স্মৃতির সঙ্গে প্রতিমুহূর্তের লড়াই, ডিমেনশিয়া রোগীরা ভুলে যান তাদের রোজকার স্বাভাবিক কাজকর্মও। চশমা কোথায় রেখেছেন বা রোজকার ওষুধ, এমনকী ভুলে যান খাবার খেয়েছেন কিনা তাও। চেষ্টা করেও মনে করতে পারেন না
কোথায় রেখেছেন প্রয়োজনীয় জিনিস। স্বাভাবিক ভাবেই তাই প্রয়োজন হয় অন্যের সাহায্যের। প্রয়োজন হয় একজন বন্ধু বা সর্বক্ষণের সঙ্গীর যিনি প্রতিমুহূর্তে আগলে রাখবেন ডিমেনসিয়া ও অ্যালজাইমারের (Alzheimer) রোগীদের সাথে যারা সর্বক্ষণ থাকেন, আক্ষরিক অর্থে তাদের বলা হয় শুশ্রূষাকারী বা কেয়ার গিভার (Care giver)। সম্পূর্ণ নিরাময় না হলেও, চিকিৎসা এবং ওষুধের মাধ্যমে ডিমেনশিয়ার লক্ষণগুলিকে কমানো যায়৷ তবে এবার এই ডিমেনশিয়া এবং অ্যালঝাইমার্স আক্রান্ত রোগীদের প্রতিদিনের বেঁচে থাকাকে সহজ করতে ‘মেমোরি’ ক্লিনিক চালু করল মল্লিকবাজারের ইন্সটিটিউট অফ নিউরো সায়েন্সেস (Institute of neuroscience kolkata). গত ১লা অক্টোবর একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মেমোরি ক্লিনিকের উদ্বোধন হয়। প্রতিদিনের জীবনযাপনে যাদের অন্যের সাহায্য লাগে যাদের, তাঁদের স্মৃতিকে ফিরিয়ে আনতেই এই উদ্যোগ বলে জানিয়েছে INK কর্তৃপক্ষ।
তবে শুধু রোগীকেই নয় তাঁর শুশ্রূষাকারী বা কেয়ার গিভার ও পরিবারের সদস্যদেরও এই রোগের সঙ্গে লড়াইয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এই মেমোরি ক্লিনিকে। ডিমেনশিয়া এবং অ্যালঝাইমার্স-এর মতো মস্তিষ্কের এই জটিল রোগ প্রভাব ফেলে কথাবার্তা, খাওয়া দাওয়া, ঘুম, চলাফেরা, এমনকি আচরণ বা আবেগেও। দীর্ঘদিন যাবত যাঁরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তাঁদের মতে মেমোরি ক্লিনিক এই অসুখ থেকে সেরে উঠতে অনেকটাই সাহায্য করবে। তবে এক্ষেত্রে শুশ্রূষাকারী বা বাড়ির লোকজন কীভাবে রোগীকে সাহায্য করবেন, সেই বিষয়ে ওইদিন একটি বুকলেটও প্রকাশ করা হয়। এর সাথে আয়োজন করা হয় ডিমেনশিয়া রোগীদের জন্য একটি আঁকার প্রতিযোগিতা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শ্রীমতি জয়িতা বসু, ডাঃ অত্রি চ্যাটার্জি, প্রোফেসর ডঃ বিভুকল্যাণী দাস, ডাঃ ঋষিকেশ কুমার, ডাঃ সিদ্ধার্থ শঙ্কর আনন্দ, ডাঃ মহুয়া গোলদার ( ছবিতে বাঁদিক থেকে)। ওইদিন ইন্সটিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সের তরফ থেকে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়, যেখানে বলা হয়েছে ২০২২ সালের মধ্যে পৃথিবীর উন্নতশীল দেশ গুলির ৬০ বছর এবং তার বেশি বয়স্ক মানুষদের ৭০% ডিমেনশিয়া রোগের শিকার হবেন৷ এর মধ্যে ভারতের পরিসংখ্যান ১৪.২%। মেমোরি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দিয়েছেন ইন্সটিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সের ডাঃ অত্রি চ্যাটার্জি এবং ডাঃ সিদ্ধার্থ শঙ্কর আনন্দ।
একটি বিষয় অবশ্যই মনে রাখা প্রয়োজন, অ্যালঝাইমার্স কোনো উপসর্গহীম রোগ নয়, বরং আক্রান্ত ব্যক্তি বা তাঁর পরিবার ধীরে ধীরে বুঝতে পারেন যে, তার মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু পরিবর্তন ঘটে চলেছে৷
সাধারণত যে লক্ষণগুলি একজন ডিমেনশিয়া আক্রান্ত রোগীর মধ্যে দেখতে পাওয়া যায় সেগুলি হল-
স্মৃতিশক্তি হ্রাস
এটি অ্যালঝাইমার্সের একটি অন্যতম প্রধান লক্ষণ। স্মৃতিশক্তি হ্রাসকে এই রোগের প্রাথমিক অবস্থার লক্ষণ হিসেবেই সাধারণত বিবেচনা করা হয়। খানিক আগেই হওয়া কোনও জিনিস ভুলে যান রোগী। গুরুত্বপূর্ণ কাজ ভুলে যাওয়া, তারিখ ভুলে যাওয়া, এমনকি খুব পরিচিত কারও নাম অব্ধি মনে করতে পারেন না অ্যালঝাইমার্স আক্রান্ত রোগী। কখনও আবার একই প্রশ্ন বারবার করেন। সমস্যা যেমনটাই হোক, এর ফলে পরিবারের সদস্যদের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ে।
মুড সুইং
অ্যালঝাইমার্সে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে হঠাৎ করেই কোনো কারণ ছাড়াই বিভ্রান্তি, সন্দেহ প্রকাশ, হতাশা, ভীতি বা অযথা চিন্তা ইত্যাদি দেখা যায়।
কথা বলতে বা লিখতে সমস্যা
কোনও বিষয় বুঝতে বা সবার সাথে কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। কথা বলতে বলতে মাঝপথে থেমে যাওয়া বা একই কথা বারবার বলার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
রোজের কাজ শেষ না হওয়া
অ্যালঝাইমার্স আক্রান্ত রোগী রোজকার কাজ শেষ করতে পারেন না বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। এমনকী পরিচিত জায়গায় যাওয়া, জিনিস গুছিয়ে আনা বা ঘরের সাধারণ কাজ করতেও সমস্যা হয়।
স্থান কাল সংক্রান্ত বিভ্রান্তি
এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সময়, তারিখ, ইত্যাদি ভুলে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এমনকী কোথায় আছেন বা কীভাবে সেখানে পৌঁছালেন তা নিয়েও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়৷