ভিটামিন ডি আমাদের শরীরের খুব প্রয়োজনীয় একটা ভিটামিন। এই ভিটামিন ডি-এর অভাবের কারণে আমরা নানারকম সমস্যার সম্মুখীন হই বিশেষত আমাদের হাড়, জয়েন্ট এবং মাংসপেশির। শুধু তাই নয়, মনে রাখা দরকার যে, আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি-এর আরও অনেক কাজ আছে। বিশেষতঃ দরকারী কাজের মধ্যে রক্তের চাপ বা ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণ করা, আমাদের মানসিক সুস্থতা বজায় রাখা এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ করা এছাড়াও রোগ প্রতিরোধেও এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
শরীরে ভিটামিন ডি কম হলে কী হতে পারে?
আমাদের যে হার্ট বিট হচ্ছে অর্থাৎ হার্টের মধ্যে যে Retrica activities সেটির ব্যাঘাত ঘটে এবং শরীরের রক্তচাপ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে। আমাদের হাড়, জয়েন্ট, মাসল এর সমস্যা তো আছেই। এছাড়া দেখা গেছে, শরীরে যদি ভিটামিন ডি এর মাত্রা কম হয় তাহলে অনেক ধরণের ক্যানসারের প্রবণতা বেড়ে যায়। যার মধ্যে পেটের কোলন ক্যানসার, বেস্ট ক্যানসার, কিডনি ক্যানসার ইত্যাদি অনেক ধরণের ক্যানসার আছে। তাই ভিটামিন ডি শরীরে ঠিকমত রাখা অত্যন্ত জরুরী। কারণ, এটা নিয়মিতভাবে আপনার স্বাস্থ্য ও আপনার নানা ক্রিয়াকর্মের সঙ্গে জড়িত। ভিটামিন ডি শরীরে কম হলে ক্লান্তি আসবে, হাড়ে ব্যাথা হবে। নেমে আসবে অবসাদ এবং অল্পেতেই আমরা অসুস্থ হয়ে পড়তে পারি কারণ ভিটামিন আমাদের ইমিউন পদ্ধতির (Immune System)একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই, যে কোনওরকম সংক্রমণ থেকে নিজেদের প্রতিরোধ করতে শরীরে ভিটামিন ডি সঠিক পরিমানে থাকার যথেষ্ট প্রয়োজন আছে।
ভিটামিন ডি-এর অভাবের কারণ কি, শরীরে কীভাবে তৈরি হতে পারে এই ভিটামিন ?
আমাদের system-এ ঠিকঠাক কাজ করার জন্য ভিটামিন ডি কিন্তু খাবারের মধ্যে খুব একটা পাওয়া যায় না। আমাদের শরীরেই ভিটামিন ডি তৈরি করার মধ্যে উপায় আছে। তা হল, আমাদের শরীরের চামড়া। যদি আমরা সঠিক সময়ে সূর্যের আলো পাই তবে আমাদের শরীরের চামড়ার নিচে ভিটামিন ডি তৈরি হতে পারে। এরপর কিডনির সাহায্য নিয়ে সেটা Active form-এ হয় এবং তারপর শরীরের নানা জায়গায় কাজ করে। তাই ভিটামিন ডি তৈরি করার জন্য সুর্যের আলো চামড়ায় নেওয়া খুবই জরুরী। অথচ, আজকালকার লাইফস্টাইল-এ সেটা খুব একটা হয়ে ওঠে না। আবার হলেও তাতে কোনও লাভ হয় না। আমরা বিকেলের দিকে খেলতে যাই, দৌড়তে যাই অথবা কেউ হয়ত খুব ভোরে হাঁটতে যান। কিন্তু ওই সময় সূর্যের আলোয় ভিটামিন ডি তৈরি হয় না। ভিটামিন ডি তৈরি হয় দুপুর ১২টা থেকে ৩টের মধ্যে। অর্থাৎ প্রখর রৌদ্রে। মূলতঃ এই সময়ের সুর্যের আলো যদি আমাদের শরীরে পুরোমাত্রায় প্রবেশ করে তবে ভিটামিন ডি তৈরি হবে।
খাবারে কি ভিটামিন ডি থাকে?
খাবারের মধ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। কড লিভার অয়েল, যে কোনও ধরণের মাংস বা মাংসের লিভার বা মেটে, ডিমের মধ্যে এবং কিছু ক্ষেত্রে সবুজ শাক-সবজিতে ভিটামিন ডি আছে। এছাড়া ভিটামিন খুব বেশি খাবারে নেই। খাবারে যেটা আমরা পাই, সেটা খুব স্বল্পমাত্রায়। বিদেশে অনেক জায়গায় ভিটামিন ডি খাবারের মধ্যে মেশানো হয়। সাধারণতঃ, দুধ বা হেলথ ড্রিঙ্কসের মধ্যে মেশানো হয়। আবার ফ্রুট জুসের মধ্যেও মেশানো হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এমন ব্যাবস্থা এখনও সেভাবে চালু হয়নি, হয়ত অদূর ভবিষ্যতে হবে। তাই ভিটামিন ডি এর জন্য আমাদের Supplement-এর ওপরেই নির্ভর করতে হয়।
ভিটামিন ডি Supplemention নেওয়া কেন জরুরী?
যেহতু, সঠিক সময়ে সুর্যের আলো শরীরে নেওয়া অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়। দূষণ বা অন্যান্য কারণে সঠিক আলো হয়ত পৃথিবীতে এসে পৌঁছয় না বলেই ভিটামিন ডি এর অভাব হয়। যাতে বিভিন্ন রকমের শারিরীক সমস্যা যেমন, ক্লান্তি, ঘাড়ে ব্যাথা, দুর্বলতা, মাংসপেশিতে সমস্যা হতে পারে। Chronic বা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে গেলে Palpitation অর্থাৎ ধড়ফড়ানীর মত সমস্যা হতে পারে। এরকম কিছু হলে ভিটামিন Supplementation নেওয়া জরুরী। কিন্তু এই Supplementaion কীভাবে নেবেন সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা কোন বয়সে কতটা দরকার, কীভাবে নেবেন, সেটা আগে ঠিক করতে হবে। বাজারে Supplement পাওয়া যায়। যা অনেকেই সপ্তায় সপ্তায় ক্যাপসুল বা ট্যাবলেট কিনে খান। অনেকের প্রশ্ন থাকে তিনি এটি দুধের সঙ্গে খাবেন নাকি জলের সঙ্গে? এটা নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি আছে। যেটি সকলের কাছে পরিষ্কার হওয়াটা ভীষণ প্রয়োজন।
ভিটামিন ডি যদি এমনি খাওয়া যায় তার জন্য সবচেয়ে ভাল হচ্ছে, নিয়মিতভাবে Supplemenentation খেয়ে যাওয়া। বয়সের হিসেবে যা কারোর কম, কারোর বেশি লাগে। একটা Child বা একটা বাচ্চার প্রতিদিন ৬০০ ইউনিট, একজন প্রাপ্তবয়স্কর ১০০০ ইউনিট, একজন গর্ভবতী মহিলা বা যে মহিলা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন কিংবা, বয়স্কা ও মেনোপোজের পর মহিলাদের ক্ষেত্রে ২০০০ International ইউনিট। এটা হচ্ছে, সঠিক Supplementation, যা নিয়মিতভাবে নেওয়া উচিত। এবার আপনারা বলতেই পারেন, তাহলে বাজারে এত vitamin 60K কেন আছে? সহজে যা পাওয়াও যায়। হ্যাঁ, সেগুলোও আছে। সেগুলো ভিটামিন ডি এর স্বল্পতার বা অভাবের জন্য। যাঁদের রক্তপরীক্ষার পর দেখা যায় যে, ভিটামিন ডি অনেকটাই কমে গেছে, তাঁদের ক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি বাড়ানোর জন্য বা ভিটামিন ডি কিছুটা জমিয়ে রাখার জন্য ওই ক্যাপসুলগুলো নিয়মিত Supplementation এর সঙ্গে যুক্ত করা হয় অথবা যারা ভিটামিন ডি এর অভাবে ভুগছিলেন কিন্তু এখন স্বাভাবিক হয়ে গেছেন এবং এই মুহূর্তে তাদের অভাবজনিত কোনও লক্ষণ আর নেই, তাঁদের পরিচর্যার জন্যও সপ্তায় সপ্তায় বেশ কিছুদিনের জন্য ওই ক্যাপসুল খেতে বলা হয়। কিন্তু একজন সাধারণ মানুষ যদি ভিটামিন ডি ৬০,০০০ করে খান, তাহলে ওই ওষুধটা খুব একটা কাজে দেবে না।
সঠিক ভিটামিন Supplement নেওয়ার উপায় কি ?
ভিটামিন ডি-এর অভাবের কারণে যদি আপনার কোনও রকম সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে সঠিক ডোস বা পরিমাণে নেওয়াতটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কোন বয়সে আছেন? কী লক্ষণ আছে? আপনার ডায়েটিং হ্যাবিট বা খাদ্যাভাস কী আছে, তার ওপর ভিটামিন Supplement কতটা সঠিক তা নির্ভর করে। সুতরাং, এই সবকিছুই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ নিয়ে করাটাই বাঞ্ছনীয়।