থাইরয়েড গলার গোড়ায় একটি ছোট, প্রজাপতি আকৃতির গ্রন্থি যেখান থেকে ট্রাইওডোথাইরোনিন (T3) এবং থাইরক্সিন (T4) হরমোন ক্ষরিত হয় এবং শরীরের বিভিন্ন বিপাকীয় ক্রিয়া নিয়ন্ত্রন করে । থাইরয়েড গ্রন্থির কোষগুলি নিয়ন্ত্রনহীন বিভাজনের ফলে থাইরয়েড ক্যান্সার দেখা দেয় । বিশেষজ্ঞদের গবেষণা অনুযায়ী গত ৩৫ বছর ধরে বিশ্বজুড়ে থাইরয়েড ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুন বেড়েছে এবং এর সংখ্যা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে এগিয়ে থাকা দেশগুলির মধ্যেই বেশী রয়েছে । সাধারনত ষাটোর্ধ বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে এই রোগ দেখা যায় এবং মহিলাদের থাইরয়েড ক্যন্সারের হার তুলনামুলক পুরুষদের থেকে চারগুন বেশী পরিলক্ষিত হয় ।
থাইরয়েড ক্যন্সার এর কারণ
যদিও বিশেষজ্ঞদের কাছে থাইরয়েড ক্যন্সার নিয়ে কোন সুস্পষ্ট কারন নেই তবু বলা হয় যে জিনগত পরিবর্তনে থাইরয়েড গ্রন্থির কোষগুলি অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বিভাজিত হতে শুরু করে এবং এর থেকে ক্যন্সার কোষের সৃষ্টি হয় । এই অস্বাভাবিক কোষগুলি টিউমার গঠন করে এবং দ্রুত শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা রাখে । তাছাড়া রেডিয়েশন, স্থুলতা, ব্রেস্ট ক্যন্সার এবং থাইরয়েড ক্যন্সার এর পারিবারিক ইতিহাস এর কারণেও এটি হতে পারে ।
বিভিন্ন ধরনের থাইরয়েড ক্যন্সার
প্যাপিলারি থাইরয়েড ক্যান্সার – থাইরয়েড ক্যন্সারের ৮০ শতাংশই প্যাপিলারি থাইরয়েড ক্যান্সার হয় এবং এটি থাইরয়েড ক্যন্সার এর খুব সাধারন রূপ যা অন্যান্য ক্যন্সার এর তুলনায় কম বিপজ্জনক । এই ধরনের ক্যান্সার ঘাড়ের কাছাকাছি লিম্ফ নোডগুলিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে , তবে সঠিক ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করালে এর নিরাময় সম্ভব ।
ফলিকুলার থাইরয়েড ক্যান্সার- ফলিকুলার কার্সিনোমাও থাইরয়েড ক্যান্সারের একটি ভিন্ন রূপ, প্রতি ১০ জন রোগীর মধ্যে একজন এই প্রকার ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে । আয়োডিনের অভাবগ্রস্থ দেশগুলিতেই এর প্রকোপ বেশী দেখা যায় । এটি প্যাপিলারি থাইরয়েড ক্যান্সার এর থেকে তুলনামুলক বেশী ক্ষতিকর হয় কারন এগুলি ফুসফুস বা হাড়ের মতো অন্যান্য অঙ্গগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে ।
মেডুলারি থাইরয়েড ক্যান্সার – এই ধরনের থাইরয়েড ক্যন্সার সি কোষ থেকে উৎপন্ন হয় ( প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি সি কোষ হল এমন একটি কোষ যেখান থেকে ক্যালসিটোনিন হরমোন ক্ষরিত হয় ) । এই ধরনের থাইরয়েড ক্যন্সার লিম্ফ , লিভার এবং ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়ার কারনে সনাক্ত করতে কঠিন হয় ।সমস্ত রকমের থাইরয়েড ক্যন্সার এর ৪ শতাংশ রোগীর মেডুলারি থাইরয়েড ক্যান্সারের সম্ভাবনা রয়েছে ।
এনাপ্লাস্টিক থাইরয়েড ক্যান্সার – এটি থাইরয়েড ক্যান্সারের একটি খুবই আক্রমণাত্মক রূপ যা দ্রুত ঘাড় এবং শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে এবং এটির রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা অত্যন্ত কঠিন ।
থাইরয়েড ক্যান্সার এর লক্ষণ
থাইরয়েড ক্যান্সার এর লক্ষণ সবসময় প্রকাশ নাও পেতে পারে । কিন্তু কারও ক্ষেত্রে যদি নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি পরিলক্ষিত হয় তবে ওই ব্যক্তির অবশ্যই ডাক্তারি পরামর্শের প্রয়োজন ।
- কণ্ঠস্বরের অস্বাভাবিক পরিবর্তন ।
- খাবার গিলতে অসুবিধা হওয়া ।
- শ্বাস-প্রস্বাস নিতে কষ্ট হওয়া ।
- গলা ফুলে যাওয়া ।
- কণ্ঠনালীতে ব্যথা অনুভুত হওয়া ।
- মহিলাদের ক্ষেত্রে অনিয়মিত মাসিক ।
- ওজন কমে যাওয়া ।
থাইরয়েড ক্যান্সার এর চিকিৎসা
উপরের লক্ষণগুলির মধ্যে থেকে এক বা একাধিক লক্ষণ দেখা দিলে একজন চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন । ডাক্তার আপনাকে সাধারণত কিছু টেস্টের মাধ্যমে যেমন থাইরয়েড লিম্ফোগ্রাফী ( Thyroid Lymphography ) এবং থাইরয়েড স্ক্যানিং ( Thyroid Scanning ) – এর সাহায্যে রোগ নির্ণয় করবেন । রোগনির্ণয়য়ের পর থাইরয়েড ক্যন্সারের ধরনের উপর চিকিৎসার প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন । সাধারনত তেজস্ক্রিয় আয়োডিন, বাহ্যিক রশ্মি বিকিরণ থেরাপি, কেমোথেরাপি এবং অস্ত্রপাচারের মাধ্যমে এর চিকিৎসা করা হয়ে থাকে ।