Search
Close this search box.

Written by

Health and Wellness Blogger

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে অসুখটি দেহের প্রতিটি অঙ্গকে ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত করতে থাকে। এই কারণেই ডায়াবেটিসের চিকিৎসা সুচারুভাবে চালিয়ে যাওয়া উচিত।

তাতে প্রথমত— ডায়াবেটিসজনিত জটিলতাগুলিকে এড়িয়ে চলা যাবে। দ্বিতীয়ত বজায় রাখা যায় রোজকার জীবনের সুস্থতা।

চিকিৎসা না করালে কী কী সমস্যা হতে পারে?

তাৎক্ষণিক সমস্যা

  • বারংবার ইউরিন ইনফেকশন • ঘা সারছে না • আপনি দুর্বল হয়ে পড়ছেন • কাজ করতে অনীহা দেখা দেয়। এগুলি হল তাৎক্ষণিক সমস্যা।  দ্রুত ওজন হ্রাস।

দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা

আমাদের শরীরের বিভিন্ন রক্তবাহী নালীকে আক্রমণ করে ডায়াবেটিস। এখন রক্ত চলাচল শরীরের সব জায়গাতেই হয়। তাই জটিলতা দেখা দেয়— কিডনি, রক্তচাপ, চোখ, হার্ট, ব্রেন, পায়ে বা বলা ভালো শরীরের সমস্ত অঙ্গে। তাই হতে পারে ডায়াবেটিক ফুট, ত্বকের অসুখ, নার্ভের সমস্যা বা ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি, ডায়াবেটিক গ্যাস্ট্রোপেরেসিস বা পেটের নানা সমস্যা।

ডায়াবেটিস কেন নিঃশব্দ ঘাতক?

যে কোনও মানুষের প্রাণহানি ঘটে দুর্ঘটনা, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, কিংবা কিডনির সমস্যা থেকে। ডায়াবেটিসের চিকিৎসা ঠিক এই কারণেই করতে হবে যাতে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, কিডনির সমস্যা থেকে দূরে থাকা যায়! আর একটা কথা অবশ্যই খেয়াল রাখা দরকার যে, সুগারের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত থাকে উচ্চ রক্তচাপ। উচ্চ রক্তচাপের কারণে হার্ট কিডনি, চোখ এবং ব্রেন— বেশিরভাগ অঙ্গই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সুতরাং কড়া হাতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ না করলে বিপদ বাড়বে বই কমবে না।

ডায়াবেটিস কি সারে?

টাইফয়েড বা ম্যালেরিয়ার মতো অসুখ নয় ডায়াবেটিস। ফলে একটা কোর্সের ওষুধ খেলেই সমস্যা মিটবে না। ডায়াবেটিস একবার হলে তা সারে না। তবে একজন ডায়াবেটিক স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে পারেন চিকিৎসা করিয়ে। বহু বিখ্যাত সেলিব্রিটিও ডায়াবেটিস নিয়েই সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে বেঁচে আছেন ও কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা অনেকেই ইনসুলিনও নেন। তারপরেও উৎপাদনশীল জীবন যাঁরা যাপন করছেন। সুতরাং ডায়াবেটিস হলে ভয়ের কিছু নেই, চিন্তার কিছু নেই।

কী কী করবেন

 বছরে একবার অন্তত চোখ দেখান। কারণ আপাতভাবে চোখের সমস্যা না থাকলেও নন প্রলিফারেটিভ ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি থাকলে প্রাথমিকভাবে দৃষ্টিশক্তির কোনও সমস্যা হয় না। আর যখন অসুখ অনেকদিন এগিয়ে যায় তখন রোগ অনেকদূর এগিয়ে যায়। প্রায় কিছুই করার থাকে না রোগীর।

 অবশ্যই হার্ট , কিডনি, কোলেস্টেরলের চেকআপও করাতে হবে।

একই ওষুধ দীর্ঘদিন?

খুবই মারাত্মক বিষয়। হয়তো প্রথম যখন কোনও রোগী চিকিৎসকের কাছে এলেন তখন তাঁর ফাস্টিং সুগার ২০০ আর পোস্ট প্রান্ডিয়াল সুগার ৩০০! সেই অনুযায়ী রোগীকে ওষুধ দেওয়া হল। এখন সেই ওষুধ খেয়ে রোগীর ব্লাড সুগারের মাত্রা নেমে আসে। এরপর ওষুধের ডোজ কমাতে হয়। কিছু ক্ষেত্রে আভার সাধারণ ওষুধে সুগার হয়তো নামে না। সেক্ষেত্রে ডোজ বাড়ানোর বা অন্য ওষুধ নির্বাচন করার দরকার পড়ে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া একই ওষুধ দিনের পর দিন খেয়ে যাওয়া উচিত নয়। এছাড়া রোগীকে অনেকসময় দু’টি ওষুধ খেতে দেওয়া হয়। কিছু ক্ষেত্রে সেটা একটা ওষুধে কমিয়ে আনার প্রয়োজন পড়ে। এছাড়া অনেকেই আছেন যাঁরা ওষুধ খাওয়ার সঙ্গে অত্যন্ত এনার্জেটিক লাইফস্টাইল অনুসরণ করেন। অর্থাৎ দৌড়াদৌড়ি করছেন, প্রতিদিন হাঁটাহাঁটি শুরু করেন ইত্যাদি। এর ফলে সুগার খুব ভালো ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় ও ব্লাড সুগার কমেও যায় দ্রুত। একটা সময় পরে আর তাই আগের ডোজের ওষুধের হয়তো দরকারও পড়ে না। অথচ তখনও সেই আগের ওষুধ খেয়ে গেলে চট করে সুগার নেমে গিয়ে হতে পারে হাইপোগ্লাইসিমিয়া।

হাইপোগ্লাইসিমিয়া

প্রতি ডেসিলিটার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৭০ মিলিগ্রামের নীচে নেমে গেলে তাকে বলা হয় হাইপোগ্লাইসেমিয়া। দ্রুত এই অবস্থা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন। না হলে রোগী কোমায় চলে যান। আসলে অনেকেই দু’বছর ধরে একই ওষুধ খান। আর তার ফলাফল হতে পারে এমনই ভয়ঙ্কর!

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

টাইপ ২ ডায়াবেটিসে রোগীকে প্রথম থেকেই ইনসুলিন দিতে হয় না। কখন ইনসুলিন দিতে হবে তার আন্তর্জাতিক নির্দেশিকা রয়েছে। আর তাও শর্ত সাপেক্ষে। অর্থাৎ রোগীর ডিহাইড্রেশন আছে, রোগী বিছানা ছেড়ে নড়তে পারছেন না, ক্রমাগত বমি হয়ে চলেছে, বেশ বড় সংক্রমণ হয়েছে এমন অবস্থায় দিতে হতে পারে ইনসুলিন। এছাড়া রোগী হয়তো জানতেন না তাঁর ডায়াবেটিস আছে। অথচ হঠাৎ করে তাঁর একটা অপারেশন করাতে হবে। এমন অবস্থায় ধরা পড়ল হাই সুগার। এমন ক্ষেত্রেও ইনসুলিন দিয়ে প্রাথমিকভাবে সুগার কমিয়ে করাতে হবে অপারেশন। এরপর ঘা শুকিয়ে গেলে, সেলাই কাটা হয়ে গেলে ফের ইনসুলিন বন্ধ করে ওরাল ওষুধে ফিরে আসা যায়।

ইনসুলিন নিয়ে ভুল ধারণা

সাধারণ মানুষ ইনসুলিন নিতে চান না তিনটি কারণে— ১) লোকে দেখবে কী ভাববে। ২) ইঞ্জেকশনে ভয়। ৩) সম্ভবত আমার শেষ অবস্থা তাই ডাক্তারবাবু ইনসুলিন নিতে বলেছেন।

আমাদের বুঝতে হবে, ইনসুলিন ইঞ্জেকশন নিয়ে কোটি কোটি লোক সুস্থ আছেন। তাই লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। দ্বিতীয়ত সুচ এতটাই ছোট্ট যে আলাদা করে ব্যথাও হয় না। তৃতীয়ত, আমাদের শরীরেই ইনসুলিন হর্মোন তৈরি হয়। শুধু ডায়াবেটিস থাকলে ইনসুলিন শরীরে বেরতে পারে না বলে আলাদা করে বাইরে থেকে ইনসুলিন নিতে হয়। সুতরাং ইনসুলনি কোনও খারাপ রাসায়নিক নয়। থাইরয়েডের ওষুধেও কিন্তু বাইরে থেকে আলাদা রোগী হর্মোনের ওষুধই খান! তাই ভয় পাবেন না। তাছাড়া ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে এলে চিকিৎসক রোগীকে ওরাল মেডিসিনেও ফিরে যেতে বলতে পারেন।

খেয়াল রাখুন

ইনসুলিন অত্যন্ত নিরাপদ চিকিৎসা। শুধু একটা বিষয়ে খেয়াল রাখতে হয়, তা হল ইনসুলিন নিলে অবশ্যই খাবার খেতে হবে। না হলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়ে যাবে।

সাবস্ক্রাইব করুন

স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন খবর, তথ্য এবং চিকিৎসকের মতামত আপনার মেইল বক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন.

Table of Contents

আমাদের সাম্প্রতিক পোষ্ট গুলি দেখতে ক্লিক করুন

আমাদের বিশিষ্ট লেখক এবং চিকিৎসক