ইনহেলার শব্দটি সোনার পরই যে প্রশ্ন টি সবার প্রথমে মাথায়া আসে সেটি হল – ইনহেলার কি এবং এই বিশেষ ধরনের ওষুধ ব্যাবহার পদ্ধতির কারণ কি? ইনহেলার এমন একটি ডিভাইস বা যন্ত্র যা কোনও ব্যক্তির ফুসফুসে সরাসরি ওষুধ পৌঁছে দিতে সাহায্য করে । এটি এক প্রকার মিস্ট বা স্প্রে যা ব্যক্তি শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করে। যেভাবে আমরা ক্যাপসুল বা তরলের মাধ্যমে ওষুধ গ্রহণ করি, ইনহেলার ঠিক তেমনি শ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে ওষুধ পৌঁছে দেয়। এগুলি কয়েক মিনিটের মধ্যে কাজ শুরু করে শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তি দেয় এবং এর প্রভাব সাধারণত কয়েক ঘন্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
ইনহেলার কত রকমের হতে পারে?
ইনহেলার সাধারণত দুরকমের হয়।
মিটারড ডোজ ইনহেলার / Metered Dose Inhaler (MDI):– এগুলো স্প্রে হিসেবে থাকে। এটি মূলত একটি অ্যালুমিনিয়াম বা প্লাস্টিকের পাত্র, যার মধ্যে উচ্চচাপ প্রয়োগ করে গ্যাসীয় অবস্থায় ওষুধ ভরা হয় । এর একপ্রান্তে থাকে একটি মাউথপিস আরেক প্রান্তে একটি স্প্রে বাটান, একবার স্প্রে করলে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ওষুধ ওই মউথপিস থেকে নির্গত হয়ে রোগীর মুখ থেকে সরাসরি ফুসফুসে প্রবেশ করে। এর বিশেষ ব্যাবহার বিধির কারণে চিকিৎসকরা একে Hand-mouth co-ordination ও বলে থাকেন।
ড্রাই পাউডার ইনহেলার /Dry Powder Inhaler (DPI):– MDI পদ্ধতিকে আরো সহজ করতে এসে গিয়েছে DPI। এরমধ্যে ওষুধগুলি পাউডারের আকারে থাকায় হাওয়ায় ছড়িয়ে যায় না তাই রোগী নিজের সুবিধামতো নিতে পারেন ইনহেলার। ছোট ও বড় যারা ঠিকমতো ইনহেলার নিতে পারেন না তাদের জন্য আছে MDI এর সাথে একটি চোঙার মত অংশ বা স্পেসার (SPACER)। স্পেসার স্প্রেটিকে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ধরে রাখে ও রোগী তা ধীরে ধীরে নিতে পারেন। খুব ছোট বাচ্চাদের জন্য MDI ও SPACER এর সাথে BABY MASK ও ব্যবহার করা হয় ।
ইনহেলার নেওয়ার আরেক পদ্ধতি হল নেবুলাইজার। কিন্তু মূলত সেটা যারা খুব বেশি শ্বাসকষ্টে ভুগছেন বা অন্য কোন পদ্ধতিতে নিতে পারেন না, তাঁদের জন্য।
এছাড়াও আরও বিশেষ ধরনের ধরণের কিছু ইনহেলার আছে যা স্বল্প সময়ের জন্য কাজে দেয়, তবে সব ইনহালেরের উদ্যেশ্য একটাই, সেটি হল সর্বাধিক পরিমাণে ওষুধ সরাসরি ফুসফুসে পৌঁছে দেওয়া। একটি ইনহেলারে যে পরিমাণ ওষুধ থাকে তার মাত্র ১০-১৫% ওষুধ আমাদের ফুসফুসে পৌঁছাতে পারে তবে এখনকার আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে এর পরিমাণ অনেকটাই বাড়ানো সম্ভব হয়েছে।
ইনহেলার কি শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক? এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি?
আমাদের অনেকের মনে ধারণা আছে ইনহেলার নিলে শরীরে খারাপ প্রভাব পড়ে। আদতে তা নয়। ইনহেলারে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ থাকে যা শ্বাসকষ্ট জনিত রোগের প্রধান ওষুধ। ইনহেলড স্টেরয়েডগুলি ফুসফুসের প্রদাহ হ্রাস করে, রোগী শ্বাসপ্রশ্বাস ক্রিয়াকে স্বাভাবিক করে। কিছু ক্ষেত্রে, তারা মিউকাস উৎপাদনও কমায়।
ইনহেলড স্টেরয়েডের ফলাফল পেতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। যারা অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিস বা অন্য কোনও ধরনের শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যায় ভুগছেন তারা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে নিয়মিত ইনহেলার ব্যাবহার করলে যেমন সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনধারণ করতে পারেন তেমনি আবার অনেক ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট জনিত সংকটময় পরিস্থিতি থেকে নিরাপদে থাকতে পারেন।
কিন্তু অনেকদিন ধরে যারা বেশী মাত্রায় ইনহেলড স্টেরয়েড গ্রহণ করছেন তাদের খিদে বেড়ে যাওয়ার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হতে পারেন যার ফলে ওজন বাড়তে পারে। এমনকি নিউমোনিয়ার ঝুঁকিও বাড়তে পারে।
ইনহেলার ব্যাবহারের কারণ কি ?
আগেই বলা হয়েছে যে এই ইনহেলার গুলির মধ্যে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ থাকে এখন এই স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ যদি সরাসরি মুখে নেওয়া হয়, তাহলে সেটি শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়বে যা উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হাড়ের ক্ষয়ক্ষতি ইত্যাদির মতো কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে ।এই সমস্ত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে রক্ষা করতে ইনহেলারের উৎপত্তি।যাতে ইনহেলারে থাকা স্টেরয়েড ওষুধ অধিকতর পরিমাণে শ্বাসনালীতে পৌঁছায়। যাতে করে শরীরের অন্যান্য অংশে স্টেরয়েডের প্রভাব কম পড়ে।
ইনহেলার কি একবার নেওয়া শুরু করলে তা সারা জীবনের সঙ্গী হয়ে যায় ?
এই কথাটা কিছুটা হলেও সত্যি।GINA (Global Initiative for Asthma-অ্যাজমার প্রধান সংস্থা) গাইডলাইন অনুযায়ী, অ্যাজমার ওষুধ আস্তে-আস্তে কমানোর কথা বলা হয়েছে। সাধারণত একজন অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্ট রোগীকে ধীরে-ধীরে ওষুধের মাত্রা কমানো হয়, কিছুদিন ধরে পর্যবেক্ষণ করে যদি দেখা যায় রোগী তাতে ভালো আছেন তখন তা আস্তে আস্তে বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু সমস্যা দেখা দিলে অথবা চিকিৎসক যদি ওষুধের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন সে ক্ষেত্রে ওষুধের মাত্রা কমানো বা বন্ধ করা যায় না। তাই ওষুধ বা ইনহেলার নিয়মিত ব্যবহার করতে হবে মাঝখানে বন্ধ করা কোনোভাবেই যাবে না। শরীর কিছুদিনের জন্য ভালো থাকলে অনেকেই ইনহেলার নেওয়া বন্ধ করে দেন। যেহেতু এর কাজ রোগটিকে নির্মূল করা, তাই শুধু সমস্যার সময় নয়, কষ্ট যখন নেই তখনও ব্যবহার করা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।