মানবদেহের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল ব্রেন। বুদ্ধিমত্তা, স্মৃতিশক্তি এবং অন্যান্য বিশ্লেষণমূলক ভাবনা, হাঁটাচলা নিয়ন্ত্রণ, শ্বাসকার্য, হৃদযন্ত্রের কাজ পরিচালনা করা সবই হয় ব্রেনের সাহায্যে। ব্রেনের দরকার নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন এবং গ্লুকোজের। এই দু’টি উপাদানের অভাবে ব্রেনে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এখানেই বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে নিউরোক্রিটিক্যাল কেয়ার। প্রাণঘাতী স্নায়ুসংক্রান্ত অসুখের ক্ষেত্রে সময়ে ব্যবস্থা নিয়ে রোগীর শারীরিক পরিস্থিতির উন্নতি করে তোলে নিউরোক্রিটিক্যাল কেয়ার। স্নায়ুসংক্রান্ত সমস্যার মধ্যে রয়েছে স্ট্রোক, মোটর অ্যাক্সিডেন্ট, নার্ভাস সিস্টেমের সংক্রমণ, নিউরোমাসকুলার ডিজঅর্ডার ইত্যাদি।
দুর্ঘটনার কথা আলাদাভাবে বলা প্রয়োজন। অ্যাক্সিডেন্টের পর দুর্ঘটনাগ্রস্তকে প্রাথমিকভাবে জীবনদায়ী চিকিৎসা দেওয়ার পর পুনরায় যাতে পরিস্থিতির অবনমন না ঘটে তার জন্য দরকার পড়ে ইনভেসিভ (কাটাছেঁড়া বা অপারেশন সংক্রান্ত) এবং নন ইনভেসিভ বা কাটাছেঁড়া নয় এমন পদ্ধতির। একইরকমভাবে মায়াস্থেনিয়া অথবা গুলেনবেরি সিনড্রোম-এর মতো অসুখে শ্বাসকার্য চালিয়ে যাওয়ার জন্য দরকার পড়ে নিউরোক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের।
এমনকী স্নায়ুসংক্রান্ত অপারেশনের পরেও নিউরোক্রিটিক্যাল কেয়ার মনিটরিং-এর প্রয়োজন হয়। এই সমস্ত সর্বাধুনিক পরিষেবাগুলিই রয়েছে কলকাতার ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স প্রতিষ্ঠানের নিউরোক্রিটক্যাল ইউনিটে।
সম্প্রতি হাসপাতালের তরফে ১৬-এবং ১৭ সেপ্টেম্বর এই দু’দিনব্যাপী ‘আপডেট ইন নিউরোক্রিটিক্যাল কেয়ার ২০২৩’ শীর্ষক এক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল।
অনুষ্ঠানের অর্গ্যানাইজিং চেয়ারম্যান ছিলেন অ্যাকাডেমিক এবং অ্যানাস্থেশিয়া, ক্রিটিক্যাল কেয়ার, পেন ক্লিনিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ বিভূকল্যাণী দাস, সায়েন্টিফিক চেয়ারপার্সেন ডাঃ এ শোভনা (কনসালটেন্ট ইন ক্রিটিক্যাল কেয়ার এবং স্ট্রোক মেডিসিন), অর্গ্যানাইজিং সেক্রেটারি ডাঃ রাহুল ঘিয়া (কনসালটেন্ট ইনটেনসিভিস্ট), ডাঃ অরিজিৎ কুমার বরাই (কনসালটেন্ট ইনটেনসিভিস্ট)।
এই বছরের সম্মেলনের থিম ছিল ‘সেভ ব্রেন, সেভ লাইফ’ যার মূল মর্মার্থ হল স্নায়ুসংক্রান্ত জটিল সমস্যায় আক্রান্ত রোগীকে জীবন ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব শুধুমাত্র সময়ে সঠিক ব্যবস্থা নিলে। একাধিক স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ এবং নামী চিকিৎসক ওই সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন।
প্রথমদিনে ছিল ইনটেনসিভিস্টদের জন্য ছিল ইলেকট্রোফিজিওলজি, নিউরোমনিটরিং, ডিফিকাল্ট এয়ারওয়ে নিয়ে কর্মশালা।
কলকাতায় প্রথম নিউরোক্রিটিক্যাল কেয়ার নিয়ে এমন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হল।
ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে রোগীর হঠাৎ খিঁচুনির সমস্যা, নিউরোমাসকুলার ডিজঅর্ডার, ব্রেনে অস্বাভাবিক ইলেকট্রিক্যাল অ্যাকটিভিটি কীভাবে সামলাতে হবে তা চিকিৎসকদের বুঝতে সাহায্য করবে ইলেকট্রোফিজিওলজি নিয়ে কর্মশালা। এছাড়া নিউরোমনিটরিং, অপটিক নার্ভ স্টিলথ ডায়ামিটার, ট্রান্সক্রেনিয়াল ডপলার এর নতো পরীক্ষা সহ ব্রেনে অক্সিজেনের মাত্রা জানার নতুন পরীক্ষা সম্পর্কেও আলোচনা চলে ওই কর্মশালায়।
এছাড়া শিরদাঁড়ায় চোট, জটিল এপিলেপসি, নিউরো ইনফেকশন, ভেন্টিলেটর ব্যবহারের ধরন, নিউরোমাসকুলার ডিজঅর্ডার, অ্যাকিউট স্ট্রোক, ব্রেন ডেথ, অঙ্গদান ইত্যাদি বিষয় নিয়েও হয় আলোচনা।