে তাদের সন্তানও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। থ্যালাসেমিয়া জিনবাহিত রোগ।
হেপাটাইটিস – বি
হেপাটাইটিস-বি মারাত্মক সংক্রামক ব্যাধি। পাত্র বা পাত্রী যেকোন একজনের দেহে এর ভাইরাস থাকলে অন্যজনের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আরো বড় চিন্তার বিষয় হল, অনাগত সন্তানের মধ্যেও রোগটি দেখা দিতে পারে। মনে রাখতে হবে এটি একটি মারক ব্যাধি। তাই বিয়ের আগেই রক্ত পরীক্ষা করিয়ে জেনে নেওয়া উচিৎ পাত্র কিংবা পাত্রীর হেপাটাইটিস-বি আছে কি না।
ইনফার্টিলিটি
বিয়ের পর স্বামী বা স্ত্রীর যে কারোর কোনও ত্রুটির জন্য সন্তান ধারণে অসুবিধা বা বন্ধ্যাত্ব (Infertiity) দেখা দিতে পারে। লাইফস্টাইলের পরিবর্তনের কারণে তরুণ প্রজন্মের ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে বেশ কিছু শারীরিক সমস্যাও তীব্র হয়ে উঠছে। ল্যাপটপের সামনে অনেকটা সময় কাটানোর প্রতিক্রিয়া হিসেবে ছেলেদের দৃষ্টিশক্তির সমস্যার সঙ্গে দৈহিক সমস্যাও তৈরি হচ্ছে। তেমনই পুরুষদের স্পার্ম কাউন্ট কমছে। মেয়েদের ক্ষেত্রেও অনেক সমস্যা হচ্ছে। তার কারণ বেশিরভাগ মেয়েই PCOD এর সমস্যায় ভুগছেন। এক জায়গায় বসে দীর্ঘ সময় কাজ করা, জাঙ্ক ফুড খাওয়া এবং শারীরিক কসরত না করার ফলে মেয়েদের ওজন বাড়ছে যার জেরে পিসিওডি দেখা দিচ্ছে। এই সমস্যায় ভোগা মেয়েদের নিয়মিত হরমোনের ওষুধও খেতে হচ্ছে। পাশাপাশি শরীরে আরো কিছু অসুবিধা সৃষ্টি হচ্ছে যেগুলি জননতন্ত্রের ওপর ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। তার ফলে সন্তান ধারণে বাধা আসছে। ইনফার্টিলিটি টেস্ট করলে পুরুষ ও নারীর জননতন্ত্রের এই সব অপূর্ণতা ধরা পড়ে। ভাবী স্বামী-স্ত্রী তা জেনে নিলে তাঁদেরই ভালো। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এই সব ব্যাপারে ধারণা পাওয়া সম্ভব।