হাড় ও মাংসপেশীর ব্যাধির কারণ হিসাবে দায়ী ঘটনাগুলির মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণটির নাম হল ফাইব্রোম্যালজিয়া। তাও বেশিরভাগ সময়েই এই রোগটির নির্ণয় ও চিকিৎসায় ভুল হয়ে থাকে। এর প্রধান লক্ষ্মণই হল মাংসপেশী ও অস্থিসন্ধিতে যন্ত্রণা এবং ক্লান্তি। এই রোগের থেকে পুরোপুরি মুক্তি কখনই পাওয়া সম্ভব নয়, তবে ওষুধ, শরীর চর্চা, স্ট্রেস কম রাখা এবং সুঅভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে রোগলক্ষনক প্রশমিত রেখে একটি সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করা যায়।
ফাইব্রোম্যালজিয়ার কারণ
ডাক্তাররা এখনও এই রোগের সঠিক কারণ সম্বন্ধে নিশ্চিত নন, তবে মনে করা হয় যে সমস্যাটা নিহিত আছে আমাদের মস্তিষ্ক ও সুষুম্নাকাণ্ড কিভাবে স্নায়ু থেকে যন্ত্রনার অনুভূতি তৈরি করছে, তার ওপর। যে যে পরিস্থিতিতে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় সেগুলো হল—- আপনি একজন মহিলা
- আর্থারাইটিস অথবা অন্য কোনো যন্ত্রণাদায়ক সংক্রমণ (ইনফেকশন) আছে।
- উদ্বেগ (anxiety) ও অবসাদে (depression) এ ভোগেন।
- শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকলে এবং Post Traumatic Stress Disorder থাকলে।
- আপনি একদমই এক্সারসাইজ করেন না।
- পরিবারের অন্যান্য সদস্যের এই রোগটি থেকে থাকলে
ফাইব্রোম্যালজিয়ার লক্ষন
সাধারণ ভাবে বলতে গেলে সারা শরীরে যন্ত্রণা হওয়া। এছাড়া আরও লক্ষণগুলি হল—- মাংসপেশিতে যন্ত্রনা, জালাভাব ও মোচড় দেওয়া মতো অনুভূতি
- অস্থিসন্ধির চারপাশে আঙুল দিয়ে চাপ দিলে ব্যাথা অনুভব করা
- অস্বাভাবিক ক্লান্তি
- মনে রাখা, বা চিন্তা করায় সমস্যা তৈরি হওয়া, যাকে ‘fibro fog’ বলা হয়।
- ইনসোমনিয়া, অর্থাৎ ঘুম না আসা
- সবসময় চিন্তিত, অবসন্ন থাকা
- পেট ব্যাথা, পেট ফুলে থাকা, কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা ডায়রিয়া
- মুখ, চোখ ও নাক শুষ্ক হয়ে থাকা
- মাথা যন্ত্রণা
- ঠান্ডা, গরম, আলো ও শব্দে অনুভূতি বেশি হওয়া
- হাত, পা, মুখের নানা জায়গা অসার হয়ে থাকা
ফাইব্রোম্যালজিয়ার রোগ নির্ণয়
ডাক্তারবাবু নানা ধরনের পরীক্ষা করবেন এবং সেই সাথে পূর্বে হওয়া অন্যান্য রোগ এবং পরিবারে অন্য কারোর এই রোগ আছে কিনা সেই ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। এই রোগ নির্ণয়ের জন্য কোনো নির্দিষ্ট পরীক্ষা নেই। যেহেতু এই রোগের লক্ষণের সাথে অন্যান্য রোগের লক্ষণের অনেক মিল আছে তাই চিকিৎসক থাইরয়েড, নানা রকমের আর্থারাইটিস ও লুপাস রোগ এবং প্রদাহ নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন রক্তপরীক্ষা, এম.আর.আই ও এক্স–রে করে থাকেন।ফাইব্রোম্যালজিয়া ট্রিগার পয়েন্টস
আগেকার দিনে যদি মানুষের শরীরের বিশেষ বিশেষ ১১— ১৮ টা জায়গায় ব্যাথা থাকতো, তাহলে মনে করা হত যে সেই ব্যক্তি ফাইব্রোম্যালজিয়ায় আক্রান্ত। চিকিৎসকরা সেই পয়েন্ট গুলোর ওপর জোরে চাপ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করতেন যে কোন কোন জায়গায় যন্ত্রণা আছে। ট্রিগারপয়েন্টগুলো হল—- মাথার পেছন দিক
- কাঁধের উপর দিক
- বুকের উপরিভাগ
- নিতম্ব
- হাঁটু
- কনুইয়ের বাইরের দিক
ফাইব্রোম্যালজিয়ার চিকিৎসা
চিকিৎসক রোগলক্ষন দেখে চিকিৎসা করে থাকেন। পেনরিলিভার, অ্যান্টিডিপ্রেসান্ট, মাসল রিলাক্সার ইত্যাদি ধরনের ওষুধ দেওয়া হয়। যে তিনটি ওষুধ প্রধানত ফাইব্রোম্যালজিয়ার যন্ত্রনার জন্য দেওয়া হয় সেগুলি হল—- Duloxetine (Cymbalta)
- Milnacipran (Savella)
- Pregabalin (Lyrica)