Search
Close this search box.

Written by

Health and Wellness Blogger

রিপ্লেসমেন্ট ছাড়া হাঁটু ব্যথার চিকিৎসা

বয়স ৫০ হলেই এক সমস্যায় ভুগতে থাকেন সাধারণ মানুষ। একাধিক অসুখ যেন জাপটে ধরে। অনেকেরই এই সময় দেখা দেয় ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরলের সমস্যা। এই ধরনের অসুখগুলি ওষুধ দিয়ে অনেকখানি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। তবে সবচাইতে বিপদে ফেলে হাঁটু ব্যথা। প্রশ্ন হল কেন হয় হাঁটু ব্যথা। সব ক্ষেত্রেই কি নি রিপ্লেসমেন্ট একমাত্র সমাধান? দেখা যাক।

হাঁটু –কোমরে ব্যথার কারণ

আমাদের হাঁটুর অস্থিসন্ধিতে দুটি হাড় কার্টিলেজ দিয়ে ঢাকা থাকে। এই কার্টিলেজ জয়েন্টের দুটি হাড়ের মধ্যে কুশনের মতো কাজ করে। এই কারণেই হাড়ের সঙ্গে হাড়ের সংঘর্ষ হয় না। এছাড়া কার্টিলেজের উপর এক ধরনের তরল থাকে। এই তরলের নাম সাইনুভিয়াল ফ্লুইড। এই তরল কার্টিলেজের উপরের অংশকে পিচ্ছিল করে রাখে। ফলে দুটি হাড়ের কার্টিলেজের মধ্যে ঘষা লাগে না। এই কার্টিলেজ এবং সাইনুভিয়াল ফ্লুইডের জন্যই আমরা অনায়াসে চলতে পারি, লাফাতে পারি। কোনও ব্যথার অনুভূতি হয় না। তবে বয়সকালে শরীরের ক্ষয়জনিত সমস্যার প্রভাব পড়ে সাইনুভিয়াল ফ্লুইড এবং কার্টিলেজের উপরও। প্রথমে সাইনুভিয়াল ফ্লুইড শুকিয়ে যেতে থাকে। কার্টিলেজ ক্রমশ ক্ষয়ে যেতে থাকে। একসময় অস্থিসন্ধিতে থাকা দুটি হাড় উন্মুক্ত হয়ে যায়। হাড়ে হাড়ে ঘষা লাগে। হাঁটতে গেলেই ব্যথা লাগে। অস্থিসন্ধিতে শুরু হয় প্রদাহ। বসে থাকতে বা বসে থাকা অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়াতে কষ্ট হয়। একসময় হাঁটু বেঁকে যেতে থাকে। হাঁটতে সমস্যা হয়। শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এই সমস্যার নাম হল অস্টিওআর্থ্রাইটিস। শরীরের সমস্ত ভার পড়ে হাঁটুর ওপর। এই কারণে তাই এই অস্থিসন্ধিতেই বেশি সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া ভারতে মানুষ ইন্ডিয়ান টয়লেটে বসেন, হাঁটু মুড়ে বসে খাবার খান, কাজ করেন দীর্ঘসময়। এই কারণে হাঁটুর ক্ষয়ও বেশি হয়।

হাঁটু ব্যথার সমাধান কী ?

হাঁটু বারবার লক হয়ে গেলে, হাঁটু বেঁকে গেলে, রোগী বিছানা ছেড়ে উঠতে না পারলে হাঁটু প্রতিস্থাপন করানোই নিয়ম। তবে অস্টিওআর্থ্রাইটিস কয়েকটি পর্যায়ে এগোয়। কিছু পর্যায়ে অপারেশন ছাড়াও অন্যভাবে চিকিৎসা করা যায়।

হাঁটু ব্যথার ওষুধ

প্রাথমিক স্তরে রোগ ধরা পড়লে ওষুধ দিয়ে রোগকে একটা গণ্ডিতে বেঁধে রাখার চেষ্টা করা হয়। যাতে আরও খারাপ দিকে না এগোয়। প্রাথমিকস্তরে ওষুধের কাজ হল মানুষটির ব্যথা এবং প্রদাহ কমানো। এই কাজে সবথেকে নির্ভরযোগ্য ওষুধ হল প্যারাসিটামল। এছাড়া হাড়ের জোর বাড়াতে ক্যালশিয়াম, ভিটামিন ডি ওষুধ দেওয়া হয় কিছু ব্যক্তিকে।

এখন সিসাডোয়া জাতীয় ওষুধ বাজারে পাওয়া যায়। এই ওষুধটি কার্টিলেজের ক্ষয় হওয়ার গতিকে কমিয়ে দেয়। এছাড়া কার্টিলেজ এবং সাইনুভিয়াল ফ্লুইড তৈরি করতেও সাহায্য করে। এই ওষুধ রোগ নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট কার্যকরী ভূমিকা নেয়। এছাড়া কৃত্রিম সাইনুভিয়াল ফ্লুইডও হাঁটুতে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে প্রবেশ করানো হয়।

আমাদের দেহের ভার শুধুই হাড় বহন করলে ভুল হবে। মাংসপেশিও এই কাজে সাহায্য করে। ফলে হাঁটু দুর্বল হলে তখন মাংসপেশিকে শক্তিশালী করলে হাঁটুও অনেকদিন সচল থাকবে। অস্টিওআর্থ্রাইটিস দেখা দিলে রোগীকে পায়ের পেশির জোর বাড়াতে কিছু এক্সারসাইজ করতেও বলা হয়।

রোগীর বয়স এবং শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী ব্যায়াম ঠিক করা হয়। বয়স ৪০-এর বেশি হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো এরোবিকস এক্সারসাইজ করা যায়। এছাড়া সাঁতার অত্যন্ত ভালো ব্যায়াম। এছাড়া প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শমতো শরীরের ভারসাম্য বাড়ানোর জন্য প্লিয়মেট্রিক ধরনের ব্যায়াম করা যায়।

ডায়েট

দুধ, ছানা, মাখন, ঘি, পনির, দই-এর মতো ক্যালসিয়াম যুক্ত খাদ্য খেতে হবে। এছাড়া মরশুমি ফল, মাংস, মাছ ইত্যাদি খাদ্যে যথেষ্ট পরিমাণে ক্যালশিয়াম থাকে। ভিটামিন ডি-এর সংশ্লেষ হয় সূর্যালোকে। তাই সপ্তাহে ৪ থেকে ৫ দিন সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ৩ টের মধ্যে ২০ থেকে ৩০ মিনিট গায়ে রোদ লাগাতে হবে।

কোন কোন কাজ করবেন না ?

হাঁটু মুড়ে বসা যাবে না। বাবু হয়ে বসা, উবু হয়ে বসা, ঝুঁকে কাজ করা ইত্যাদি যথাসম্ভভ করা যাবে না। অস্থিসন্ধি অনেকখানি বেঁকে গেলে, পা নাড়ানো একেবারেই সম্ভব না হলে, ওষুধ ও ইঞ্জেকশনে আর কাজ হয় না। তখন সার্জারিই একমাত্র পথ।

সাবস্ক্রাইব করুন

স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন খবর, তথ্য এবং চিকিৎসকের মতামত আপনার মেইল বক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন.

Table of Contents

আমাদের সাম্প্রতিক পোষ্ট গুলি দেখতে ক্লিক করুন

আমাদের বিশিষ্ট লেখক এবং চিকিৎসক