ইনফার্টিলিটি বা বন্ধ্যাত্ব কি?
বিয়ের পরে কোনো দম্পতি যদি কোনো গর্ভ নিরোধক ছাড়াই দীর্ঘ এক বছর চেষ্টা করেও সন্তান ধারণ করতে না পারেন তাকে ডাক্তারি পরিভাষায় ইনফার্টিলিটি বা বন্ধ্যাত্ব বলা হয়। এই সমস্যায় আক্রান্ত হলে বেশি দেরি না করে উপযুক্ত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিৎ।
বন্ধ্যাত্ব কেন হয় ?
সন্তানহীনতার জন্য নারী ও পুরুষ দু’জনেই সমান দায়ী হতে পারেন। তবে কিছু ক্ষেত্রে দু’জনেরই কোনো স স্যা না থাকলেও অজানা কারণে সন্তান আসে না যাকে Unexplained Infertility বলা হয়।
মেয়েদের ক্ষেত্রে যে সব সমস্যা বন্ধ্যাত্ব ডেকে আনে সেগুলি এই রকম
- ওভারি বা ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু ঠিক মতো না বেরনো
- এন্ডোমেট্রিওসিস
- ফিমেল হরমোনের সমস্যা
- ইউটেরাসের মুখে টিউমার
- পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (PCOS)
- ফ্যালোপিয়ান টিউবে কোনো সমস্যা
- ক্যান্সারের চিকিৎসায় রেডিওথেরাপি বা কেমোথেরাপি নেওয়া
পুরুষদের সমস্যা
- সঠিক পরিমাণে শুক্রাণু উৎপন্ন না হওয়া
- শুক্রাণু টেস্টিস থেকে ঠিক মতো বেরোতে না পারলে
- অতিরিক্ত ধূমপান করলে
- ক্যান্সারে রেডিওথেরাপি বা কেমোথেরাপি নিলে
উভয়ের সমস্যা
- দেরিতে বিয়ে অথবা দেরিতে সন্তান প্ল্যানিং
- সঠিক পদ্ধতিতে সহবাস না করা
- অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন
I V F(In Vitro Fertilization) বা আই ভি এফ কি ?
সন্তান ধারণের একটি কৃত্রিম পদ্ধতি আই ভি এফ নামে পরিচিত। এই পদ্ধতিতে পুরুষের শরীর থেকে শুক্রাণু এবং নারীর শরীর থেকে ডিম্বাণু সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে কৃত্রিম পদ্ধতিতে নিষেক ঘটিয়ে ভ্রূণ উৎপাদন করা হয়। সেই ভ্রূণটিকে নির্দিষ্ট দিনে নারী’র জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করার পদ্ধতি এই নামে পরিচিত। এই পদ্ধতিতে কোনো ঝুঁকি নেই। এটি সম্পূর্ণ নিরাপদ। পুরো প্রক্রিয়া চলাকালীন পুরুষ বা নারীর শরীরে কোনো কাটাছেঁড়া করা হয় না। শুধু কয়েকটি হরমোন ইনজেকশন দিয়ে শুক্রাণু ও ডিম্বাণু সংগ্রহ করা হয়। পুরো প্রক্রিয়া চলাকালীন কোনো সংক্রমণের ভয় থাকে না। সেই সঙ্গে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে I V F করালে মা কিম্বা ভাবী সন্তানের কোনো শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি হয় না।
I V F – এর সফলতা বাড়ানোর উপায়
- মেয়েদের PCOS বা এন্ডোমেট্রিওসিস থাকলে দেরি না করে দ্রুত এই পদ্ধতির সাহায্য নিলে ভালো ফল পাওয়া যায় এছাড়া যত কম বয়সে এই পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া যাবে তত ভালো ফল পাওয়া’র সম্ভাবনা।
- আজকাল এই পদ্ধতিতে আগের তুলনায় অনেক কম ইনজেকশন দেওয়া হয় যা Mild Stimulation I V F বা Mini I V F নামে পরিচিত। এক্ষেত্রে সাফল্যের হারও অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি।
- আবার urinary injection এর বদলে Recombinant ইনজেকশনে সাফল্যের হার অনেক বেশি। এখন Preimplantation Genetic Screening (PGS) পদ্ধতির সাহায্যে ভ্রূণের গুণগত মান প্রতিস্থাপনের আগেই দেখে নেওয়া সম্ভব। ফলে সবচেয়ে উন্নত মানের ভ্রূণটিই প্রতিস্থাপন করা সম্ভব।
- এছাড়া এখন Endometrial Receptivity Array(ERA) পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা সম্ভব ঠিক কোন দিন ভ্রূণ জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া সম্ভব।
- Embryoscopy পরীক্ষা টির মাধ্যমে ভ্রূণের ধারাবাহিক বৃদ্ধি’র ওপরে নজর রাখা সম্ভব হয়েছে ফলে সবচেয়ে উন্নত মানের ভ্রূণটি গর্ভে প্রতিস্থাপন করা যায়। অন্য দিকে, Blastocyst পদ্ধতির মাধ্যমে আগে ২-৩ দিনে ভ্রূণটি ইউটেরাসে প্রতিস্থাপন করা হ’ত। কিন্তু আধুনিক গবেষণা জানাচ্ছে ভ্রূণ প্রতিস্থাপনের আদর্শ সময় হ’ল পঞ্চম দিন।
- Laser Assisted Hatching
যে সব মহিলার জরায়ুর দেওয়াল মোটা তাদের ক্ষেত্রে ভ্রূণ ঠিক মতো প্রতিস্থাপন হ’তে চায় না। সে ক্ষেত্রে ভ্রূণ প্রতিস্থাপনের জন্য লেজার দিয়ে একটা ছোট ফুটো করা হয়।
- আবার, যাদের নিজস্ব স্পার্ম (শুক্রাণু), এগ(ডিম্বাণু) কিম্বা ভ্রূণ উৎপাদন সম্ভব নয় তাদের জন্য উপযুক্ত ব্যাংক থেকে এগুলো সংগ্রহ করা সম্ভব।
I V F এর জন্য ডাক্তারি প্রস্তুতি
সম্পূর্ণ পদ্ধতি সম্পর্কে ভাবী বাবা ও মা-কে কাউন্সেলিং করানো, তাদেরকে ভ্রূণ প্রতিস্থাপনের নির্দিষ্ট দিন জানানো, প্রয়োজনে এগ ও স্পার্ম ফ্রিজিং করা, হরমোন অ্যানালিসিস, সিমেন(শুক্রাণু) অ্যানালিসিস, পিসিওএস এবং এন্ডোমেট্রিওসিস থাকলে তার Screening করানো, বাবা-মায়ের কোনো শারীরিক সমস্যা থাকলে আগের থেকে তার screening করানো, স্বাস্থ্যকর ডায়েট মেনে চলা ও নিয়মিত হাল্কা শরীরচর্চা করা প্রভৃতি প্রস্তুতি নেওয়া উচিৎ।
এখানে উল্লেখ্য I V F ব্যয়সাপেক্ষ নয়। এখন অনেক উন্নত মানের ক্লিনিক পদ্ধতিটিকে মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে নিয়ে এসেছে। এখন Clinic – এ সাধারণ মানুষ কম খরচে এই পদ্ধতি’র সাহায্য পেতে পারেন।
এক নজরে
- মেয়েদের ক্ষেত্রে পরিবারে কারো কোনো গাইনিকোলজিকাল সমস্যা থাকলে বয়ঃসন্ধির সময় থেকেই সচেতন হওয়া উচিৎ।
- পুরুষদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ধূমপান ও মদ্যপান ইনফার্টিলিটি ডেকে আনতে পারে।