অপরিণত ইমিউন সিস্টেমের কারণে ছোটো বাচ্চাদের কাশি, সর্দি-জ্বর বা অন্যান্য সংক্রমণের আশঙ্কা থেকেই যায়। আর শিশুদের ঠান্ডা লাগা ও জ্বর হওয়া মানেই, তার সঙ্গে খাওয়া দাওয়াতে অনীহা ও কান্নাকাটি বাধ্যতামূলক। তাই এই সময় প্রত্যেক বাবা-মায়ের খুব সতর্ক থাকা আবশ্যক। যদিও সর্দি এবং ফ্লু শিশুদের একটি সাধারণ অসুখ, তবে আপনার বাচ্চাদের সুস্থ রাখতে সাহায্য করার জন্য আপনি স্মার্ট কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেন। আপনার সন্তানের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করার জন্য এখানে কয়েকটি উপায় বিবৃত করা হলো।
চিকিৎসকরা বলেন যে, আমরা যখন জন্মগ্রহণ করি আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা খুব কম থাকে। ধীরে ধীরে, শিশুরা ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং অন্যান্য সংক্রমক কণার সাথে লড়াই করে যা তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাস বাচ্চাদের জন্য একটি ইমিউন বুস্টার হিসাবে কাজ করতে পারে – তাদের ইমিউন সিস্টেমকে আরও কার্যকর করে তুলতে সাহায্য করে। তাই আজ আমরা আলোচনা করে নেবো যে আপনার বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আপনি কী কী করতে পারেন।
বাচ্চার ইমিউন সিস্টেমকে বৃদ্ধি করার জন্য কয়েকটি উপায়
১) বেশী পরিমাণে ফল এবং শাকসবজি খাওয়া- বিভিন্ন সবজি যাতে ক্যারোটিন আছে যেমন, গাজর, সবুজ মটরশুটি, কমলা এবং স্ট্রবেরি এগুলি খাওয়া বেশী ভালো, কারণ এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট থাকে। এগুলি শরীরের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইকারী শ্বেত রক্তকণিকা এবং ইন্টারফেরনের উৎপাদন বাড়াতে পারে, এবং অ্যান্টিবডি হিসেবেও কাজ করে। ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট সমৃদ্ধ খাবার প্রাপ্তবয়স্কদের ক্যান্সার এবং হৃদরোগের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগ থেকেও রক্ষা করে।
২) ঘুমের সময় বৃদ্ধি করুন- ডে-কেয়ার সিস্টেমে বলা হয় যে, সারাদিনে অন্তত দু বার লক্ষ্য করতে হবে যে আপনার শিশুটি বাচ্চার ইমিউন সিস্টেমকে বৃদ্ধি করার জন্য ঠিক ভাবে ঘুমোচ্ছে কিনা। সে যদি ঠিক ভাবে না ঘুমোয় তাহলে ঘুমোনোর আগে তাকে তার ক্রিব বা বিছানায় শুইয়ে দিন, এবং ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করুন এবং দরকার পড়লে তাকে তার ঘুমের সময়ের আগেই শুইয়ে দিন যাতে ঘুমের সময় বাড়ানো যায়। একটি শিশুর প্রতিদিন অন্তত ১৬ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন এবং প্রিস্কুলারদের ১০ থেকে ১৩ ঘন্টা ঘুমের দরকার।
৩) আপনার শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান- বুকের দুধে রয়েছে টার্বো-চার্জড অ্যান্টিবডি এবং শ্বেত রক্তকণিকা, যা কানের সংক্রমণ, অ্যালার্জি, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, মেনিনজাইটিস, মূত্রনালীর সংক্রমণ প্রভৃতির সাথে লড়াই করে। বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায় যে এটি আপনার শিশুর মস্তিষ্কের শক্তিকেও বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং পরবর্তী জীবনে ইনসুলিন-নির্ভর ডায়াবেটিস, ক্রোহন ডিজিজ, কোলাইটিস এবং নির্দিষ্ট ধরণের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে তাদের রক্ষা করতে সহায়তা করতে পারে।
৪) প্রতিদিন ব্যায়াম করুন এবং শিশুকেও করান- ব্যায়াম প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রাকৃতিক ইমিউন সিস্টেম বাড়ায়। শিশুদের নিয়মিত ভাবে ব্যায়াম করালে তা একইভাবে উপকৃত করতে পারে। আপনার সন্তানদের একটি আজীবন ফিটনেস অভ্যাস করাতে তাদেরকে মজার পারিবারিক কার্যকলাপ যেমন, হাইকিং, ইন-লাইন স্কেটিং, বাস্কেটবল, টেনিস প্রভৃতি আউটডোর খেলা এবং ব্যায়ামের অভ্যাস করান।
৫) প্রস্তাবিত টিকা সম্পর্কে আপ টু ডেট থাকুন- আপনার সন্তানের প্রস্তাবিত শৈশবকালীন টিকা সম্পর্কে আপ-টু-ডেট রাখা তাদের ইমিউন সিস্টেমকে কার্যকর থাকতে সাহায্য করে এবং মেনিনজাইটিস, পোলিও এবং চিকেন পক্সের মতো বিপজ্জনক প্যাথোজেনগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রস্তুত থাকতে পারে। টিকাগুলি আপনার সন্তানের ইমিউন সিস্টেমের সাথে কাজ করে যাতে তারা এই রোগগুলির মোকাবিলা করতে পারে। আপনার যদি টিকা নিয়ে উদ্বেগ থাকে তবে আপনার সন্তানের শিশু বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলুন। তাঁরা আপনার সন্তানের শরীরে টিকাগুলি কীভাবে কাজ করে, আপনার সন্তানের জন্য কী টিকা গুরুত্বপূর্ণ তা জানতে আপনাকে বোঝাতে সাহায্য করতে পারেন। সবসময় মনে রাখবেন নিজেকে টিকা সম্পর্কে আপ-টু-ডেট রাখতে ভুলবেন না।