স্লিপ ওয়াকিং (Sleepwalking) বা ঘুমিয়ে হাঁটার অভ্যাস বলতে বোঝান হয় ঘুমের মধ্যে চলাচল করার স্বভাবকেই। এই সমস্যার কথা কেউ শুনেছেন আবার কেউ দেখেওছেন। কিন্তু নিজেই কি এই সমস্যায় আক্রান্ত ? নিজে থেকে তা কখনই জানা সম্ভব নয়। কারণ, স্লিপওয়াকিং (Sleepwalking) বা ঘুমিয়ে হাঁটার অভ্যাস আছে কি না তা কখনোই কোনো সোমনাম্বুলিস্ট (Somnambulist) বুঝতে পারবেন না। স্লিপওয়াকিং (Sleepwalking) বা ঘুমিয়ে হাঁটার অভ্যাস এক ধরনের অসুখ। যার নাম সোমনাম্বুলিজম (Somnambulism)। আর এই অসুখে আক্রান্ত ব্যক্তিকেই বলা হয় সোমনাম্বুলিস্ট (Somnambulist) ।
ঘুমিয়ে হাঁটার অভ্যাস সাধারণত দেখা যায় ঘুমের এক বিশেষ অবস্থায়, ঘুম যখন ধীরে ধীরে গভীর থেকে হালকা হয় বা ঘুম ভাঙার কিছু আগের মুহূর্তে স্লিপ ওয়াকিং বা ঘুমিয়ে হাঁটার অভ্যাস দেখা দেয়। স্লিপ ওয়াকিং (Sleepwalking) বা ঘুমিয়ে হাঁটার অভ্যাস রয়েছে এমন মানুষেরা ঘুমিয়ে হাঁটার সময় কোনো রকম সাড়া দেয় না এবং এই সংক্রান্ত ঘটনা তার মনেও থাকে না। কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য স্লিপওয়াকিং (Sleepwalking) বা ঘুমিয়ে হাঁটার সময় অচেতন অবস্থায় কথাও বলতে দেখা যায়। যদিও স্বাভাবিক অবস্থায় কোন সোমনাম্বুলিস্ট (Somnambulist) তা মনে করতে পারে না ।
এই অভ্যাস সাধারণত ৪ থেকে ৮ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যেই দেখা যায়। তবে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও এই প্রবনতা লক্ষ্য করা যেতে পারে।
স্লিপ ওয়াকিং-রোগে আক্রান্ত কি ভাবে বুঝবেন ?
সোমনাম্বুলিজম (Somnambulism) আক্রান্ত রোগী সাধারণত-
- সততই নিজের ঘরের মধ্যেই ঘুরে বেড়ায়
- ধরতে গেলে পালানোর চেষ্টা করে
- চোখ প্রায় খোলা এবং কাঁচের মত স্থির স্বচ্ছ দৃষ্টি রাখে
- খুব ধীরে প্রশ্নের উত্তর দেয়, অথবা উত্তরই দেয় না
- ঘুমিয়ে হাঁটার কোনো কথা মনেই করতে পারে না
স্লিপ ওয়াকিং (Sleepwalking) বা ঘুমিয়ে হাঁটার কারণ
স্লিপওয়াকিং (Sleepwalking) বা সোমনাম্বুলিজম (Somnambulism) হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে।
পারিবারিক রোগ হতে পারে। একই দেখতে যমজ সন্তানদের মধ্যে স্লিপওয়াকিং (Sleepwalking) বা ঘুমিয়ে হাঁটার প্রবনতা দেখা যায়। পারিবারিক রোগ হিসাবে স্লিপওয়াকিং (Sleepwalking) বা ঘুমিয়ে হাঁটার লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভবনা সাধারণ মানুষের তুলনায় ১০ গুন বেশি। এছাড়াও বেশ কিছু কারণে মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন, যেমন-
- প্রয়োজনীয় ঘুমের ঘাটতি
- ঠিকঠাক সময় মত ঘুম না হওয়া বা ঘুমের স্বাভাবিক নিয়মের ব্যাঘাত
- মানসিক চাপ
- নেশা করা
- বিশেষ কিছু ধরনের ড্রাগ বা ওষুধ যেমন সেডাটিভ-হাইপোনোটিক্স (যেগুলো সাধারণত রিল্যাক্স হতে বা ঘুমোতে সাহায্য করে), নিউরোলেপ্টিক্স (মনোরোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত), স্টিমুলেন্টস (কার্যকারীতা বৃদ্ধিতে ব্যবহৃত) এবং এন্টিহিস্টামাইন্স (এলার্জির লক্ষণ সংক্রান্ত চিকিৎসায় ব্যবহৃত)
এই সমস্যা থাকলে তাদের মধ্যে আর কি কি শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে ?
- হৃদস্পন্দন সংক্রান্ত সমস্যা
- জ্বর
- হৃদযন্ত্রের প্রদাহ
- রাত্রিকালীন অ্যাজমা
- রাত্রিকালীন বদ্ধাবস্থা ( Nighttime Seizures)
- অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনে (ঘুমের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী শ্বাস বন্ধ অবস্থা)
- রেস্টলেস লেগ সিন্ড্রোম
- পোস্টট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার, প্যানিক এট্যাক অথবা মাল্টিপিল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারের মত ডিসোসিয়েটিভ অবস্থা জাতীয় মানসিক সমস্যা
স্লিপ ওয়াকিং (Somnambulism) সংক্রান্ত রোগ নির্ণয়
এই রোগ খুব সহজেই নির্ণয় করা যায়। রোগীর লক্ষণ এবং মেডিক্যাল হিস্ট্রি ডাক্তার জানতে চান। কয়েক ক্ষেত্রে স্লিপওয়াকিং (Sleepwalking) চলা কালীন শারীরিক পরিস্থিতির পর্যালোচনার জন্য কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন, যেমন –
কিছু সাধারণ শারীরিক পরীক্ষা করা হয়
স্লিপ স্টাডি (পলিসোমনোগ্রাফি)। এক্ষেত্রে রোগীকে একটা পরীক্ষাগারে রাত্রিযাপন করতে হয়, স্লিপওয়াকিং (Sleepwalking) বা ঘুমের মধ্যে হাঁটার সময় ঘুমন্ত অবস্থায় তার হৃদস্পন্দন, ব্রেইন ওয়েভ এবং আনুসঙ্গিক অবস্থা সংক্রান্ত তথ্য নেওয়া হয়।
ইসিজি। খুবই বিরল। যদি ডাক্তার মনে করেন মারাত্মক কোনো ঘটনার কারণে রোগী স্লিপওয়াকিং (Sleepwalking) বা সোমনাম্বুলিজম (Somnambulism) আক্রান্ত, সেক্ষেত্রে ব্রেইন এক্টিভিটি পর্যালোচনা করার প্রয়োজন হয়।
স্লিপওয়াকিং (Sleepwalking) বা সোমনাম্বুলিজম (Somnambulism) চিকিৎসা
জীবনযাত্রার কিছু অভ্যাস বদলেই স্লিপওয়াকিং (Sleepwalking) বা সোমনাম্বুলিজম (Somnambulism) সংক্রান্ত সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যায়। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় নিয়ম মত ঘুমের সাথে নির্দিষ্ট পরিমাণ মত ঘুমের অভ্যাস করতে হবে। কোনো রকম নেশা থাকলে তা থেকে বিরত থাকা দরকার। কোনো রকম ওষুধের কোর্স চলতে থাকলে ডাক্তারের সাথে তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার বিষয় কথা বলে নেওয়া যেতে পারে।
চিকিৎসার স্বার্থে সম্মোহন অথবা অ্যান্টিডিপ্রেশন বা প্রশান্তিদায়ক (স্যেডাটিভ) জাতীয় ওষুধ দেওয়া যেতে পারে।
যাদের এই সোমনাম্বুলিজম (Somnambulism) অর্থাৎ স্লিপওয়াকিং (Sleepwalking) বা ঘুমিয়ে হাঁটার অভ্যাস আছে তাদের সবসময়ই নিরাপদ পরিবেশে রাখা উচিৎ। বিশেষ করে তাদের ঘুমানোর সময় দরজা-জানলা এবং সিঁড়ির পথ ভালো ভাবে তালা বন্ধ রাখা দরকার। ধারালো বা সূচালো বস্তু, আগুন, বিদ্যুৎ, জল থেকে এই সোমনাম্বুলিজম (Somnambulism) আক্রান্ত রোগীদের নিরাপদ দূরত্বে রাখা উচিৎ।