চারিদিকে কোভিড মহামারী পাশাপাশি এ যেন গোদের উপর বিষফোঁড়া। সম্প্রতি ডেঙ্গির সঙ্গে স্ক্রাব টাইফাস, দুই মারাত্মক রোগে আক্রান্ত শিশু, যাকে সুস্থ করে তুললেন কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক।
মাত্র তিন বছর বয়সী এই শিশুটির নাম উৎসব। বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথিতে। গত ১৬ জুলাই থেকে ধুম জ্বরে একেবারে কাবু হয়ে পড়ে শিশুটি। করোনা সন্দেহে পরীক্ষা করা হলেও, রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। কিন্তু জ্বর কমেনা কিছুতেই।
কাঁথির প্রিন্সিপ্যাল কলোনির বাসিন্দা, উৎসবের বাবা-মা তাকে নিয়ে কাঁথি, খড়গপুর-সহ একাধিক হাসপাতালে ঘুরে বেড়ান। কিন্তু কোনোভাবেই অবস্থার কোনও উন্নতি হয়না। শেষপর্যন্ত উৎসবকে আনা হয় কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। শিশু বিশেষজ্ঞ সুমন্ত ভট্টাচার্যের অধীনে বাগুইহাটির একটি নার্সিং হোমে ভর্তি করানো হয় তাকে। তার শারীরিক পরিস্থিতি দেখে করোনা, ডেঙ্গি সহ একাধিক টেস্ট করানো হয়। রিপোর্ট মিলতেই রীতিমতো অবাক চিকিৎসকরা। শিশুটি একইসঙ্গে আক্রান্ত হয়েছে ভাইরাস ঘটিত ডেঙ্গি ও ব্যাকটেরিয়া ঘটিত স্ক্রাব টাইফাসে। এভাবে একইসঙ্গে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ দেখে তাজ্জব বনে যান চিকিৎসকরা। তারা বলেন এটি বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা।
হাসপাতালের চিকিৎসক সুমন্ত ভট্টাচার্য সংবাদমাধ্যমকে এ প্রসঙ্গে বলেন, স্ক্রাব টাইফাস সাধারণত হয় মাইট বাইট থেকে, মূলত রিকেটসিয়া নামক পোকাকেই দায়ী করা হয় । এই মরশুমে ডেঙ্গি ও স্ক্রাব টাইফাসের সংক্রমণের একাধিক ঘটনা ঘটলেও একইসঙ্গে দুটি সংক্রমণের শিকার হওয়া শিশুর সংখ্যা অত্যন্ত বিরল। তাই কোভিডের পাশাপাশি এই দুই রোগ নিয়েও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
চিকিৎসায় ধীরে ধীরে সাড়া দিতে শুরু করে উৎসব। সাতদিন পর জ্বর কমে। চিকিৎসকরা জানান, আরেকটু দেরি হলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যেত৷ ফুসফুস, কিডনি, হৃদযন্ত্র, এমনকি মস্তিষ্ক পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা ছিল। চিকিৎসক সুমন্ত ভট্টাচার্য জানান, “আমরা কোভিড পরিস্থিতির মধ্যে জ্বর এলে কোভিড টা নিয়েই ভাবি৷ কিন্তু এখন জ্বর আসা মানে, এই দুটো ইনফেকশনও কিন্তু হতে শুরু করলো৷ সুতরাং এই বিষয়টা আমাদের ভালো ভাবে বুঝতে হবে এবং এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে৷”
উল্লেখ্য, এমন এক মারাত্মক পরিস্থিতি হলেও সংক্রমণের ধাক্কা কাটিয়ে এখন অনেকটাই সুস্থ ৩ বছরের উৎসব। তাঁর চিকিৎসকদের আশা সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে অতি শীঘ্রই ছেডে় দেওয়া হবে উৎসবকে। উৎসবের মা টি বেবি জানান, ” এতদিন পর বাড়ি যাচ্ছি, আমি সত্যিই খুব খুশি। ভাবতে পারিনি যে আমার ছেলে ওই অবস্থা থেকে এত তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে৷ ডঃ সুমন্ত ভট্টাচার্যকে ধন্যবাদ, আমার ছেলের খুব ভালো ভাবে ট্রিটমেন্ট হয়েছে। স্যারের পুরো টিমই ভীষণ ভীষণ হেল্পফুল৷”
ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপায়ঃ
- ডেঙ্গুর ভাইরাসের এখনও অব্ধি কোনও স্বীকৃত টিকা নেই। তাই এর প্রতিরোধ নির্ভর করে জীবাণুবাহী মশার জন্ম ও বংশবিস্তারে নিয়ন্ত্রণ ও তার কামড় থেকে বাঁচার উপরে।
- মশা নিয়ন্ত্রণের প্রথম পদ্ধতি হল এর বৃদ্ধির সম্ভাব্য পরিবেশকে ধ্বংস করা। ডেঙ্গুর মশা সাধারণত স্থির ও পরিষ্কার জলে ডিম পারে। তাই বাড়ির চারপাশে যাতে কোনও জায়গায় জল না জমে থাকে তার দিকে নজর দিতে হবে। বাড়ির আশপাশের ভাঙাপাত্র, নর্দমা, ডোবা, এমনকি ফুলের টবেও যাতে জল জমতে না পারে, তা দেখা ও পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত জরুরি।
- মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন রকম মশা নিরোধক কীটনাশক অথবা বায়োলজিক্যাল কন্ট্রোল এজেন্ট জমা জলের চারপাশে স্প্রে করা যেতে পারে। তবে পরিবেশের উপর কীটনাশকের খারাপ প্রভাবের কথা মাথায় রেখে জল জমতে না দেওয়াটাই ভাল উপায়।
- ছাড়া পুরো শরীর পোশাকে ঢেকে রাখা, ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করার উপরে জোর দিতে হবে।
- ডেঙ্গু আক্রান্তকে অবশ্যই সব সময়ে মশারির ভিতর রাখতে হবে, যাতে মশা তাকে কামড়াতে না পারে। ডেঙ্গু-র মশার কামড় থেকে বাঁচতে, ডেঙ্গুর থেকে বাঁচতে একমাত্র উপায় হলো, সচেতনতা ও প্রতিরোধ, এর মাধ্যমেই ডেঙ্গুর হাত থেকে বাঁচা সম্ভব।