আমরা জানি পাঁজরের নিরাপত্তার ঘেরাটোপে থাকে ফুসফুস। এই পাঁজর আর ফুসফুসের নিরাপত্তার মাঝে বা ফুসফুসের বাইরে একটা আস্তরণ থাকে। এই আবরণকে বলে প্লুরা। প্লুরার দু’টি স্তর থাকে। এউই স্তরের মধ্যবর্তী জায়গাটিকে বলে প্লুরাল স্পেস। এই ফাঁকা জায়গাটিতে কিছুই থাকে না। এমনকী হাওয়াও থাকে না। এই প্লুরাল স্পেস-এ যখন ফ্লুইড জমে যায় তখনই তাকে বলে বুকে জল জমা। এভাবে ফ্লুইড জমতে পারে ডানদিকে বা বামদিকের ফুসফুসে বা উভয় দিকেই! অর্থাৎ ফুসফুসে জল জমা বলতে মূলত ওই প্লুরাল স্পেস-এ জল জমাকেই বোঝায়। চিকিৎসা পরিভাষায় এই সমস্যার নাম প্লুরাল ইফিউশন।
ফুসফুসে জল জমার কারণ কি জল বেশি খাওয়া?
বেশি জল পানের সঙ্গে কোনওভাবেই ফুসফুসে জল জমা সম্পর্কিত নয়। ফুসফুসে জল ঢোকে চুইঁয়ে চুইঁয়ে। অর্থাৎ ফুসফুসের গায়ে যে ধমন, শিরা রয়েছে বা পাঁজরে সঙ্গে থাকা মাংসপেশিতে যে আর্টারি, শিরা ইত্যাদি রয়েছে সেগুলি থেকেই ফ্লুইড চুঁইয়ে পড়ে প্লুরাল স্পেসে জমা হতে থাকে।
কখনও কখনও এই জমা জলে প্রোটিনজাতীয় পদার্থ বেশি থাকে। আবার কখনও কখনও এই এই ফ্লুইডে প্রোটিন একদমই থাকে না। সাধারণ জল এবং শরীরে থাকা নুন জমে থাকে।
এই দু’ভাবেই জল জমতে পারে। মূলত প্রেশারের তারতম্যে জল জমে। রোজকার জল পানের সঙ্গে বিষয়টির কোনও সম্পর্ক নেই।
মনে রাখবেন
ফুসফুসের দু’দিকে জল জমলে তার কারণটি সম্ভবত লুকিয়ে থাকে ফুসফুসের বাইরে। অর্থাৎ অন্য কোনও কারণে জমে ফুসফুসে জল। একদিকে জল জমলে বিষয়টি ফুসফুসের সঙ্গেই সম্পর্কিত হয়।
কীভাবে বুঝবেন বুকে জমছে জল?
যেদিকে জল জমে সেদিকটা একটু ভারী বোধ হয়। বুকে চাপ ধরে আছে বলে মনে হয়। এর সঙ্গে তাকে শুকনো কাশি। কাশিতে কিন্তু কফ উঠবে না। জল বেশি জমলে একটু হাঁটতে গেলেই হাঁফ ধরে যাবে। সুতরাং— বুক ভারী হয়ে যাওয়া, শুকনো কাশি হওয়া এবং একটু হাঁটলেই জল জমে যাওয়ার সমস্যা থাকলে বুঝতে হবে ফুসফুসে জল জমার সমস্যা হচ্ছে।
মনে রাখবেন যত বেশি শ্বাসকষ্ট হবে তত বেশি জল জমার আশঙ্কা। আর বেশি জল জমার অর্থই, খারাপ অসুখে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যাওয়া।
কোন বয়সে বুকে জল জমার সমস্যা হয়?
সাধারণত খুব কম বয়সে এমন হতে পারে। বিশেষ করে কম বয়সে টিউবারক্যুলোসিস হলে এমন হতে পারে। নিউমোনিয়ার মতো সংক্রমণের কারণেও এমনটি ঘটতে পারে। এমনকী ক্যান্সারের কারণেও জমতে পারে জল। অতএব ঠিক কোন কারণে জল জমছে তা বোঝার চেষ্টা করতে হবে ও কোনও জল জমাকেই সহজভাবে নেওয়া যাবে না। বিশেষ করে সেই জল জমা যদি শ্বাসকষ্টের কারণ হয়ে ওঠে তাহলে রোগ অবহেলা করা যাবে না।
কেন বুকে জল জমা অস্বাভাবিক
- এমন কোনও শারীরিক অবস্থা নেই যেক্ষেত্রে বুকে জল জমা স্বাভাবিক। সবসময়ই বুকে জল জমা অসুখের ইঙ্গিত দেয়। বিশেষ করে ফুসফুসে প্রোটিন ছাড়াই জমতে পারে লিভারের সমস্যা, কিডনির অসুখ, হার্ট ফেলিওরের কারণে।
- প্রোটিনজাতীয় পদার্থ দিয়ে ভরতি জল জমলে তা ইঙ্গিত করে ফুসফুসের কোনও সমস্যার কারণে হয়েছে। আর আমাদের দেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কমবয়সিদের বুকে জল জমা সিংহভাগ ক্ষেত্রে টিউবারক্যুলোসিসের দিকে ইঙ্গিত দেয়। বিশেষ করে ৩০ বছরের কম বয়সিদের ক্ষেত্রে এই ধরনের বুকে জল জমা বেশ ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে।
- আবার বয়স চল্লিশ, ধূমপায়ী এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে বুকে ফ্লুইড জমলে সাবধান হতেই হবে। বিশেষ করে ফুসফুসের ক্যান্সারের কথা আমাদের মাথায় রাখতে হবে।
- তাই যে কোনও কারণেই জল জমুক না কেন, তা সে অল্প জমুক বা বেশি জমুক অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।
চিকিৎসার প্রাথমিক পর্যায়
বুকে জমে থাকা জলের পরীক্ষা করতেই হবে। পরীক্ষা করে যদি দেখা যায় তার মধ্যে প্রোটিন জাতীয় উপাদান বেশি তাহলে দেখতে হয় কোন ধরনের প্রোটিন রয়েছে, রেয়েছে কতখানি লবণ, সুগার, এডিএ এনজাইমের মাত্রা। এছাড়া ফ্লুইডে কোন ধরনের কোষ আছে তাও দেখা দরকার পড়ে। এরপর সেই বুঝে চিকিৎসা পদ্ধতি স্থির হয়।
জল কি বের করতে লাগে?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জল বের করার দরকার পড়ে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, টিউবারক্যুলোসিসের রোগীকে ওষুধ দিলে ধীরে ধীরে জল শুকিয়ে যায়। তবে সাধারণ চিকিৎসা করেও জল না শুকোলে তখন জল বের করার দরকার পড়ে। সেক্ষেত্রে একটা ছোট্ট টিউব বুকের মধ্যে প্রবেশ করানো হয় ও জল বের করে নেওয়া হয়।
কীভাবে এড়ানো যায় বুকে জল জমা?
ক্যান্সারের জন্য বুকে জল জমে। সেক্ষেত্রে ফুসফুসের ক্যান্সার এড়াতে ধূমপান করবেন না। তামাক সেবনও করা চলবে না। ফুসফুসের যে কোনও সমস্যা দেখা দিলে আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
টিউবারক্যুলোসিস প্রতিরোধে জন্মের পরেই বাচ্চাকে দিতে হবে বিসিজি টিকা। এছাড়া পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর রাখতে হবে। বাড়িতে কারও টিউবারক্যুলোসিস থাকলে বাকিরা সাবধান হন ও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে প্রতিরোধমূলক ওষুধ খান।