ব্রেন টিউমার কেন হয়, সেই সম্পর্কে এখনও অবধি কোনও নির্দিষ্ট কারণ জানা সম্ভব হয়নি। টিউমার যে কোনও জায়গায় হতে পারে, সেভাবেই ব্রেনেও টিউমার হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। তবে কিছু ম্যালিগন্যান্ট টিউমার হওয়ার পিছনে জিনের অস্বাভাবিকত্ব দায়ী থাকে। তবে নির্দিষ্ট করে কোনও কারণের কথা বলা যায় না।
মোবাইল এবং ব্রেন টিউমার
মোবাইল ব্যবহার করলে ব্রেন টিউমার হয়— এই দাবির পিছনে প্রত্যক্ষ কোনও প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। আবার যাঁরা স্বল্প সময়ের জন্য মোবাইল ব্যবহার করেন, তাদের ক্ষেত্রে ব্রেন টিউমার কম হতে দেখা গিয়েছে—এইরকম তথ্যও নেই। তবে, এটুকু বলা যায়, দীর্ঘক্ষণ মোবাইলে কথা বলা বা মোবাইল নিয়ে কাজ করা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো নয়।
ব্রেন টিউমারের প্রকারভেদ
মাথার উপরে যে টিউমারগুলি হয় বা খালি চোখে যে টিউমার গুলিকে দেখা সম্ভব হয়, সেগুলিকে স্ক্যাল্প টিউমার বা স্কাল বেস টিউমার বলে। ব্রেন টিউমার হয় মস্তিষ্কের অন্দরে। এই টিউমারের উপস্থিতি জানার জন্য সিটি স্ক্যান, এমআরআই-এর সাহায্য নিতে হয়। ব্রেন টিউমারের মধ্যে কিছু হয় ম্যালিগন্যান্ট এবং কিছু বিনাইন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিনাইন টিউমার সার্জারির মাধ্যমে সম্পূর্ণ সেরে যায়। ম্যালিগন্যান্টের ক্ষেত্রে সমস্যাটা অন্য জায়গায়। এই ধরনের টিউমারের অনেকগুলি শ্রেণি রয়েছে। বয়সের সঙ্গে শ্রেণির পরিবর্তনও হয়। সাধারণত কমবয়সে যে টিউমার হয় তা নিচু শ্রেণীর হয়। সেক্ষেত্রে সার্জারির পরে, কেমো থেরাপি, রেডিওথেরাপির মাধ্যমে রোগ সারানোর ব্যবস্থা করা যায়। তবে তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণির টিউমারের ক্ষেত্রে চিকিৎসার ফলাফল ততটা সন্তোষজনক নয়।
ব্রেন টিউমারের উপসর্গ
ম্যালিগন্যান্ট এবং বিনাইন টিউমারের ক্ষেত্রে উপসর্গের কিছু প্রকারভেদ আছে। ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের ক্ষেত্রে খুব দ্রুত টিউমার বৃদ্ধি পায়। সেক্ষেত্রে প্রাথমিক উপসর্গ হল মাথা ব্যথা। সাধারণ মানুষের এই বিষয়ে সতর্ক হওয়া দরকার। কেউ সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ছিলেন, হঠাৎ করে মাঝেমধ্যেই মাথায় ব্যথা শুরু হল। এক্ষেত্রে সাধারণ ব্যথার ওষুধে কাজ নাও হতে পারে। এছাড়া হঠাৎ করে খিঁচুনি, ফিট হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া অনেকসময় দেখা যায় শরীরে একটাদিকে দুর্বল বোধ করছেন রোগী। কথা বলতেও অসুবিধা হচ্ছে। কারও কারও স্মৃতিভ্রম দেখা দেওয়ারও আশঙ্কা থাকে। অন্যদিকে বিনাইন টিউমারের উপসর্গ অনেক পরে দেখা যায়। এমনকী প্রায় টিউমার আকারে বড় হয়ে গেলেও সেভাবে লক্ষম প্রকাশ পায় না। তবে কিছু কিছু সমস্যা হয় যেমন কারও নাম মনে রাখতে না পারা, ছোটখাট বিষয়গুলি স্মরণে রাখতে না পারা ইত্যাদি। এছাড়া হঠাৎ আচার ব্যবহারে পরিবর্তন দেখা দিলেও সাইকিয়াট্রিস্টের সঙ্গে নিউরোসার্জেন বা নিউরোলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে। তবে কিছু কিছু টিউমার আছে যেগুলির সুনির্দিষ্ট লক্ষণ থাকে। উদাহরণ হিসেবে ভেস্টিবিউলার সোয়ানোমা টিউমারের কথা বলা যায়। এই টিউমার কানের স্নায়ুতে হয়। এই টিউমারের একমাত্র উপসর্গ হল, রোগী কানে কম শুনতে পান। আবার পিট্যুইটারি গ্ল্যান্ডে টিউমার হলে চোখে দেখার সমস্যা হয়। আবার কিছু হরমোনের পরিবর্তন ঘটাতে পারে পিট্যুইটারি গ্ল্যান্ডের টিউমার। এক্ষেত্রে কারও কারও হাত-পা দেহের আকার অনুপাতে লম্বা হয়ে যায়!
ব্রেন টিউমার জানার জন্য কি কি টেস্ট করতে হয়?
সিটি স্ক্যান, এমআরআই পরীক্ষা।
কোন টিউমার জটিল?
স্কাল বেস টিউমার অপারেশন করা বেশ কঠিন। সাধারণত এই টিউমারগুলি বিনাইন হয়। তবে যখন প্রকাশ পায়, ততদিনে অনেকটাই বড় হয়ে যায়। সার্জারি করার সময় বেশ বেগ পেতে হয়। কারণ স্কাল বেস টিউমার তার আশেপাশে থাকা স্নায়ু, রক্তবাহী নালীগুলিকেও জড়িয়ে নেয়। ফলে সমগ্র টিউমারটিকে বাদ দেওয়া অনেকসময় সম্ভব হয় না। তখন কিছুটা রেখে বাকি অংশটুকু বাদ দেওয়া হয়। এরপর প্রয়োজন বুঝে রেডিয়েশন দিয়ে টিউমারের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
অপারেশনের পরে কি করা উচিত?
কোথায় টিউমার, কেমন টিউমার হয়েছে তার উপরে নির্ভর করে রোগীর সেরে ওঠা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্রেনে টিউমার অপারেশনের এক সপ্তাহের মধ্যে রোগী হাসপাতাল থেকে ছুটি পেয়ে যান। জটিল কিছু হলে ১০ দিন লাগতে পারে। তবে বাড়ি ফেরার পর, মাসখানেক বিশ্রাম নেওয়া দরকার।
সার্জারির ধরন
সবসময় ওপেন সার্জারির প্রয়োজন হয় না। পিট্যুইটারি গ্ল্যান্ডের কাছাকাছি যে টিউমারগুলি থাকে, সেগুলি নাকের মধ্যে দিয়ে ক্যামেরা এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি প্রবেশ করিয়ে বের করা সম্ভব। অর্থাৎ টিউমারের অবস্থানের উপর নির্ভর করে ওপেন সার্জারি করা হবে নাকি নাকের মধ্যে এন্ডোস্কোপি প্রবেশ করিয়ে সার্জারি করা যাবে।
বয়স এবং ব্রেন টিউমার
কিছু টিউমার আছে যা বয়সের উপর খানিকটা নির্ভর করে। মেডুলোব্লাস্টোমা টিউমার বাচ্চাদের বেশি হয়। বড়দেরও হয়, তবে বাচ্চাদের তুলনায় কম।
টিউমার চিকিৎসার পরে জীবনযাত্রা
আগেই বলা হয়েছে, টিউমার কেন হয় তা জানা যায় না। তাই জীবনযাত্রার আলাদা করে কোনও পরিবর্তন করার প্রয়োজন নেই। তবে সুস্থ থাকার জন্য পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়া দরকার। এছাড়া নিয়মিত এক্সারসাইজ করা উচিত প্রত্যেকের।